পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরাকের উজানে বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে ভারত : গঙ্গা-পদ্মায় অপরিবর্তিত : ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার নীচে : যমুনায়ও ধীরে কমছে : খাদ্য পানি চিকিৎসা সঙ্কটে বন্যার্ত লাখো মানুষ দিশেহারা : সাহায্যের করুণ আর্তি, নামেমাত্র ত্রাণ
ইনকিলাব ডেস্ক : পানি আর পানি। চারদিকে শুধু বানের পানি। পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীভাঙনের চিত্র দীর্ঘ হচ্ছে। দেশজুড়ে লাখো লাখো বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। নাই খাদ্য, নাই আশ্রয়, নেই কোন সাহায্য সহযোগিতা। ত্রাণ বিতরণ শোনা যাচ্ছে শুধু ক্যামেরা ট্রায়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকা, লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কক্সবাজারের গ্রামীণ অবকাঠামো ও বিস্তীর্ণ জনপদ। রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে, ভাঙছে নদী তীরবর্তী এলাকা। সিলেটের আকাশে সূর্যের তাপে কমছে না কুশিয়ারা-সুরমার পানি। কুড়িগ্রামে শুরু হয়েছে নদীভাঙন, বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা, গতকাল একজনের মৃত্যু হয়েছে। নেত্রকোনায় কংশ নদী ভাঙনে কয়েকশ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। চরভদ্রাসনে বন্যার অবনতির সাথে সাথে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। শিবচরে পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে, কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশত ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন, হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন, হুমকির মুখে ৩-৪শ’ ঘরবাড়ী।
নরসিংদীর রায়পুরা থানার চানপুরে ভয়াবহ ভাঙনে অর্ধশত বাড়ীঘর মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। যশোরের কেশপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগের সড়ক পথ ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বানভাসি মানুষের আহাজারি দিন দিন বাড়ছে। বন্যা কবলিত ও পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও আশ্রয় সঙ্কটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে চলমান বানভাসি মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যেও আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মাসহ একযোগে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ভাটির দিকে নামছে তীব্রবেগে। সেই সাথে নৌ চলাচল চ্যানেল ও ঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ প্রচন্ড ঘূর্ণিস্রোত এবং সর্বত্র নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহর-জনপদে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে হাজারো বসতঘর হাট-বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ রাস্তাঘাট সেতু-কালভার্ট। ফের প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এদিকে গতকাল (রোববার) সুরমা ও কুশিয়ারা উভয় নদীর পানি বিপদসীমার উপরে বেশিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃহত্তর সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে সিলেটের বন্যা নিয়েছে দীর্ঘস্থায়ী এবং বিস্তৃত রূপ। পানিবন্দী মানুষের নানামুখী কষ্ট-দুর্ভোগের যেন আর শেষ নেই। জানা গেছে, সুরমা-কুশিয়ারার উৎসে বরাক নদীর উজানে বাঁধের গেটগুলো হঠাৎ করে খুলে দিয়েছে ভারত। এতে করে সিলেটে বন্যার অবনতি আরো ঘটেছে। গঙ্গা-পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিশেষত ভাটির দিকে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর ও বিভিন্ন স্থানে শাখানদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। অনেক জায়গায় ঘটছে আরো অবনতি।
টানা একসপ্তাহ পর গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার নীচে নেমে আসে। বিকেলে ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনা নদেও পানি ধীরে ধীরে কমছে, যদিও বেশিরভাগ পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার উপরে। তবে আরিচা পয়েন্টে পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি (মাত্র ৩ সেমি নীচে) এসেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ৬টি নদ-নদী ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে বন্যা কবলিত অন্তত ১৫টি জেলায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, বন্যাবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধির চিকিৎসা এবং ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে থাকায় কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের সঙ্কটই এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। অগণিত পরিবারে চুলা জ্বলেনি দিনের পর দিন। স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারছে না অসহায় শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় বন্যার্ত লাখো মানুষ দিশেহারা অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য যাচ্ছে প্রকৃত দুঃখ-দুর্দশার চিত্রের বিপরীতে এখন পর্যন্ত খুবই অপ্রতুল এবং নামেমাত্র। সাহায্যের আশায় তাকিয়ে বন্যার্তদের সকরুণ আর্তি এক কথায় অবর্ণনীয়।
সিলেটে অবনতির মূলে-
