Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লীর কি বার্তা নিয়ে আসছেন এরশাদ?

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ৫ দিনের সফর শেষে দিল্লী থেকে আজ ফিরছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাঁর এ দিল্লী সফর নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে উৎসব উৎসব ভাব। বিমানবন্দরে তাকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সংবর্ধনার প্রস্তুতি এবং মহাআয়োজন দেখে মনে হচ্ছে তিনি দেশের জন্য না হোক দলের জন্য কিছু অর্জন করে ফিরছেন। সর্বত্রই প্রশ্ন উঠছে দলের নেতাকর্মীদের জন্য দিল্লীর কি বার্তা নিয়ে আসছেন এরশাদ?
ব্যাক্তিগত সফরে ভুটান গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেখান থেকে ফেরার পর নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচন ইস্যুতে দেশের রাজনীতি যখন সরগরম ঠিক তখন ভুটান থেকে এসে তড়িঘড়ি করেই ভারতের দিল্লী সফরে যান তিনি। এরশাদের এই দিল্লী সফর নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা গুঞ্জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি’র নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। সেখানে তিনি দুই মাস চিকিৎসা নেবেন এমন খবর প্রচার হওয়ায় ক্ষমতাসীনরা প্রচার করছেন তিনি (খালেদা জিয়া) মামলার ভয়ে আর দেশে ফিরবেন না। বিএনপির মহাসচিব অবশ্য এ ধরণের কথাবার্তা আহাম্মকও বিশ্বাস করে না বলে জবাব দিয়েছেন। ইসির রোডম্যাপে যখন বাতাসে নির্বাচনী গন্ধ তখন এরশাদের দিল্লী সফর তৎপর্যপূর্ণই বটে। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে এসে জাপার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে দিল্লীর সাউথ বøকের যে বার্তা দেন সেটা এরশাদ জনসম্মুখে প্রকাশ করায় ব্যাপক হৈচৈ হয়। কূটনীতির রীতিনীতি ভঙ্গ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দিল্লীর সাউথ বøক। বর্তমান সরকারের শাসনামলের সাড়ে তিন বছরে এরশাদ বহুবার বিদেশ গেছেন। দেশে ফেরার পর কোনো বারই তাঁকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেয়া হয়নি। এবার সংবর্ধনা দেয়ার ব্যপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সংবর্ধনার খবর সংগ্রহের দাওয়াত কার্ড মিডিয়ায় পাঠানো হয়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই দেশের রাজনীতিতে আমেরিকা, লন্ডন, দিল্লীর ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দিল্লী তোষণ নীতি-কৌশল অজানা নয়। এ অবস্থায় অর্ধ শতাধিক দল নিয়ে এরশাদের নির্বাচনী জোট ঘোষণা, ইসির রোডম্যাপ প্রকাশের পর তড়িঘড়ির করে তাঁর (এরশাদ) দিল্লী সফর, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উৎসব এবং বিমানবন্দরে ব্যাপক সংবর্ধনার আয়োজন দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই প্রশ্ন করছেন দিল্লী থেকে এরশাদ জাপার নেতাকর্মীদের জন্য কি কোনো শুভ বার্তা নিয়ে আসছেন? সেটা বুঝতে পেরেই সংবর্ধনার এই আয়োজন? এরশাদের দিল্লী সফর নিয়ে জাপার নেতাদের মধ্যে চলছে উৎসব উৎসব ভাব। নেতাকর্মীদের চিন্তা- চেতনায় এমন ভাব যে, দেশে বিএনপির বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাপার আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে বিএনপির চেয়ে জাতীয় পার্টিকে বন্ধুভাবাপন্ন মনে করে বিজেপি। একাদশ নির্বাচন ইস্যুতে বিজেপি গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে এরশাদের মুখে এ বার্তা শোনার জন্য জাপার নেতাকর্মীরা মুখিয়ে রয়েছেন। এরশাদের সংবর্ধনার আয়োজন সে জন্যই! বিমানবন্দরে গণসংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অন্তত তিনটি প্রস্তুতি সভার করেছে জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিগুলো। রওশন এরশাদ, দলের মন্ত্রী-এমপি, প্রেসিডিয়ামের সদস্য থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরশাদের দিল্লী সফর নিয়ে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বিজেপি সরকারের ওপর ভরসা করেই এরশাদ আগামীতে নিজের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গড়তে চান। এ জন্যই এবারের এরশাদের দিল্লী সফর নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দেশে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত এটা দিল্লীকে বোঝানোর জন্য ৫৮টি দলের সমন্বয়ে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠন করেন এরশাদ। এ জোটে নাম-প্যাড সর্বস্ব ইসলামী ধারার দল যেমন রয়েছে; তেমনি রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনও। বাংলাদেশ জাতীয় জোটে (বিএনএ) দল রয়েছে ২১টি, আর মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক নামের একজনের নেতৃত্বে জাতীয় ইসলামী মহাজোটে ৩৫টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নতুন জোটের ৫৮টি দলের মধ্যে তফসিল ফেডারেশন, জাতীয় হিন্দু লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি নামের সংগঠনও রয়েছে। এরশাদের এক কর্মচারী কাম প্রেসিডিয়াম সদস্য তফসিল ফেডারেশন, জাতীয় হিন্দু লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি’র নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের সম্পর্কের সুত্রকে পুঁজি করেই ‘বিজেপি-এরশাদ’ সম্পর্ক গড়তে দিল্লী সফরে গেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা জানান।
প্রশ্ন হলো ৫ দিনের ভারত সফর করে দিল্লীর কি বার্তা নিয়ে আসছেন এরশাদ? যে কারণে হঠাৎ করে সংবর্ধনার এতো আয়োজন! নেতাকর্মীদের মধ্যে এত প্রাণচাঞ্চল্য!! ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা যখনই বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের অভিযোগ তোলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ তোলেন; তখনই বিএনপির এবং বামপন্থীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারকে ক্ষমতার ভাগীদার করার অভিযোগ তুলছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়ে এরশাদের চিকিৎসা বন্দিত্ব, পরবর্তীতে এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণ এবং ৪০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বিরোধী দলে এখন জাতীয় পার্টি। সরকারে দলের এখন তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছে। মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আছেন এরশাদ। স্ত্রী রওশন বিরোধী দলের নেতা। এ সব নিয়ে সবত্রই আলোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারে এবং বিরোধী দলে থাকা এবং জনগণের বদলে ক্ষমতাসীনদের মন রক্ষা করে চলায় তৃণমূলে জাপার অবস্থান এখন শুকিয়ে যাওয়া মরা নদীর মতোই। লাঙ্গলের ঘাটি হিসেবে পরিচিত রংপুরে এরশাদের সমর্থক নিম্নমুখী। সাংগঠনিক ভাবে এবং ভোটের রাজনীতিতে সারাদেশে জাপার অবস্থান খুবই দুর্বল। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং মেয়র থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানীয় ও উপ নির্বাচনের জাপার ভোট বিপর্যয়ই চরম সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। বছরের পর বছর ক্ষমতাসীনদের জুলুম নির্যাতনে নির্যাতিত বিএনপির প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি এতো বেড়ে গেছে যে গ্রামগঞ্জে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে জাপার টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। জাপা নেতারা জানান, ভারতের দিল্লীর সাউথ বøক চায় ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সময়ের মতোই জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পাশে থাক। বিএনপির কিছু নেতা দিল্লীমুখী হলেও জামায়াত, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে বিএনপির প্রতি দিল্লীর সাউথ বøকের বিবেচনা খুব একটা ইতিবাচক নয়। এসব বিবেচনায় যদি বিএনপির বিকল্প হিসেবে জাপাকে উপস্থাপন করা যায়। যার জন্যই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ছাড়াও এরশাদের দিল্লী সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দেশের বুদ্ধিজীবীরা। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে ‘নিছক তামাশা’ হিসেবে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে এরশাদ দিল্লী থেকে কি বার্তা নিয়ে আসেন তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন জাপার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।



