Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার্তদের দুর্ভোগ অসহনীয় পদ্মা আরও ফুঁসে উঠেছে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


 যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে কিছুটা হ্রাস : উজানে পানি কমছে ধীরে, ভাটিতে বন্যা অপরিবির্তিত : আশ্রয় খাদ্য বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার : নৌপথে ঘূর্ণিস্রোত ও ভাঙন বৃদ্ধি


ইনকিলাব ডেস্ক : হুহু করে বাড়ছে বানের পানি। দেশে উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল কিংবা পূর্ব থেকে পশ্চিমাঞ্চল এখন বানের পানিতে থৈ থৈ করছে। তার সাথে যোগ হয়েছে নদীভাঙন। বানভাসি মানুষের দুর্গতি দিনদিন রেড়েই চলছে। বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণের জন্য আহাজারি করছে। কিন্তু জুটছে না কাঙ্খিত ত্রাণ কিংবা আশ্রয়।
বগুড়ায় বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী। কুড়িগ্রামে ৪২ ইউনিয়নের সাড়ে ৫শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রৌমারীতে বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ। ত্রাণের জন্য বানভাসিদের হাহাকার বাড়ছে। জামালপুরে যমুনা পানি কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি, খাদ্য ও গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কয়েকটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ফরিদপুরের পদ্মার পানি রয়েছে বিপদসীমার ওপরে।
ওসমানীনগর-বালাগঞ্জে বন্যার পানি বাড়ছে, দুই লক্ষাধিক মানুষ ফের পানিবন্দি হয়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধরছে, ত্রাণের জন্য হাহাকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। ২য় সাময়িক বা ষাণ¥াসিক পরীক্ষা সামনে থাকলেও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়। বানবাসী মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও দুগতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায় পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে পদ্মা নদী আরও ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। গতকাল (শনিবার) সর্বশেষ তথ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি আরও বেড়ে পদ্মা নদী বিপদসীমার ২৫ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র উভয় নদের পানি সার্বিকভাবে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। উজানে পানি ধীরে ধীরে কমছে। তবে ভাটিতে বন্যা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। কোথাও কোথাও বিস্তার ঘটছে। ভাটির দিকে প্রায় সবকটি ঘাট ও নৌপথে তীব্র ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে নদীভাঙন। উত্তর জনপদ, মধ্যাঞ্চল ও বৃহত্তর সিলেটে বন্যা কবলিত ১৭টি জেলার লাখ লাখ বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাদের মাঝে আশ্রয়, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল দেশের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১৬টিতে ছিল ১১টি নদ-নদী বিপদসীমার উপরে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫টিতে, অপরিবর্তিত থাকে একটিতে এবং হ্রাস পায় ৩৮টিতে। পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা ও কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে সুরমা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘন্টায় হ্রাস এবং কুশিয়ারা নদীর পানি ২৪ ঘন্টায় বাড়তে পারে। এদিকে পদ্মায় অব্যাহত পানির চাপ বৃদ্ধির কারণে সিরাজগঞ্জ থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, আরিচা, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, মুন্সীগঞ্জসহ অনেক জায়গায় নদ-নদীর প্রবল ঘূর্ণি¯্রােত ক্রমাগতই বাড়ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদে পানি ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। তবে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি অব্যাহত বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ তৈরি করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর উজান অববাহিকায় তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হচে।ছ। আসামের গোয়াহাটি, গোয়ালপাড়া, ডুবড়ি পয়েন্টে পানি আরও হ্রাস পেয়েছে। এতে করে উজানের ঢল আসা কমেছে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় আরো কমতে পারে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ গতকাল পূর্বাভাসে জানায়, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরামসহ দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ১৮ জুলাই পর্যন্ত কম থাকতে পারে।  
সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গাইবান্ধা জেলায় ঘাগট নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে আরো কমে গিয়ে বিপদসীমার ২০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনা বাহাদুরাবাদে কমে এসে ৭৫ সেমি উপর দিয়ে, সারিয়াকান্দিতে ৫০ সেমি উপরে বয়ে যাচ্ছিল। যমুনা কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ৬৩ ও ৭৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনার ভাটিতে আরিচায় পানি বিকেলে কিছুটা কমে আসে। তবে বিপদসীমার কাছে ৭ সেমি নীচে এসে যায়।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার বন্যা দুর্গত এলাকায় পরিদর্শন কালে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা কঠিন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এসব দুর্যোগ সাহসের সাথে মোকাবিলা করছি। হবিগঞ্জে হাওর এলাকায় ফসলডুবি, ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে উপকূল লন্ডভন্ড, পাহাড় ধস ও বন্যা পরপর চারটি দুর্যোগে আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করেছি। বাংলাদেশ এখন দূর্যোগ মোকাবেলায় রোল মডেল। গত চার মাসে আমরা চারটি বড় দূর্যোগ মোকাবেলা করেছি। দেশের মানুষ এখন আর ত্রাণের জন্য মারামারি করেনা। ত্রাণ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের মানুষ এখন দূর্যোগকে জয় করতে জানে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, তাই দূর্যোগকালীন সময়ে খাদ্যের সমস্যা বাংলাদেশে নেই।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবন জীবিকা সঠিকভাবে পুষিয়ে না উঠা পর্যন্ত সরকার তাদেরকে সাবির্ক সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
