Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাস নির্মূলে নেই মাস্টারপ্লান

দক্ষিণ-পশ্চিমে অস্ত্রবাজদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এখন আর নেই বললেই চলে। এখন দাপট অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী ও পলিটিক্যাল ক্যাডারদের। সশস্ত্র বিপ্লবের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও খুনখারবীর অঞ্চলিক জন্মদাতাদের বেশীরভাগই অবশিষ্ট নেই। প্রমাণিত হয়েছে অন্ধকার জগতে চলার পরিণতি হয় করুণ। গত ১৫বছরে প্রায় ৭ শতাধিক অস্ত্রবাজ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় সশস্ত্র বিপ্লবের সেই ধারার কোন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ বাম রাজনীতির মুল ধারার ধারক বাহকরা আছেন স্মরণীয়। আপাতত চরমপন্থীরা আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত না করলেও আবার যে কোন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না তার গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া খুন খারাবি, সন্ত্রাস ও অপরাধ শূন্যের কৌঠায় আনা যায়নি। একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটছেই গোটা অঞ্চলে। হয়নি এ যাবতকালের লুন্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার। সামনে নির্বাচন, অস্ত্র ও পেশীশক্তি প্রদর্শনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এই মন্তব্য অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের। আশঙ্কা এ কারণেই যে, গোটা অঞ্চলে বিভিন্ন সময় এখনো ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের উৎসমুখও বন্ধ করা যায়নি। সূত্রমতে, বহুদিন গোটা অঞ্চলে কোন কম্বিং অপারেশন পরিচালিত হয় না। সন্ত্রাস নির্মূলে নেই কোন মাস্টারপ্লান। যার কারণে যশোর খুলনা ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান চললেও গোটা অঞ্চলের সন্ত্রাস দমনে স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে থাকা পলিটিক্যাল ক্যাডারদের দাপট অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উঠতি বয়সের একশ্রেণীর যুবকের হাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তারা সন্ত্রাসী দলে ভিড়ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তালিকায় যাদের নাম ওঠেনি। অথচ তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর, বন্দর ও গ্রামে। জড়িত হচ্ছে নানা অপরাধ কর্মকান্ডে। তাদের কেউ কেউ একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে থাকছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারদিকে ইদানীং পলিটিক্যাল ক্যাডার হিসেবে প্রকাশ্যে এসেছে একসময়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া চিহ্নিত চরমপন্থী, সন্ত্রাসী ও অপরাধী। তাদের আনাগোনা নানা সন্দেহ ও সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে। সূত্রমতে, আসছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অস্ত্রবাজ ও পলিটিক্যাল ক্যাডারদের তালিকা নতুন করে তৈরী করে একযোগে একটা অভিযান পরিচালনা খুবই জরুরি। তবে ঢালাও ধরপাকড় নয়। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত সাপেক্ষে কোথায় কার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে, কোন রাজনৈতিক নেতার শেল্টারে কোন কোন ক্যাডার ও মাসলম্যান আছে, আর একসময় যারা চরমপন্থী ক্যাডার ও সন্ত্রাসী ছিল তাদের কর্মকান্ড কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা চিহ্নিত করে এবং কোন এলাকায় অভিযান চালালে বাস্তবে ফল পাওয়া যাবে-এসব তথ্য সংগ্রহ করে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে হবে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র এবং গোয়েন্দাদের মতে, অস্ত্রবাজদের তালিকার পাশাপাশি যেসব রাজনৈতিক নেতা জননির্ভর নয়, অস্ত্র ও পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতি করেন তাদেরও তালিকা তৈরী করা দরকার। একশ্রেণীর ব্যক্তি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে বিনা পুজির ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন তারা রাজনীতিটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন। তাদের সর্বাগ্রে চিহ্নিত করে মুখোশ খুলে দেয়া দরকার বলে সত্যিকারার্থে গণমানুষের স্বার্থে ও সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি করেন তাদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত অথচ ভেতরটা বড়ই খারাপ এমন তথাকথিত মুখোশধারী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ মুষ্টিমেয়দের কারণে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমজনতার বীতশ্রদ্ধা বাড়ছে। সামনের নির্বাচন নিয়ে আলোচনার মাঝে এসব বিষয়ও উঠে আসছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের কথা, অস্ত্র ও পেশীশক্তি প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকেন একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা। তাই অস্ত্রবাজ, পলিটিক্যাল ক্যাডার, সন্ত্রাসী, অপরাধীদের সাথে তাদেরও তালিকা তৈরী করে এ্যাকশনপ্লান করা খুবই জরুরি। একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কোন কোন রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে কোন কোন সন্ত্রাসী ক্যাডার রয়েছে তাদের একটা তালিকা করতে ফিল্ড অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোর জেলা পুলিশ ব্যতিক্রমী আয়োজন করে মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গি নির্মূলে গোলটেবিল বৈঠক করেছে। এর অনুকরণে করণীয় নির্ধারণ ও উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন জেলায় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এলাকাটিতে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে। যাতে নির্বাচনী ডামাঢোলে কোনভাবেই অস্ত্রবাজরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তার যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খুলনা রেঞ্জ পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জেলায় জেলায় নিয়মিত অভিযান চলছে তবে একযোগে একটা অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে। অস্ত্রবাজদের আপডেট তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। আর এমনিতে তো মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গির বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। অস্ত্রবাজদের নির্মূলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