Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ত্রাণ চাই ত্রাণ

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বান ও ভাঙনে দুর্গতের করুণ আর্তি : বানের পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ, ছড়িয়ে পড়েছে রোগব্যাধি : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
ইনকিলাব ডেস্ক : ধীরলয়ে বানের পানি নামছে। বাড়ছে নদীভাঙন। দেশজুড়ে লাখো লাখো লাখো বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ রেড়েই চলছে। খাদ্য নেই, আশ্রয় নেই, নেই কোন সাহায্য সহযোগিতা। ত্রাণ বিতরণের নামে শোনা যাচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়ালের প্রতিযোগিতা। বন্যা দুর্গত এলাকায় বহিরাগতদের আসতে দেখলেই বুভুক্ষু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সর্বত্র লক্ষ করা যাচ্ছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। শুকনো মুখগুলোর ক্ষয়িষ্ণু কণ্ঠে ত্রাণের জন্য আহাজারি করতে দেখা গেলেও স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না তাদের আওয়াজ। তবে ত্রাণমন্ত্রী লালমনিরহাটে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দাবি করেছেন, বন্যা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। আর নীলফামারীতে তিনি বলেছেন, বন্যার্ত মানুষ যতক্ষণ ঘরে ফিরবে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে ত্রাণ দেয়া হবে। বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করায় বন্যা দুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ। শিক্ষার্থীরা কবে নাগাদ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরতে পারবে তা কেউ বলতে পারছে না।
টাঙ্গাইলে বানভাসি মানুষের বাড়ছে রোগ-বালাই, আরো বাড়ছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা। বন্যা কবলিত মানুষের দুর্গতি দিন দিন বাড়ছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ির উড়িয়াতে বন্যা দুর্গত মানুষের ত্রাণের জন্য আহাজারি বাড়ছে, আর সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগের সড়ক পথ ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বানভাসি মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হচ্ছে। বন্যা কবলিত ও পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে চলমান বানভাসি মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যেও আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফুঁসে থাকা নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর থেকে আরও নেমেছে। বিপদসীমার কাছাকাছি থেকেও কমেছে। বন্যায় প্লাবিত অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নামছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে নদীতীরের গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে। তেমন কমেনি বন্যার্ত লাখো মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ। পানি নামার পর ফেলে আসা বাড়িঘরে গিয়েও একবেলা দুমোটো খাবার জুটছে না, চুলা জ্বলছে না এখনো অনেক পরিবারে। মারাত্মক অপুষ্টিতে, অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে হাজারো শিশু-কিশোর। পেটের পীড়া ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগসহ বন্যাবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তর জনপদ, মধ্যাঞ্চল ও সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যার্ত পরিবারগুলো যেখানে নিয়মিত খেতে পায় না সেখানে জরুরী ওষুধ তাদের ভাগ্যে জুটছে না। সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে অসুস্থের সংখ্যা। ত্রাণ সামগ্রীর আশায় অসহায় মানুষ প্রহর গুনছে। তবে কেউ যৎসামান্য পাচ্ছে, কেউ তাও পাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা খুবই অপ্রতুল।
এদিকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) ৫টি নদ-নদী ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে ছিল। আগের দিনে ছিল ৬টি নদ-নদী ১১টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে। রোববার ছিল ১২টিতে। গতকাল পানি বৃদ্ধি পায় ২৪টিতে। আর হ্রাস পায় ৫৮টি পয়েন্টে। অপরিবর্তিত থাকে ৪টি পয়েন্টে। নদ-নদীর প্রবাহের পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল আরও কমে আসছে। অপরদিকে গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা সদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানি হ্রাস প্রবণতা আগামী ২৪ ঘন্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত যমুনা নদ দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সর্বশেষ যমুনার প্রবাহ কাজীপুরে এক এবং সিরাজগঞ্জে ২১ সেমি উপরে। আগের দিনে ছিল ৪টি পয়েন্টে। আত্রাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানিও বিপদসীমার উপর থেকে আরও কমেছে। অন্যদিকে সুরমা নদী বিপদসীমার উপরে একটি পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা ৩টি পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানির সমতল ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
লালমনিরহাট থেকে মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ যখন বন্যায় পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঠিক তখনি বেগম জিয়া বন্যার্ত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশের যড়ষন্ত্র করতে বিদেশে গেছেন। খালেদা জিয়ার কোনো যড়ষন্ত্রই সফল হবে না। বন্যা মেকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। গতকাল দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন বন্যার্ত ও নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সবধরনের প্রস্তুতি এবং বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে, সুতরাং বন্যার্ত একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না। বন্যা বা ত্রাণ নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। ত্রাণ নিয়ে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। মন্ত্রী আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। পানি নেমে গেলে তারা ঘরে ফিরে যাবেন। তখন ৪০ দিনের কর্মসূচি দিয়ে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে পানি নেমে যাওয়ার পরেই তাদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসন করা হবে। বন্যার পানি থেকে স্থায়ী রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কালে যখনই দেশে বড় কোন দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, তখনই সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে তিনি জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আহŸান জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মোঃ আলা উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি, সফুরা বেগম রুমী এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক এ্যাড. মতিয়ার রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও সির্ন্দুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরল আমিন প্রমুখ।
