পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত হয়েও ঢাকার ১৬ ইউনিয়নের বাসিন্দারা সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। অনেকেই জানেন না ইউনিয়নগুলো আদৌ ইউনিয়নই আছে নাকি সিটি কর্পোরেশনের অধিভূক্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঢাকার আশপাশের ১৬টি ইউনিয়ন এখনও ইউনিয়নই আছে। স্থানীয় সরকারের অধীনে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বর্ষায় ১৬টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। কোনো কোনো ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে পানির নিচে। কোনো কোনো ইউনিয়নে ঘর থেকে জুতা পড়ে বের হওয়ার অবস্থা নেই। এসব কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পাহোতে হচ্ছে কয়েক লাখ বাসিন্দাদের। তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন ইউনিয়নগুলো অধিভূক্ত হওয়ার পর থেকেই কমবেশি উন্নয়ন কাজে সহায়তা দিয়ে চলেছে সিটি কর্পোরেশন।
ধীরে ধীরে এই সহায়তা বাড়তেই থাকবে। মতিঝিল থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে দনিয়া ইউনিয়ন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নালা ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তোলায় পুরো এলাকার পানি নিষ্কাশন সিস্টেম একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমেও বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বর্ষায় নিচে তলিয়ে গেছে দনিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা। অলিগলি-প্রধান সড়ক-ফুটপাত এবং বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। দুই বছর আগে ধোলাইপাড় থেকে শনিরআখড়া এবং গোয়ালবাড়ী মোড় থেকে কোদারবাজারের রাস্তাটি পাকা করা হলেও এখন সেগুলোও ভেঙ্গে একাকার হতে চলেছে। সিটি কর্পোরেশন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে ড্রেনেজের কাজ শুরু করেছে প্রায় ৮ মাস আগে। অত্যন্ত ধীর গতিতে চলমান সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ এই ৮ মাস ধরেই দনিয়ার সাথে মূল সড়ক একেবারে বিচ্ছিন্ন। জরুরী প্রয়োজনে কোনো রোগিকে হাসপাতালে নিতে গেলে ধোলাইপাড় হয়ে ঘুরে আসতে হবে। ইউনিয়নের পাটেরবাগ, রসুলপুর, নূরপুর, গোন্দিপুরসহ প্রায় সবগুলো এলাকার রাস্তার বেহাল দশা। ড্রেন বলতে যা আছে তা সামান্য বৃষ্টিতেই উপচে পড়ে রাস্তা ডুবে যায়।
তখন ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতেই চলাচল করা ছাড়া উপায় থাকে না। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজলা এলাকার বেশির ভাগ সড়কই ভাঙ্গাচোরা। এক বছর আগে বর্ষায় এলাকাবাসী নিজেরা টাকা তুলে ভাঙ্গাচোরা সড়ক চলাচলের উপযোগী করতে বালু ফেলেছিলেন। এবার সেই উদ্যোগও নেয়া হয়নি। দনিয়ার নয়ানগর, বউবাজার ও শেখদির সড়কগুলো ডুবে আছে অনেকদিন ধরে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি ধারা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তধারা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল বাগ, ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রায়েরবাগ, রহমতবাগ এলাকার সড়কগুলো একটু বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। বর্ষায় চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়কগুলো। পানি শুকালে এসব সড়ক গ্রামের কর্দমাক্ত মেঠে পথের রুপ ধারণ করে। শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ এসব সড়কে রিকশা, সিএনজি বা টেম্পুতে চলাচলে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন। এসব প্রসঙ্গে দনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জুম্মন মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব মোঃ হাবিবুর রহমান মোল্লার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা পাকা করা হয়েছে। আরও কাজ চলমান আছে। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও ইউনিয়নের সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনিও সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে জুম্মন চেয়ারম্যান বলেন, আরও কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশন টেন্ডার দিয়েছে। আশা করছি আগামী বছর আর এরকম সমস্যা থাকবে না।
শ্যামপুর ইউনিয়নের আয়তন ২০২ কিলোমিটার। এরমধ্যে ১৩০ কিলোমিটার পাকা-আধপাকা সড়ক রয়েছে। এই সড়কগুলো কবে সংস্কার হয়েছে তা ভুলে গেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। পাকা-আধপাকা সড়কগুলোর ইট-পাথর-বালু উঠে মাটি বেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তও তৈরি হয়েছে বহু আগেই। বর্ষায় অধিকাংশ সড়কই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামপুর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলো পাকা। তবে সড়কগুলো খুবই সরু এবং ড্রেনেজ ব্যবস্তা না থাকায় বর্ষায় এগুলো তলিয়ে যায়। শ্যামপুর পালপাড়া, ঢাকা মেস ও বাগিচার এলাকার সড়কগুলোর বেহাল দশা বহুদিন ধরেই। শ্যামপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডটি শিল্প এলাকা। গার্মেন্টস, রুলিংমিল, ওষুধ উৎপাদনসহ ভ্যারাইটিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ওই এলাকায়। ওই এলাকার শিল্প মালিকরা নিয়ম-কানুনের কোনো ধার ধারেন না। পোস্তাগোলা-পাগলা সড়কের শ্যামপুর অংশের সড়কের দু’পাশ সর্বদা শিল্প মালিকদের দখলে থাকে। এই সড়কে হেঁটে চলাচলকারী মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিল্প এলাকা থেকে মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি হলেও এখানে উন্নয়নে কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। মামা বাহিনী শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত বলে অনেকেরই অভিযোগ।
