Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গি সন্দেহে ফেরত পাঠানো ২৬ ব্যক্তি প্রসঙ্গ

প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গতকাল বৃহস্পতিবার একটি খবর বাংলাদেশের সবগুলো পত্র-পত্রিকা ফলাও করে প্রকাশ করেছে। ঐ খবরে বলা হয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিঙ্গাপুর সরকার ২৭ জন কট্টরপন্থী বলে কথিত বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে ২৬ জনকে মাসাধিককাল পূর্বে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ১ জনকে গ্রেফতার করে সিঙ্গাপুর জেলে আটক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে কারা হেফাজতে রেখেছে। অবশিষ্ট ১২ জনকে শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদে লিপ্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ২৭ জন সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ইংরেজিতে প্রচারিত ঐ সংবাদ বিজ্ঞপ্তটির বাংলা অর্থ এই দাঁড়ায়, ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র জিহাদী আদর্শের তারা সমর্থক ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মতে, ঐ ২৬ ব্যক্তি আমেরিকান নাগরিক আনোয়ার আল-আওলাকির জিহাদী মনোভাবে বিশ্বাস করতেন এবং আওলাকির লেকচার সম্পর্কে শিক্ষা দান করতেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইয়েমেনে ড্রোন হামলায় আওলাকি নিহত হন। বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ১ মাস পূর্বে যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে তাদের সাথে জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকতেও পারে। সিঙ্গাপুরের দৈনিক ‘স্ট্রেইট টাইমসের’ খবরে প্রকাশ, অনুসন্ধানে  দেখা যায়, ২৭ জন বাংলাদেশীর এই গ্রুপ ২০১৩ সাল থেকে নিজেদের মধ্যে সভা করছিল। তারা আল-কায়েদা এবং ইসলামী স্টেটের জিহাদী আদর্শ সমর্থন করে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা বিদেশে সশস্ত্র জিহাদে অংশ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিল। তবে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরে এই ধরনের কোনো সশস্ত্র তৎপরতার পরিকল্পনা তাদের ছিল না। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চ (ডিবি)র সাথে একটি ইংরেজি পত্রিকা যোগাযোগ করলে ডিবি’র একজন অফিসার বলেন, এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের হাতে কোনো দলিলপত্র বা কোনো প্রমাণ নেই। তিনি আরো বলেন, এই এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের সাথে কোনো গোয়েন্দা তথ্য বা প্রমাণ শেয়ার করেনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন যে, সিঙ্গাপুরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তারা আহ্লে হাদিসের অনুসারী। তারা জনগণের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিত। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঐ অফিসার বলেন, সিঙ্গাপুরে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা বা সন্ত্রাসের কোনো অভিযোগ নেই। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের কতিপয় ইসলামী গ্রুপ ও নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশীদের ক্ষোভ ছিল।  
এই ১৪ জনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে সে সব অভিযোগ কতটুকু সত্য সেটি এখনো নির্ণীত হয়নি। সংবাদপত্রের পাতায় যাদের ছবি ছাপা হয়েছে তাদের সকলেরই দাড়ি রয়েছে। শশ্রু-গুম্ফ ম-িত এবং নামাজি হলেই জঙ্গি হবে, এই ধারণা ঠিক নয়। বলা হয়েছে, তারা আইএস বা আল-কায়েদার সমর্থক। সমর্থক হওয়া আর জঙ্গি হওয়া এক কথা নয়। আমরা নিত্যকার বৈঠকি গল্পে অথবা টেলিফোনে যখন বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে রাজনীতির চর্চা নিয়ে মেতে উঠি তখন কোনো দলকে সমর্থন করি বা কোনো দলের বিরোধিতা করি। তেমনি আল-কায়েদা, আইএস, তালেবান প্রভৃতি গ্রুপকে নিয়ে যখন কোনো আলোচনা হয় তখনো সেখানে মতামত দ্বিধা বা ত্রিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। যারা ঐ বৈঠকি গল্পে বা টেলিফোন সংলাপে ঐসব গ্রুপকে সমর্থন দেয় তারা কি সাথে সাথেই আল-কায়েদা বা ্আইএস হয়ে গেলো? কারণ ঐ বৈঠকি আড্ডার পর সব কিছুই শেষ হয়ে যায়। সিঙ্গাপুরে ঐ ২৭ জনের গ্রেফতার নিয়ে সিঙ্গাপুর বা বাংলাদেশে যা ঘটলো সেটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি ভুল বার্তা দিলো। এর ফলে বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হলো। পৃথিবীজুড়ে এখন ১ কোটি বাংলাদেশী প্রবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে হাজার হাজার নয়, কয়েক লাখ বাংলাদেশীর দাড়ি-টুপি রয়েছে। এখন তাদের কাউকে কি জঙ্গি হিসেবে সন্দেহের তালিকায় আনা হবে? সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। অনেক বাংলাদেশী সে দেশের আইন মেনে সেখানে কাজ করছে এবং সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিঙ্গাপুরের প্রধান দৈনিক পত্রিকা স্ট্রেইট টাইমসের রির্পোটেই বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তো দূরের কথা, কোনো বাংলাদেশীর বিরুদ্ধেই অতীতে কোনো দিন কোনো ক্রিমিনাল অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এই ২৭ জনের ব্যাপারে এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
অভিযোগটি গুরুতর, অথচ পারিপার্শ্বিক অবস্থা এখনো অভিযোগ প্রতিষ্ঠার সপক্ষে নেই। সেই কারণেই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে বিষয়টি সিঙ্গাপুর সরকারের সাথে উত্থাপন করা। এই বিষয়টি সিঙ্গাপুর সরকারের সাথে ভালো করে যাচাই-বাচাই করে নিতে হবে যে অভিযোগের সপক্ষে সিঙ্গাপুর সরকারের নিকট কতটুকু দালিলিক প্রমাণ বা অন্যান্য কাগজপত্র আছে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, ২৬ জনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২ জনকে ইতোমধ্যেই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সপক্ষে কোনো রকম সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট যে ১৪ জন রইল তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করতে হবে কোনোরূপ পূর্ব ধারণার বশবর্তী হয়ে নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি সন্দেহে ফেরত পাঠানো ২৬ ব্যক্তি প্রসঙ্গ
আরও পড়ুন