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন বন্যার্ত মানুষ যতক্ষন পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না ততক্ষন পর্যন্ত তাদেরকে ত্রাণ দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের খাদ্য গুদামে খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই। তাই বর্তমান সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নীলফামারীর ডালিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ডিমলার বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীমের সভাপতিত্ব ত্রাণ বিতরণ অনুষ্টানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-০১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দীন সরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েন সচিব শাহ কামাল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ,খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমার সরকার প্রমূখ। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত ছয়টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ দুই হাজার সাতশ’ ২৫জনকে ১০ কেজি করে চাল, দেড় হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার এবং চারশ’জনের মাঝে নগদ অর্থ বিতরন করা হয়।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, টাঙ্গাইলে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রæত উন্নতি ঘটছে এর সাথে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার ভূঞাপুর সøুইসগেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ১০০ মে. টন জিআর চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় এবার বন্যা হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, দেলদুয়ার ও মির্জাপুর। জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ের ৬০ মে.টন জিআর চাল ও এক লাখ ৫ হাজার নগদ টাকা ছয়টি উপজেলায় ইতি মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়েছে।
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, স্মরণ কালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট জেলার ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের দুই লক্ষাধিক মানুষ। ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যা এত স্থায়ী হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এতে দুই উপজেলায় স্মরণ কালের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ফলে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের দুর্গতি প্রতিদিন বাড়ছে। বন্যার্ত মানুষ ত্রাণের জন্য করছেন আহাজারী। নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসেন। উচু জায়গার পানি কিছুটা কমলেও নি¤œাঞ্চলে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানিও কমেনি। দুই উপজেলার বন্যায় আকান্ত আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। ডুবে যাওয়ার কারণে পাকা সড়কের অংশ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে দুই উপজেলায় বন্যায় আক্রান্ত মানুষের দুর্গতি চরম আকার ধারণ করেছে। নতুন করে যোগ হয়েছে ভ্যাপসা গরম। সাথে রয়েছে বিদ্যুতের গণগণ লোডশেডিং।
জানা যায়, দুই উপজেলার ২ লক্ষাধিক পানি বন্দি মানুষ মাসাধিক ধরে মানবেতর জীবন করছেন। ত্রাণের জন্য চলছে আহাকার। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উচু জায়গার বন্যার পানি কমেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ দেখা দিয়েছে নানান ধরণের রোগের। আউস ধান ও ফিসারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে গোবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও।
বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অপ্রতুল ত্রাণ। হাজারো মানুষ একেবারেই কোন ত্রাণ পায়নি বলে অনেকেই জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার বন্যার আচরণ অস্বাবাভিক। এতো দীর্ঘসময় কখনো বন্যা থাকে না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) থেকে মুক্তার হোসেন রানা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বন্যা দুর্গত ৪০০ পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণের ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন ফুলছড়ি উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও উড়িয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম, উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার, উড়িয়া ইউপি সচিব এস.এম আকতারুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, হায়দার আলী প্রমুখ। উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙনে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্তদেরও তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের সকলকে ত্রাণ দেয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুন্দরগঞ্জে বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ৪/৫ দিনের ব্যবধানে ৪০০ পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে হরিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প।
৫/৬ দিন থেকে সুন্দরগঞ্জে তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। পানি কমলেও বেড়েছে নদী ভাঙন। উপজেলার হরিপুর, কাপাসিয়া, চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, বেলকায় তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো সীমাহীন দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। এপর্যন্ত ৪০০ পরিবারের বসতভিটা, আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হরিপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার আশ্রয়ণ প্রকল্প ভেসে যাচ্ছে নদীগর্ভে। চরাঞ্চলের বন্যাদূর্গ মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে একতা এনজিও প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলা বাজারে তিস্তা নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর থেকে বন্যা দূর্গতরা এর সুফল পেলেও গত কয়েকদিনের ভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম সরকার জিমি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্রমান্বয়ে বিলীন যাচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলার নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি এনজিও কর্তৃক নির্মিত হওয়ায় করণীয় কিছু নেই। তিনি আরও জানান, ৪/৫ দিনের ব্যবধানে বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৩৯৫টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।



 

Show all comments
  • S. Anwar ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১০:২৩ এএম says : 0
    হায়রে আমার দুঃখী ভাই.! / তোমারে দেবার লাগি মোর যে কিছু নাই ll // যাহা এসেছিলো তোমার ত্রাণ, / খেয়ে নিয়েছে তাহা মোদের নেতা ভাইজান ll // আর একটু রাখো ভাই ধৈর্য্যের বান, / ত্রাণ না পেলেও পৃথিবী হতে পাবে পরিত্রাণ ll //
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