Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার অবনতি ও বিস্তার

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার অনেক পয়েণ্টে পানি বিপদসীমার ওপরে : বাড়ছে গঙ্গা-পদ্মায়ও : ভারতে অতিবৃষ্টি ঢল-বান অব্যাহত থাকার সতর্কতা, খুলছে বাঁধের আরো গেট : ২০০৭ সালের বন্যার সীমা ছাড়িয়েছে যমুনা : বন্যা বিস্তৃত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমে
ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির সাথে সাথে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সে সাথে পূর্বাঞ্চলে বাড়ছে পাহাড়ধসের আশঙ্কা। পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাদ্য ও খাবার পানি সঙ্কটে পড়েছে। অনেক এলাকায় ত্রাণসাহায্য পৌঁছেনি। গবাদী পশুগুলোর অবস্থা আরো করুণ। মানুষ যেখানে নিজেদের খাদ্য-পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না, সেখানে গবাদী পশুর দিকে খেয়াল দেবার অবকাশ নেই। উত্তরের জনপদের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা-যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপরদিয়ে বইছে। কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তিস্তায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে এবং দুর্ভোগে পড়েছে পানি বন্দী ২ লক্ষাধিক মানুষ। বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত আছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৫৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় বাড়ছে পানিপ্রবাহ। দেশে বন্যার সার্বিক বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট:
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, দেশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকেই মোড় নিয়েছে। বিস্তৃতও হচ্ছে বন্যার পরিধি। গতকাল (বুধবার) সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ও পূর্বাভাসের নিরিখে প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বৃদ্ধি আরও অন্তত দুই থেকে চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মায় অববাহিকায়ও পানি ক্রমাগত বাড়ছে। উভয় অববাহিকার উজানভাগ চীন তিব্বত হিমালয় পাদদেশসহ ভারতে বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ু জোরালো রয়েছে। অতিবর্ষণ ঢল-বান অব্যাহত থাকায় আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম, সিকিমসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে সতর্কাবস্থা বজায় রেখেছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ, পানিসম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। ঢলের চাপ আরও বাড়লে ভারত উজানভাগে যখন-তখন খুলে দিতে পারে নদ-নদীর বাঁধগুলোর আরো স্পিলওয়ে ও গেট। এ অবস্থায় নদীমালার উৎসের অববাহিকা এলাকাগুলো আরও ফুলে-ফুঁসে উঠছে। এতে করে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির শোচনীয় অবনতি ঘটতে পারে। গতকাল যমুনা নদের পানি বিপদসীমার উপরে আরও বেড়ে গিয়ে বিগত ২০০৭ সালের বন্যাকালীন সর্বোচ্চ সীমারেখা অর্থাৎ ১০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে গেছে। বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, উত্তর জনপদের তিস্তা বা অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে-নীচে থাকা না থাকার উপর সার্বিক বন্যায় তেমন প্রভাব পড়েনা। এক্ষেত্রে মুখ্য হচ্ছে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা এই তিনটি মূল অববাহিকার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি। গজলডোবা ব্যারেজে পানি বৃদ্ধি পেলে ভারত তিস্তা ও তার সাথে যুক্ত নদী-খালগুলোর বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়। তখন ভাটিতে উত্তর জনপদে বিশেষত বর্ষায় হঠাৎ পানি বেড়ে যেতে পারে। আবার কমতেও পারে। যা গত ৪৮ ঘন্টায় হয়েছে।
অন্যদিকে উত্তরের পানি তীব্র বেগে মধ্যাঞ্চলের আরও এলাকা করছে প্লাবিত। টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে আরো বেড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার উজানের পানি ভাটির দিকে নামার চাপ বেড়ে গেছে। এরফলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও বন্যার বিস্তৃতি ঘটছে। গতকাল খুলনায় পশুর নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। যশোরে কপোতাক্ষ নদ বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে, অতিক্রম হতে পারে যে কোন সময়েই। এ পরিস্থিতিতে দেশের মোট ৯টি নদী ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা কবলিত অবস্থায় আছে ৬টি বিভাগের ১৫টি জেলা। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও বন্যার ঝুঁকিতে আছে অনেক এলাকা। ঢল-বানের পানি নামার গতি তীব্রতর হতে থাকায় আরিচা, গোয়ালন্দসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মা-যমুনা-মেঘনার ভাটিতে নৌ চলাচলের চ্যানেলগুলোতে বিপজ্জনক স্রোত ও ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি ও নৌযান চলাচলের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। মেঘনা অববাহিকায় বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা উভয় নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধিতে এখনো তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো নাজুক অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নদ-নদীর সর্বশেষ প্রবাহ মূল্যায়ন এবং এ মুহূর্তের করণীয় নির্ধারণের জন্য গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতেও বন্যার ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি ফুটে উঠে এবং বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০০৭ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার তুলনা