 

Show all comments
  • সাব্বির ২৩ জুলাই, ২০১৭, ২:৪১ এএম says : 2
    আমার মনে হচ্ছে কোন বার্তাই আনেন নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ২৩ জুলাই, ২০১৭, ৬:১৭ এএম says : 1
    এরশাদ দিল্লী থেকে লাড্ডু ছাড়া আর কিছুই আনতে পারবেন না। কথায় বলে, "দিল্লী কা লাড্ডু, জো খায়া ওহ্ ভি পস্তায়া, জো নেহি খায়া ওহ্ ভি পস্তায়া।" অর্থাৎ দিল্লীর লাড্ডু, যে খেয়েছে সেও পস্তায়, যে খায়নি সেও পস্তায়। এরশাদ কাকু দিল্লী থেকে ওই পস্তানোর লাড্ডুই আনতে গেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Muhammad Adel ২৩ জুলাই, ২০১৭, ৯:৫৫ এএম says : 2
    Bangladeshi politicians try to stand on your feet in the independent country. It looks very very odd if Delhi has to decide which party will go to power. They should honor the independence of the country.
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Muhammad Adel ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১০:০৯ এএম says : 2
    Bad luck for Bangladesh news media. No scope for comments on any news item!
    Total Reply(1) Reply
    • MA Hussain ২৬ জুলাই, ২০১৭, ৪:২৫ পিএম says : 4
      Not worthy of being news item. I think media is just wasting their valuable time on this issue.

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এরশাদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