পরিদর্শনকালে তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় রৌহদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ওপর আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরে মন্ত্রী কুতুবপুর, চন্দনবাইশা ও কামালপুর ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩শ পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল বিতরণের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও তিনি বন্যাদুর্গতদের জন্য ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ১৫ লাখ নগদ টাকা ও ১০০ মে: টন চাল বরাদ্দের ঘোষণা দেন। শনিবার রাতে মন্ত্রী বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, বন্যার পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা ১০ দিন ধরে স্থায়ী বন্যার ফলে প্রায় ৭শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার ফলে ৪২টি ইউনিয়নের সাড়ে ৫শ’ গ্রামে আড়াই লক্ষ মানুষ এখনো পানিবন্দী। পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে ১৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সেতু পয়েণ্টে ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার কেেমছে। দুধকুমোরের নদীর পানি ৮সে. মি. কমেছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সত্রে জানা যায়, বন্যায় ৪২টি ইউনিয়নের ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। বন্যায় ৩৮ হাজার ৩১২টি ঘরবাড়ি, ১৭টি ব্রীজ, দেড় কিলোমিটার বাঁধ, ১৪০ কি.মি রাস্তা, ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪৯হাজার ৩৯২জন। ফসল নিমজ্জিত ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ৩জন। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে ৪০০ মেট্রিকটন চাল, ১১লাখ ৫০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ৪ হাজার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার কারনে ১২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জামালপুর থেকে নূরুল আলম সিদ্দিকী জানান, জামালপুরে যমুনা পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় জেলার ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার ৯ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার ১০টি গ্রাম নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
যমুনার পানি সামন্য কমলেও এখনও পানিতে তলিয়ে আছে জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের সিংহভাগ গ্রাম। ঘর থেকে বের হতে না পারা বানবাসী মানুষরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। পানিতেই মাচা করে তার উপর চুলা বসিয়ে সেরে নিচ্ছে রান্না-বান্নার কাজ। এক বেলা রান্না করা খাবার খাচ্ছে দুই-তিন বেলা। খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে দুর-দুরান্ত থেকে। নিজেদের খাবার কোন রকম সংগ্রহ করতে পারলেও গো-খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করায় গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানবাসী মানুষ।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির জানিয়েছেন, বানবাসীদের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তোদের জন্য ৩শ’ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ৬৯টি মেডিক্যাল টিম গঠন করলেও অনেক দুর্গত এলাকায় এখনও মেডিকেল টিমের লোকজনের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, দেশের উত্তর অঞ্চলের পানি কমতে শুরু করলেও এখন বাড়তে শুরু করেছে মধ্যে অঞ্চলে নদ-নদীর পানি। গত কয়েক দিন ধরে ফরিদপুরের নি¤œা অঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, গত ১২ ঘন্টায় পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১৬ সে.মিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ২০ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহীত হচ্ছে। জেলার পদ্মা, আড়ীয়াল খা, কুমার ও মধুমতি নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, পদ্মার পানিই বাড়ছে । এখন পযর্ন্ত জেলায় বড় ধরনের কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী ) থেকে মো. নজরুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতেকরে বন্যার পানিতে নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার ভোর ৬ টায় পদ্মায় পানি পরিমান করে পানিউন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতর আলী সরদার জানান, তার ইউনিয়নের দেবগ্রাম, বেতকা, রাখালগাছি, কাউয়ালজানি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকালে দেবগ্রাম এলাকার বারেক চকিদারের বাড়ি ও জালালের বাড়ি সংলগ্ন দুইটি স্থানে পানির চাপে রাস্তা ভেঙে গেছে। এতেকরে ওখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আবুল কালাম আজদ জানান, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে বন্যা পরিস্থিতিআবারও অবনতির দিকে যাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত হাওর ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানা যায়। প্রায় এক মাস ধরে পানি বন্দি অবস্থায় কাটছে দুই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষের। ভারত থেকে ধেয়ে আসা উজানের বানের পানিতে ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির চরম রূপ ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
গতকাল কুশিয়ারা ডাইক (বাঁধ) অতিক্রিম করে কুশিয়ারা নদীর পানি হু হু করে প্রবেশ করছে। ফলে শতাধিক গ্রাম পানি বন্দি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি আর বৃষ্টির পানি মিলে তৃতীয় দফা সৃষ্টি হওয়া বন্যায় আক্রান্ত ওসমানীগর ও বালাগঞ্জে লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। এক মাস ধরে মানবেতর জীবন করছে পানি বন্দি মানুষ। ত্রাণের জন্য চলছে আহাকার। গতকাল পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়েছে বলে প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। প্লাবিত এলাকায় চরছে হাহাকার। বিষাক্ত প্রাণীর সাপের উপদ্রবও বেড়ে গেছে। টিউবওয়েলগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে নানান ধরনের রোগের। আউস ধান ও ফিসারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে।
ইতিমধ্যে ওসমানীনগর উপজেলায় ৬৪ টন চাল ও নগদ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলায় ৫৩ টন চাল ও নগদ ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা সুত্রে জানা যায়, কুশিয়ারার ডাইক ডুবে গিয়ে বন্যার পানিতে ৫ হাজার পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সংখ্যা হচ্ছে ১৫শ’ পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার বন্যার আচরণ অস্বাবাভিক। এতো দীর্ঘসময় কখনো বন্যা থাকে না। পরিস্থিতি দেখা মনে হচ্ছে বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।



 

Show all comments
  • Tazriya ১৬ জুলাই, ২০১৭, ৪:১৪ এএম says : 0
    আশ্রয় খাদ্য বিশুদ্ধ পানির অভাবে ওইসব এলাকায় হাহাকার দেখা দিচ্ছে কেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • ফোরকান ১৬ জুলাই, ২০১৭, ৪:১৫ এএম says : 0
    সরকারি সহযোগিতা যথেষ্ট নয়, তাই ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