গতকাল পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সূত্র চলমান বন্যার গতি-প্রকৃতিকে বিগত ২০০৭ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার সাথে কম-বেশী তুলনীয় বলে অভিমত দিয়েছেন। আর ২০০৭ সালে সংঘটিত বন্যাকালীন পানি প্রবাহের সীমারেখাকে দশ বছরের ব্যবধানে ছাড়িয়ে গেছে যমুনা নদ। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যমুনা জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২০০৭ সালের বন্যার সময় উক্ত পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমার ৭০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ এবার বেড়েছে ১১ সেমি। এমনকি বিগত ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার রেকর্ডের কাছাকাছি রয়েছে। তখন যমুনার সর্বোচ্চ প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৮৭ সেমি উপরে, অর্থাৎ বর্তমান মুহূর্তের চেয়ে মাত্র ৬ সেমি নীচে। ৯৮ সালের রেকর্ডও ছুঁইছুঁই করছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
তাছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির প্রবণতাও বেশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি ২০০৭ সালের বন্যায় কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে সর্বোচ্চ বিপদসীমার উপরে ছিল ৮১ সেমি এবং ১৯৯৮ সালের বন্যায় ৭৭ সেমি। গতকাল পর্যন্ত সেখানে নদ বিপদসীমার ৩৬ সেমি উপরে ছিল। উপরোক্ত দুই ভয়াল বন্যার বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৪৫ ও ৪১ সেমি নীচে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ প্রান্তে পদ্মায় এবং এর সাথে সংযুক্ত শাখা ও উপনদীগুলো ক্রমাগত ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। কোথাও কোথাও বিপদসীমার নীচে কাছাকাছি চলে আসছে। বিশেষজ্ঞমহল সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে পদ্মা বিপদসীমার নীচে থাকলেও দেশে ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয়। তখন রাজশাহীতে পদ্মা নদী বিপদসীমার ৭০ সেমি নীচে ছিল। তবে ১৯৯৮ সালের আরও ভয়াবহ বন্যায় পদ্মা বিপদসীমার ১৬৮ সেমি উপরে উঠে যায়। তবে এখন পর্যন্ত পদ্মায় পানি বাড়লেও তা বিপদসীমারেখার (রাজশাহীতে) অনেক নীচে রয়েছে।
বর্ষণ ও নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ইনকিলাবকে জানান, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দু’তিন দিন পানি বৃদ্ধির আলামত রয়েছে। উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষত আসাম ও আশপাশ অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। তা আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে অরুণাচলে বর্ষণের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। তারা জানান, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে আরও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃদ্ধি পেতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও হ্রাস পেতে পারে। উত্তরের যমুনা-ব্রহ্মপুত্র এবং সিলেটের সুরমা কুমিয়ারা ছাড়াও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রামে ধরলা, গাইবান্ধায় ঘাগট, টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাটে ধলেশ্বরী, নেত্রকোনায় কংস নদী এবং গতকাল যুক্ত হওয়া খুলনায় রূপসা নদী (বিপদসীমার ৫ সেমি উপরে)। সিলেটের দু’টি ছাড়া উপরোক্ত সবক’টি নদীর গতিই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। নদ-নদীগুলো ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৬৩টিতে। পানির সমতল অপরিবর্তিত আছে ৩টি পয়েন্টে। হ্রাস পায় ২০টিতে। তিস্তা নদী নীলফামারী জেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার নীচে নামলেও মাত্র ১৮ সেমি ব্যবধানে রয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৬ সেমি নীচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। খুলনায় রূপসা নদী ছিল বিপদসীমার ৫ সেমি উপরে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, আরো এক সপ্তাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল, সিকিমে অতি বর্ষণ হতে পারে। বর্ষরোহী মৌসুমি বায়ুমালার একটি বলয় তৈরি হয়ে আছে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর-প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত। এদিকে বাংলাদেশেও আগামী সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু অধিকতর সক্রিয় হয়ে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। অনেক জায়গায় হতে পারে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ। এতে করে নদ-নদীর অববাহিকায় ভাটিতে পানি বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান,ভারি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করলেও এখন তা কমতে শুরু করেছে। ফলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেলেও দু’টি নদ-নদী এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে ব্যাপক হারে নদী ভাঙ্গন। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিকের (৫২.