Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এখনই টিআরএম চালু না হলে ভয়াবহ হবে ভবদহের অবস্থা

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : মাস্টারপ্লান না করে বছরের পর বছর অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লাগামহীন দুর্নীতি, পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির পরামর্শ গ্রহণ না করা, প্রভাবশালীরা নামে বেনামে নামকাওয়াস্তে খনন ও ড্রেজিং দেখিয়ে লুটপাটের কারণে যশোর ও খুলনার দুঃখ হিসেবে চিহ্নিত কপোতাক্ষ নদ ও ভবদহ সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রতি মৌসুমের মতো এবারের বর্ষায়ও প্লাবিত হয়ে বিরাট এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির আশংকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবদহের ভদ্রা, শ্রীনদী ও টেকা নদীতে পানি বেড়েছে। গতকাল (শুক্রবার) যশোরে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ ও আহŸায়ক রনজিত বাওয়ালী জানান, এখনই ভবদহের বিল কপালিয়ায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করা না হলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। আবার কপোতাক্ষ নদের উপচেপড়া পানি লোকালয়ে ঢুকে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ গত দু’দিন কপোতাক্ষ নদে ঝিকরগাছা পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সর্বশেষ শুক্রবার বিকালে পানি প্রবাহ ছিল অপরিবর্তিত। সুত্র জানায়,পাখিমারা বিলে টিআরএম প্রকল্পের কারণে পানি একটু নেমে যাওয়ায় এখনো দুইকুল চাপিয়ে যায়নি। তবে পানির চাপ আরো বাড়লে যে কোন মুহুর্তে উপচে পড়তে পারে। ভবদহ ও কপোতাক্ষ অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয় বর্ষা মৌসুমে। যশোর.খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৭ টি উপজেলা এলাকার প্রায় ২শ’ গ্রামের ৮ লক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়ে পানিবন্দি। এলাকাবাসিদের কথা, ‘দুঃখ গেলো না, স্খায়ী সমাধানের কোন পথ হলো না। বর্ষা জোরে নামলে আমাদের বুক কাঁপে’। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের বক্তব্য, যশোরের ভবদহ ও কপোতাক্ষ নদ সমস্যা বছরের পর বছর সমাধান না হওয়ায় বিরাট এলাকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও জীব-বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটছে মারাত্মকভাবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, কপোতাক্ষ নদ যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর, তালা, কলারোয়া, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ছুঁয়ে সুন্দরবনের শিবসা নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদের প্রায় পুরোটাই তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। যার কারনে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদের দুইপাড়ের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠের ফসল নষ্ট করে। ধ্বংস করে বসতঘর। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছে। ভবদহের আশেপাশের ৩টি নদী ও কপোতাক্ষ নদের পানি সুন্দরবনের শিবসা নদীতে পড়েছে। পানিবদ্ধতার কারণ মুলত এসব নদীর পানি সুন্দরবনের শিবসা নদী দিয়ে সমুদ্রে গড়িয়ে যেতে পারে না। ভবদহ ও কপোতাক্ষের কারণে পানিবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অভয়নগর, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর, তালা, কলারোয়া ও পাইকগাছার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা।
কৃষি ও পানি বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সংগ্রাম কমিটিসহ একাধিক সুত্র জানায়, সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বহুবারই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, উজানে সংযোগ স্থাপন বিশেষ করে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ এবং বিল কপালিয়াসহ অন্যান্য বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্টে (টিআরএম) চালু করে জোয়ার আধার সৃষ্টি এবং শ্রীনদী, হরিহর নদী, টেকা নদী, মুক্তেশ্বরী নদীসহ তলদেশ ভরাট হওয়া নদীর বেড থেকে মাটি কেটে পাড় বাঁধানোর ব্যবস্থা করলে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।একইসাথে কপোতাক্ষ নদ খনন ও ড্রেজিং করলে কপোতাক্ষপাড়ের সমস্যা যাবে। কিন্তু পরামর্শ মোতাবেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না। হয় না ভবদহ ও কপোতাক্ষের ব্যাপারে মাস্টারপ্লান। যার জন্য প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে ঘটে মানবিক বিপর্যয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