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া পূর্বাভাস ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরামসহ দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত সপ্তাহ থেকে বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে এবং আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত সেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম থাকবে। এরফলে আসামের গোয়াহাটি, গোয়ালপাড়া, ডুবড়ি পয়েন্টে পাহাড়ি খর স্রোতা নদ-নদীতে পানির প্রবাহ ক্রমাগত হ্রাস পায়। উজানের ঢল আসাও প্রায় থামে এবং উজানভাগে বন্যারও উন্নতি ঘটে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আসাম ও এর সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জারি করা বন্যার সতর্কতা শিথিল করে। অথচ এ অবস্থায় যেখানে ভাটির দিকে বৃহত্তর সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমোন্নতি হওয়ার কথা বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। এর মূলে হলো বরাক নদীর উজানে পানির চাপ আরো কমাতে গিয়ে বাঁধগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বরাক নদীর উৎস ও বিশাল অববাহিকা পড়েছে আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম রাজ্যগুলোর উপর দিয়ে বয়ে গেছে। বরাকের উজানে সেসব অঞ্চলে উপনদীগুলোতে বেশকিছু বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেসব এলাকায় বন্যার উন্নতির পাশাপাশি বাঁধগুলোর গেট ও স্পিলওয়ে একযোগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে উজানের পানি ফের তীব্রবেগে নামছে ভাটিতে থাকা বৃহত্তর সিলেটে। বন্যা পরিস্থিতির হচ্ছে আরও অবনতি। গতকাল বিকেলে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে গত ৩০ ঘণ্টায় আরও ৫৭ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নদ-নদীর প্রবাহ ও পূর্বাভাস
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দেশের ৯০টি পানির পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৬টি নদ-নদী ১২ পয়েন্টে বিপদসীমার এখনো উপরে। যা শনিবার ছিল ১১টি নদী ১৬টি পয়েন্টে। গতকাল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় ৩৭টিতে, যা আগের দিনে ছিল ৪৫টিতে। পানি হ্রাস পায় ৪৬টি পয়েন্টে, আগের দিনে হ্রাস পায় ৩৮টিতে। পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল আরও হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কক্সবাজার থেকে জাকের উল্লাহ চকোরী জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৮ ইউনিয়নে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে ২শ’ ১৭ কোটি ৬ লাখ ৮২ হাজার ৭শ’ টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে উল্লিখিত পরিমাণ অংকের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দপ্তরগুলো হচ্ছে, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মৎস্য ও কৃষি অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, পশু সম্পদ বিভাগ, বনবিভাগ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী লোকজন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পদ্মায় পানি বাড়ছে। সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙন। রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার গোদাগাড়ী চারঘাট বাঘা এলাকার নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক চলছে। নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে বসড়ি এলাকায় ভাঙন বেশী। বুলনপুর, নবগঙ্গা, জিয়ানগর ভাঙ্গনের মুখে। গোদাগাড়ী সারেংপুর, গঙ্গাবাড়ি ও সুলতানগঞ্জ এলাকায় নদী ভাংছে। বাঘার আলাইপুর, পাকুড়িয়া পানিকামড়া ও চরকালিদাশ খালিতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার ভিটা ফসলী জমি গাছপালা নদী গর্ভে চলে গেছে। নদীর পানি পরিমাপক জানালেন গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে গড়ে ত্রিশ সেন্টিমিটার করে। পদ্মার বিপদ সীমার ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার হলেও এখনও বিপদ সীমার প্রায় তিন মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, সিলেটের আকাশে সূর্ষের আলো দেখা গেলেও আটটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যার পানি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই ওইসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও অন্য এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। এদিকে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট, অমলশীদ ও শেওলা পয়েন্টের পানি এখনো বিপদ সীমার উপরে রয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার বিকেল তিনটায় কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ১৩ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার, অমলশীদ ১১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ১৪ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ১৭ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই ওইসব পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই বন্যার পানি কমছে না।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে সবকটি নদ-নদীর পানি। এর ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এখনো নিম্নাঞ্চলে পানি থাকায় কর্মজীবী মানুগুলো কর্মহীন হয়ে পরেছে। হাতে টাকা না থাকায় ধারদেনা ও ত্রাণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদেরকে। ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমলেও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার বিকেলে চিলমারীর কড়াই বরিশাল চরে আলম মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৭) সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করেন। এনিয়ে চলতি বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ জনে।
পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত দুদিনে রাজীবপুরের কোদালকাটি, রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, চিলমাারীর নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আরো দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্যের সঙ্কটের পাশাপাশি পশুখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
জামালপুর থেকে নূরুল আলম সিদ্দিকী জানান, জামালপুরে যমুনার পানি নামতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি কমে এখনও বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি কিছুটা কমলেও বন্যা কবলিত বিপন্ন মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ঘরবাড়ী, স্কুল-কলেজ, সড়ক ও বাজার ও ফসলি মাঠ পানির তলে থাকায় খাদ্য সঙ্কটে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। দরিদ্র ছাড়াও পানিবন্দি সম্পদশালী মানুষজনেরও একবেলা আধপেট খেয়ে অনেকেরই দিন কাটছে অনাহারে। ঘরে টাকা থাকলেও পানির তলে বাজার। দুরদুরান্ত থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে আনলেও রান্না করার উচুঁ স্থান টুকুওতো অবশিষ্ট নেই। এখনও পানিতে তলিয়ে আছে জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। শনিবার উপজেলা পদ্মা নদীর পানি আরও ১৬ সে.মি. বেড়ে বিপদ সীমার ২০ সে.মি.ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে উপজেলার প্রায় গেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতির সাথে উপজেলা পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে উপজেলা সদরের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের ডাঃ আঃ রশিদ এর বসতভিটে সহ দুই একর ফসলী জমি বিলিীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত পদ্মা নদী ঘেষে ফাজেলখার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকীর মধ্যে রয়েছে।
শিবচর (মাদারীপুর) থেকে এম সাঈদ আহমাদ জানান, পদ্মা নদীর অস্বাভাবিক হাওে পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুই ছুই করে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের ২টি ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে একাধিক সুত্রে জানা যায়, গত ৩/৪ দিন ধরে পদ্মা নদীর শিবচর অংশে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩ সে.মি. পানি বেড়ে পদ্মা নদীর শিমুলিয়া অংশে বিপদসীমার ৪ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার পদ্মা নদীর বিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে ও তীব্র স্রোতের ফলে চরাঞ্চলের কাঠালবাড়ি ও চরজানাজাত ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী জানান, নরসিংদীর চানপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত শনিবার রাতে ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামের ওয়াসেক মিয়া, বরকত আলী, মনির ও নুরজাহানসহ ৫/৬টি বাড়ী মেঘনা গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে আরো অন্তত আরো ৩ শ’ বাড়ীঘর। ২৫/৩০ জন মালিক তাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এসব বাড়ী-ঘরের ভিটিগুলো মেঘনা গর্ভে তলিয়ে গেছে।
কেশবপুর (যশোর) থেকে রূহুল কুদ্দুস জানান, কেশপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হরিহর নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কেশবপুর পৌর শহরের ধান হাট, হলুদ হাট ও নারিকেল হাটা পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর এলাকার মধ্যকুল নাথপাড়ায় বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। একই আবস্থা এক নম্বর ওয়াডেরও। সাহাপাড়ার ৫০ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে ।
পানি উন্নয়ন র্বোড এ প্রতিনিধিকে জানান, যশোরের ডাউনে ভদ্রা নদে গতকাল দুপুর ১২টায় পানি বিপদ সিমার ২২ মিঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, কংস নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় গত দুই বছরে নদী ভাঙনে ফকিরের বাজার এলাকায় চারটি গ্রামের প্রায় কয়েকশ বাড়ীঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যার পানি কমার সাথে সাথে কংস নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত দুই বছরে কংশ নদীর ভাঙনে নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরের বাজার এলাকায় চারটি গ্রামের প্রায় কয়েকশ বাড়ীঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভেঙে যাচ্ছে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটিও। হুমকির মুখে রয়েছে আরো চার/পাঁচটি গ্রাম।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের-এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কংশ নদীর পাড় রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে অনুমোদনের জন্য উধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।