৪০ সেঃমিঃ) চেয়ে ১৩ সেঃ মিঃ নিচে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে পানি প্রবাহ কয়েক দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছিল। গত তিন দিন এক টানা বিপদ সীমা অতিক্রম করে তিস্তায় পানি প্রবাহের ফলে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ২২ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে। পানি বন্দি এসব পরিবার কেউ উচু রাস্তা, অনেকে বাঁধের উপর, আবার কেউ কেউ খাটের উপর খাট বসিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদ সীমার নিচে নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। বাড়ি ঘর থেকে নেমে যেতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তিস্তা ও ধরলার পানি কমতে শুরু করলেও এখন দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। এরই মধ্যে জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বসত বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্টান, পুরাতন গাছ-পালাসহ বাঁশঝাড় নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। তবে সরকারী ভাবে নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যা কবলিত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারী ভাবে ত্রাণ বিতরন করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যান্তই কম বলে অভিযোগ বন্যা কবলিত মানুষের।
তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে কমতে শুরু করে তিস্তার পানি প্রবাহ। বুধবার সকাল ৭টায় বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ও সকাল ১১টায় আরো কমে গিয়ে বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মোঃ আলাউদ্দিন খাঁন জানান, নদী ভাঙ্গন পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য জিআর ১৭৫ মেঃটন চাল ও সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় পানি বন্দিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা।
চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী, রাজিবপুরসহ জেলার ৭ উপজেলার ৪০ ইউনিয়নের ৪শ ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩৭ হাজার পরিবারের প্রায় ২ লাখ মানুষ। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ১শ ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গত ৬ দিন ধরে পানিবন্দী পরিবার গুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও হাতে কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছে। সরকারী ভাবে সামান্য ত্রান তৎপরতা শুরু হলেও অনেকের ভাগ্যে জুটছে না।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, এ পর্যন্ত মাত্র ৪ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি যা মাত্র ৪শ পরিবারের মধ্যে বিতরন করা সম্ভব। অথচ আমার ইউনিয়নে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার মানুষ। এসব চাল নিয়ে চরে যাচ্ছি বিতরন করতে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, বন্যার্তদের জন্য ২শ ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলার ৯ উপজেলায় ৭শ ৭১ হেক্টর জমির আউশ ধান, সবজি, বীজতলা, আখ ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি।
এদিকে কুড়িগ্রামসদর ও চিলমারীতেবন্যারপানিতেডুবেবুধবার দু’জনেরমৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রামসিভিলসার্জনঅফিসের কন্ট্রোলরুমের দায়িত্ব প্রাপ্তকর্মকর্তাআখেরআলী এ তথ্য নিশ্চিতকরেছেন।
জানাযায়,চিলমারীউপজেলারশাখাহাতিগ্রামেসাইদুররহমানের স্ত্রী লাইলী (২২) বুধবারসকালেবাড়িরপাশেবন্যারপানিতেডুবেমারাযায়। এছাড়াকুড়িগ্রামসদও উপজেলারহলোখানাইউনিয়নেরখামারহলোখানাগ্রামেরপনিরউদ্দিনের ছেলেহামিদুলহক (১৭) বন্যারপানিতেডুবেমারাযায়। সে দর্জি দোকানেরকর্মচারি। দুপুরে বাড়ি থেকে মাষ্টারেরহাটে দোকানেআসারসময়জলমগ্নরাস্তা পার হবার সময় গর্তে পড়েতারমৃত্যু হয়।
গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গত ১২ ঘন্টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৫৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি বিপদ সিমার ৩১সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী।
এছাড়া জেলার ৭৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী প্রতিরক্ষা মুলক কাজ করছে।
বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দীতার কারণে অনেক পরিবার তাদের সহায়সম্পদ নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত জেলার বন্যার্তদের জন্য জরুরী ভাবে ২শ’ মে. টন চাল ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোলারচর ও কামারজানিতে ৫’শ পরিবার এবং সাঘাটা উপজেলার গটিয়া ও হলদিয়া ইউনিয়নে ১ হাজার পরিবারের মাঝে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান,বগুড়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরো ২০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানি উঠায় নদী এলাকার মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্কুলে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসিরা। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গতকাল বুধবার যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৫৪ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, বয়রাকান্দি, চন্দনবাইশা এবং কামালপুর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এসব ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামে নতুন করে পাøাবিত হয়েছে। ঘরে ঘরে পানি উঠায় বানভাসিরা নিজের জায়গা জমি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া স্থানে গৃহপালিত পশু ও পরিবারের সদস্যরা একস্থানে দিনাতিপাত করছে। অনেকবানভাসি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি, বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগতি দেওয়া হলেও বানভাসিরা বলছে চাহিদামত তারা ত্রাণ পাচ্ছে না।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর গতকাল বুধবার পানি কমার আশা করা হলেও উজানে ভারি বর্ষণের কারণে আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙ্গন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও টাঙ্গাইলে এবার যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙ্গন অতীত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী রুপ নিয়েছে খরা স্রোতে। স্রোতের সাথে সাথে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেরই বসতভিটা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিস্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। সাধারণ মানুষ রয়েছে আতংকে কখন যেন শেষ সম্বলটুকুও চলে যায় নদী গর্ভে। দিন যাপন করছে চরম আতংকে।
যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলায় ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। ইতিমধ্যেই গত কয়েকদিনে নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া গ্রামের সাধনা একাডেমিক হাইস্কুল, শতবছরের পুরোনো আগদিঘুলীয় বাজার, কালিমন্দির, শ্বশানঘাটসহ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরমভাবে বিপাকে। আর এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে জেলার নদীর পারের এলাকাগুলো বিলীন হয়ে যাবে অচীরেই। অপরদিকে ভাঙ্গনের কারনে হুমকির মুখে রয়েছে আবাদি জমি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান কেন্দ্র, বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, নন্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোষ্ট অফিস, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ভিটা।
আগদিঘুলিয়া গ্রামের মোঃ আতাউর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, নদীগর্ভে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় তিনি এখন প্রায় নিস্ব। বার বার স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে এ ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং উল্টো কথা শুনিয়ে দিয়েছেন সংসদ সদস্য। তিনি নাকি বলেছেন এটা তার একতিয়ারের বাইরে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, ভাঙ্গনরোধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেওয়া হবে।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, গত কয়েক দিন সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি কছুটা কমলেও গত শনিবার থেকে সুরমা কুশিয়ারা পানি বাড়তে থাকে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। গতকালও কুশিয়ারা-সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিলো। এই দুই নদীর তিন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট সদরে কিছুটা কমলেও আগের মতই রয়েছে পরিস্থিতি। এদিকে,বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই বৃষ্টি হচ্ছে, তার ওপর ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে। এতে বন্যা কয়েকদিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েক দিন ধরে জেলার ৮টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা ৮টি হচ্ছে-জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, কানাইঘাটের একাংশ, বিশ্বনাথ ও কোম্পানীগঞ্জ। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১১টি আশ্যয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৩৯ জন বন্যার্ত লোক আশ্রয় নিয়েছেন। ওইসব উপজেলায় মোট ৫৬ টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১ টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দু’শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এ পর্যন্ত হয়েছে ২৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবারও।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান,অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে দেশের অন্যান্য নদীর মতোই চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমার নীচ দিয়েই পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পদ্মা-মেঘনার পাশাপাশি ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী পানিতে টুইটুম্বর। অধিক বৃষ্টিপাতে শহর ও গ্রামের নিন্মাঞ্চলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা-মেঘনায় অধিকহারে পানি প্রবাহে ৩টি উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দ্রুত পানি নেমে না যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘœ হচ্ছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমার .৮৭সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। পাউবোর কর্মকতারা জানিয়েছেন,ধীরে ধীরে পদ্মা-মেঘনায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের ধারণা উজানের প্রায় ৬০ভাগ পানি চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। এ কারনে উজানে থেকে ধেয়ে আসা পানির প্রবাহেই চাঁদপুরে বন্যা এবং শহররক্ষা বাঁধ ঝুকিপূর্ণ হয়।



 

Show all comments
  • Sardar Nazim Uddin ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১:৩৪ এএম says : 0
    হে আল্লাহ পাক, আমাদের দেশের গরিব জনগণকে এই বিপদ থেকে রক্কা করো... সরকারকে তৎপর হতে হবে...
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ১৩ জুলাই, ২০১৭, ৫:০৭ এএম says : 0
    আসুন আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াই।
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক ১৩ জুলাই, ২০১৭, ৫:০৯ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ১৩ জুলাই, ২০১৭, ৩:১১ পিএম says : 0
    এভাবে চললে আবার মানুষকে অনাহারে মরতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