পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া তান্ডব চলছে। নগরীর অর্ধশতাধিক স্পটে রাতে-দিনে সমানে ছিনতাই হচ্ছে। ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারীদের হাতে ঘটছে খুনের ঘটনাও। সর্বশেষ গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে নগরীতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন এক চীনা দম্পতি। ঢাকা থেকে বাসে চট্টগ্রাম আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সর্বস্ব হারান তারা। ব্যবসার উদ্দেশে তারা এই দেশে আসেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে এসে হোটেলে উঠার আগেই ছিনতাইয়ের শিকার হন। এই ঘটনায় হতবিহŸল ওই দুই বিদেশী। প্রকাশ্যে দিবালোকে নগরীর প্রধান সড়কে ব্যস্ততম মোড়ে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, রিকশায় আগ্রাবাদ থেকে দেওয়ান হাট যাওয়ার পথে নগরীর শেখ মুজিব রোডের চৌমুহনী মোড়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অটোরিকশা আরোহী ছিনতাইকারীরা টান মেরে তাদের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে টাকা-পয়সা, ডলার, ল্যাপটপ ছাড়াও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। ওসি বলেন, ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কায়সার হামিদ বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে বাস থেকে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় নামেন চীনের নাগরিক লি লি লিওয়ের (৩০)। রিকশায় প্রথমে তারা আগ্রাবাদের হোটেল সেন্টমার্টিনে যান। সেখানে কোন রুম খালি না থাকায় তারা শেখ মুজিব রোডের ল্যান্ডমার্ক হোটেলে আসেন। সেখানেও কোন রুম পাননি তারা। এরপর একই এলাকার অর্কিড হোটেলে যান। সেখানে রুম পছন্দ না হওয়ায় ফের রিকশায় তারা দেওয়ানহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। চৌমুহনী পার হতেই তাদের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিনিয়তই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তাদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বিদেশীরাও। এর আগে ২১ জুন রাতে খুলশী এলাকায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের শিক্ষিকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডানা ম্যাকক্লেইন একই কায়দায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়। তার কাছ থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়েছিল সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে ছিনতাইকারীরা। তবে মামলা দায়েরের পর পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধার করে দিয়েছিল। নগরীর জিইসি মোড়ের একটি রেষ্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া শেষে হেঁটে খুলশী ২ নম্বর রোডের বাসায় ফিরছিলেন ওই শিক্ষিকা। তিনি নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছলে অটোরিকশারোহী ছিনতাইকারী তার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়।
পুলিশের তথ্যমতে নগরীর অন্তত ৫০টি স্পট ছিনতাই প্রবণ। এসব এলাকায় রাতে-দিনে লোকজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে। অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল নিয়ে রীতিমত নগরীতে টহল দিচ্ছে ছিনতাইকারী চক্র। সুযোগ বুঝে তারা লোকজনের ব্যাগ, টাকা, মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে। ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারীদে হাতে প্রায় খুনের ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ পরিচয়েও নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের হ্যান্ডকাপ, ওয়ারলেস সেট নিয়ে মাইক্রোবাসে ঘুরে বেড়ায় স্মার্ট ছিনতাইকারী। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে লোকজনকে ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আবার যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস থেকেও লোকজনকে নামিয়ে এনে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে ডিবি পরিচয়ে।
