পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বর্তমানে একটি দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এপ্রিল- মে মাসে হাওরাঞ্চলে আকষ্মিক বন্যায় ফসলহানি এবং মাছের মড়কের পর থেকেই পর্যায়ক্রমে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে জটিল আকার ধারণ করছে। বন্যা উপদ্রæত এলাকায় লাখ লাখ পারিবার খাদ্যের সংকটে পড়েছে। সেখানে সরকারী ত্রান তৎপরতা খৃবই অপ্রতুল। অন্যদিকে ফসলহানি ও বন্যার কারনে চালের বাজারের কথিত সিন্ডিকেট অব্যাহকভাবেই চালের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। গত দুই মাসে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে দেশে কোন খাদ্যের সংকট নেই, ঘাটতি নেই বলে আশ্বস্ত করা হলেও এখন বিপরীত চিত্র বেরিয়ে আসছে। গতমাসের শুরুতে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে জানা যায়, দেশের সরকারী খাদ্য গুদামগুলোতে চালের মজুদের পরিমান ২ লাখ টনেরও কম। এ থেকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে বিক্রির জন্য একলাখ টন চাল ছাড়ের পর সরকারী গুদামগুলোতে খাদ্য মজুদের পরিমান একলাখ টনের নিচে নেমে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। এখন দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির প্রেক্ষাপটে খাদ্য মজুদের এই চিত্র একটি বড় ধরণের ঝুঁকি ও আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি খাদ্য মজুদ ও ত্রান ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যে সব কথা বার্তা বলেছেন তা’ এখন ফাঁকা বুলি বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে।
বছরের শুরু থেকেই দেশে চালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্যগুদামগুলোতে চালের অপর্যাপ্ত মজুদ এবং নানা কারনে ধান-চালের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ব্যহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে আগাম সর্তকতা উচ্চারিত হয়েছিল। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে দেশে কোটি টন খাদ্য মজুদের কথা বলা হলেও এখন দেশব্যাপী বন্যায় লাখ লাখ দুর্গত মানুষের কাছে বেঁচে থাকার ন্যুনতম অবলম্বন হিসেবে জরুরী খাদ্য সহায়তা পৌছে দিতে পারছেনা সরকার। কৃষকের গোলায়, মিল মালিকদের কাছে অথবা আড়তদার ও আমদানীকারকদের হাতে হয়তো লাখ লাখ টন খাদ্যের মজুদ আছে, কিন্তু জাতীয় দুর্যোগে সরকারী গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য মুজদ না থাকলে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জীবন বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে বাধ্য। দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত আশঙ্কাকে কোন পাত্তা না দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা ছিলেন কুম্ভকর্ণের ভ’মিকায়। এখন বন্যাপরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উপদ্রæত মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণ এবং অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি তো কোন গণক নন যে, তিনি আগেই জানবেন দেশ আকষ্মিক বন্যার শিকার হবে। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারী থেকেই বিভিন্ন নীতি নির্ধারনী থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং গণমাধ্যমের তরফ থেকে তলানিতে থাকা খাদ্য মুজদ সম্পর্কে সতর্ক বাণী ও আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও খাদ্যমন্ত্রীর ঘুম ভাঙ্গেনি। এ সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে দেশের ১৩ জেলার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষের ত্রানের হাহাকার আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
খাদ্যনিরাপত্তা যে কোন দেশের জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সরকার গত কয়েক বছর ধরে দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত করার কৃতিত্ব প্রচার করছে। কিন্তু দেশে যদি বিনিয়োগ না হয়, লাখ লাখ সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান না থাকে, উপরন্তু আকষ্মিক ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কোটি মানুষকে পানিবন্দি হয়ে পড়তে হয়, এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কোন পূর্বপ্রস্তুতি বা পরিকল্পনা না থাকে, তা হলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের দায় নিশ্চয়ই সরকারকেই গ্রহন করতে হবে। অবনতিশীল বন্যা পরিস্থিতিতে সাড়ে ৬লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৩রা জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০০ শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন। একদিকে তিনি বলছেন ত্রানের কোন অভাব নেই, অন্যদিকে ত্রানবঞ্চিত লাখ লাখ নিরন্ন, পানিবন্দি মানুষের হাহাকারের চিত্র উঠে আসছে। যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের কোটি মানুষ বন্যা ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুকির সম্মুখীন সেখানে মাত্র দু’ চার হাজার টন খাদ্য সহায়তা দিয়েই ত্রান মন্ত্রনালয় তাদের দায়িত্ব সারছে। আর খাদ্যমন্ত্রী এখনো প্রকারান্তরে প্রকৃতির উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য নেই, ত্বরিৎ উদ্যোগে ঘাটতি পুরনের কোন কার্যকর পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছেনা। লাখ লাখ পানিবন্ধি মানুষের ত্রান সহায়তা নিশ্চিত করার বিষয়টি যেন সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে গৌণ বিষয়। খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে ইতিমধ্যে আমদানী শুল্ক হ্রাস করা হলেও খাদ্যের মূল্য কমেছে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলা ও ব্যর্থতা এখন প্রমানীত। একদিকে মওসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনার সরকারী উদ্যোগে নানা ধরনের অনিয়ম-অস্ব^চ্ছতা, অন্যদিকে খাদ্য ঘাটতি পুরনে যথাসময়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলেই এখন সরকারী গুদামে খাদ্য মজুদ তলানিতে বা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। অনেক দেরিতে এবং বাড়তি মূল্যে চাল আমদানীর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে বেসরকারী উদ্যোগে চাল আমদানী ও মূল্য কারসাজির মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। খাদ্যমূল্য সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজদের হাতে ছেড়ে দিয়ে এবং আপদকালীন খাদ্য নিরাপত্তা অরক্ষিত রেখে দেশের কোটি কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়ার পেছনে যাদের গাফিলতি বা ব্যর্থতা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টির গুরুত্ব যথোচিতভাবে অনুধাবন করে সংসদে ও মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে আলোচনার পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতিকে জাতীয় দুৃর্যোগ হিসেবে গণ্য করে কিভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায় তা নির্ধারণ করা জরুরী। এই সঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।