সারুলিয়া ইউনিয়নের সড়কগুলো ভাঙ্গাচোরা। আবর্জনার ছড়াছড়ি যত্রতত্র। সড়কে বাতি নেই। পানি ও পয়োনিষ্কাশন নালাগুলো হয়ে যাচ্ছে ভরাট। সরকারি খাসজমি-সড়ক-খাল দখল করে গড়ে উঠছে স্থাপনা। সড়কে চলছে অবৈধ ট্রাক, সিএনজি, অটোরিকশা। সব ধরণের সেবা বঞ্চিত, অবহেলিত এলাকার বাসিন্দারা এসব সমস্যার সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ জানালেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। তবে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সারুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে। শিগগিরি এই বরাদ্দের কথা ঘোষণা করবেন মেয়র সাঈদ খোকন।
মাতুয়াইল ইউনিয়নের রাস্তাঘাটেরও বেহাল দশা। আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে খাল-ডোবা-নালা। দখলবাজরা সড়ক-খাল এবং সরকারি খাসজমি দখল করে গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দুর্বল অবকাঠামোর ওপর গড়ে উঠছে অট্টালিকা। ফ্রি স্টাইলে এসব অনিয়ম চললেও এসব দেখার যেন কেউই নেই। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে গেছে, সড়কের উপর, ডোবা-নালায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলছে এলাকাবাসী। এবড়ো-খেবড়ো গর্তে ভরা সড়কগুলো। দখলদাবাজরা সড়ক দখল করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গাচোরা-বেদখল সড়কে চলাচলে নাকাল হচ্ছে মানুষ। বর্ষায় কোন রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায় নি সে হিসাব জানে এলাকাবাসী। বাকী সব রাস্তাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তায় বাতি না থাকায় রাতের মাতুয়াইল এক ভুতুড়ে পরিবেশ ধারণ করে। মশা-মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ ওই এলাকার বাসিন্দারা।
অভিজাত এলাকা গুলশানের কাছেই বাড্ডা ইউনিয়ন। পুরো এলাকার সড়ক কর্দমাক্ত। শুকনো মৌসুমেও থই থই করে পানি। হাটু সমান কাঁদাপানি মাড়িয়ে চলাচল করছে পথচারীরা। ভ্যান, রিকশা, মাইক্রোবাসের চাকাও তলিয়ে যাচ্ছে কাঁদা পানিতে। বড় গর্তগুলোয় আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাঁকা।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মোট সড়কের পরিমাণ ২৫ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা সড়ক ১০ কিলোমিটার, আধা পাকা সড়ক ৫ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক ১০ কিলোমিটার। বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে, বাড্ডা এলাকার শতভাগ সড়কেরই বেহাল দশা। ভাঙ্গাচোরা, খানাখন্দে ভরা সড়কে চলাচল করতে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন বাড্ডা এলাকার সাত লাখ মানুষ।
অভিজাত উত্তরা এলাকা ঘেষে অবস্থি’ত রাজধানীর দক্ষিণখান ইউনিয়ন। পুরো এলাকার সড়কগুলো ভেঙ্গে চুরে একাকার হয়ে গেছে। শুকনা মৌসুমেও এই অধিকাংশ সড়ক পানিতে ডুবে থাকে। যত্রতত্র ফেলানো হয় আবর্জনা। সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। পানিবদ্ধতা এবং পানি-গ্যাস সংকটে নাকাল হচ্ছে মানুষ। ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ৬ লাখ লোকের বসবাস। আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে ১৬০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না। দক্ষিণখান ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, শুনেছি বিগত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডের উন্নয়নে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন তো চোখে পড়ে না। ভোগান্তিতো এতোটুকু কমেনি।
অবহেলিত জনপদ হরিরামপুরের পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে রাজউক। সে কারণে দিন দিন বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র। তারপরেও রাস্তাঘাটের সমস্যা রয়েছে বলে জানান একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, গ্রাম প্রধান এই এলাকায় বেশ আগ থেকেই পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। আর সেটা হয়েছে মূলত: এ ইউনিয়নে রাজউক উত্তরা মডেল আবাসিক এলাকা প্রকল্প হাতে নেয়ার কারণে। এরপর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প, রাজউক এপার্ট মেন্ট প্রকল্প হরিরামপুর ইউনিয়নকে ধাপে ধাপে বদলে দিয়েছে। তবে হরিরামপুর ইউনিয়নে এখনো বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, কিছু সড়ক এখনো সরু। গড়ে উঠেনি পানি ও পয়:নিষ্কাশন ড্রেনেজ সিস্টেম। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েক বছরে সড়ক উন্নয়নে অনেক কাজ করা হলেও তার ছোয়া তেমন একটি নেই। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় সড়কগুলো ভেঙ্গে চুরে যায়।
একই অবস্থা উত্তরখান, ভাটারা, ডুমনি, মান্ডা, সাতারকুল, নাসিরাবাদ, বেরাইদ ইউনিয়নের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ এক বছর আগে এসব ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনের অধিভূক্ত হলেও সেবার মান বাড়েনি। এবার বর্ষায় প্রতিটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। ভাটারা ইউনিয়নের বাসিন্দতা সোহেল আহমেদ বলেন, আসলে ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের দোটানায় উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দিন দিন মানুষ আরও ভোগান্তির শিকার হবে। তাই যতো তাড়াতাড়ি ইউনিয়নগুলো সিটি কর্পোরেশনের অধিভূক্ত হবে ততোই মঙ্গল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ইউনিয়নগুলো পুরোপুরি সিটি কর্পোরেশনের আনতে আরও সময় লাগবে। নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতায় এ কাজটি এগুচ্ছে না। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বয় করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।