নগরীতে গত একবছরে কতটি ছিনতাই হয়েছে তার হিসাব নেই পুলিশের কাছে। মোটা অংকের টাকা ছিনতাই হলেই কেবল থানায় মামলা হচ্ছে। ছোটখাট ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে চায় না। আবার মামলা করেও কোন প্রতিকার মিলেছে এমন নজিরও কম। তাই ছিনতাইয়ের কবলে পড়েও লোকজন উল্টো হয়রানীর ভয়ে থানায় অভিযোগ করেন না। ফলে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড হয় না। নগরীতে তৎপর ছিনতাইকারীর সংখ্যা কত তাও জানে না পুলিশ। কারণ পুলিশের কাছে এব্যাপরে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে ৩ বছর আগের এক তালিকায় শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম আছে। তবে বর্তমানে তাদের অবস্থা কী এবং নতুন করে কারা ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য নেই। ২০১৪ সালের ওই তালিকায় নগরীর ১৬ থানা এলাকায় সক্রিয় পেশাদার ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ও গামছাপার্টির ১০২ জনের নাম ছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) সালেহ মো. তানভির বলেন, গত কয়েক মাসের অভিযানে প্রায় ২শ’ ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে। তাদের একটি তালিকা আছে। তবে পেশাদার ছিনতাইকারীদের হালনাগাদ তালিকা নেই। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ে ঘটনা ঘটছে, আবার ঘটনায় জড়িতরা ধরাও পড়ছে। পুলিশ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ছিনতাইকারীদের হালনাগাদ তথ্য না থাকা ও ভুক্তভোগীদের মামলায় অনীহার কারণে চট্টগ্রামে ছিনতাই প্রতিরোধে সাফল্য আসছে না বলে মনে করেন অনেকে। মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ হারানোর এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘পাত্তা দেয় না’ বলে ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকায় সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রে পেশাদার ছিনতাইকারীদের পাশাপাশি উঠতি বয়সী কিছু তরুণও জড়িয়ে পড়ছে। নগরীরতে ছিনতাইপ্রবণ হিসেবে পুলিশের খাতায় কোতোয়ালি থানার লাভলেইন থেকে নেভাল অ্যাভেনিউ, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে সিআরবি কাঠের বাংলো, টাইগারপাস মোড় থেকে কদমতলী, ডিসি হিল থেকে রাইফেল ক্লাব, শহীদ মিনার এলাকা, সার্সন রোড, আসকার দিঘীর পাড় থেকে গণি বেকারি মোড়, রহমতগঞ্জ এলাকা চিহ্নিত।
এছাড়াও নিউমার্কেট, বিআরটিসি মোড় এলাকায় মোবাইল ছিনতাইকারীরা সক্রিয়। চকবাজার থানার কলেজ রোড, খুলশী থানার জাকির হোসেন রোড, আমবাগান এলাকা, পতেঙ্গা থানার কাটগড়, হালিশহর থানার বড়পোল এলাকা, বায়েজিদ বোস্তামী থানার মুরাদপুর অক্সিজেন রোড, ষোলশহর-বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক এলাকায়ও অহরহ ছিনতাই হচ্ছে।
গত ১৩ জুন নগরীর জামালখান এলাকায় ছিনতাইকারী ব্যাগ ধরে টান দিলে রিকশা থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন কলেজ ছাত্রী শিরিন আক্তার। ছয়দিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি। ঈদের কেনাকাটা সারতে পটিয়া থেকে শহরে আসেন তিনি। ওই ঘটনায় সড়কে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ থেকে এক ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। সে স্বীকার করে তারা মোটর সাইকেল যোগে নগরীতে ছিনতাই করে। মোটর সাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী চক্রের হাতে নগরীতে আরও অনেক খুনের ঘটনা ঘটেছে। গতবছরের নভেম্বরে কদমতলী ফ্লাইওভারে এমন একটি খুনের ঘটনায় জড়িত ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারাও মোটরসাইকেল নিয়ে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে।
নগরীতে মোটর সাইকেল নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। আর সুযোগ বুঝে লোকজনের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়। কেউ বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত বা গুলি করা হয়। ২০১৩ সালে আমবাগান এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছিলেন। নগরীর পাঁচলাইশের বাদুরতলা এলাকায় বাস থেকে নামিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে নগরীর জুবিলি রোডের মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কাজীর দেউড়ি যাওয়ার পথে নেভাল এভিনিউ মোড়ে দিনদুপুরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন দুই ভাই। ছিনতাইকারীরা তাদের কাছে থাকা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এক ব্যবসায়ী আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে টাকা তুলে চান্দগাঁও যাচ্ছিলেন। পথে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কয়েকজন তরুণ তাদের একজনের বোনকে উত্যক্ত করার অভিযোগ তুলে ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করে তার টাকার ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের শিকার অধিকাংশ ভুক্তভোগীর দাবি, পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোকে তেমন পাত্তা দেয় না। তাছাড়া থানা-আদালত ছোটাছুটি করতে হবে- এমন আশঙ্কায় অধিকাংশই মামলার ঝামেলায় যেতে চান না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।