পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : দেশে ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০টিতে এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, ঘাঘট, ধলেশ্বরী, ধরলা, কংসসহ বিভিন্ন নদনদীর ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও উজানের অতি বৃষ্টি শঙ্কার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। অবিরাম বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন জেলা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ। আরো ভয়াবহ বন্যার আশঙ্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষের মাঝে রয়েছে পাহাড়ধস ও নদীভাঙন আতঙ্ক। বিশুদ্ধ খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের পাশাপাশি রয়েছে অপ্রতুল ত্রাণের অভিযোগ। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সঙ্গী হয়ে অবস্থান করছে গবাদি পশু। বন্যা ও ভাঙনের ফলে বাস্তুচ্যূত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন জেলায় সাড়ে চার হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কৃষকদের কপাল পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বন্যাকবলিত এলাকায় বন্ধ রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে সাপ ও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপদ্রব। এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে তৈরি রিপোর্ট :
শফিউল আলম চট্রগ্রাম থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পাশাপশি পানি বাড়ছে গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায়। এবার আগাম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে এখন আরও জোরালো। উজানে চীন তিব্বত হিমালয় পাদদেশ হয়ে ভারত অবধি অতিবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়েছে। বর্ষা হতে পারে দীর্ঘায়িত। পানির চাপ কমাতে গজলডোবায় তিস্তাসহ ভারতের উজানভাগে সবকটি নদ-নদীর বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভারত পদ্মার উজানে গঙ্গায় ফারাক্কার বাঁধের স্পিলওয়ে ও গেটগুলো খুলে দিতে পারে। এ অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-তিস্তা পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত থাকাবস্থায়ই একসাথে গঙ্গা-পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধি এবং উজানে ভারী বর্ষণকে এই মুহূর্তে শঙ্কার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞমহল। কেননা এতে করে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াল অবনতির আশঙ্কা করছেন তারা। গতকাল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞমহল এই উদ্বেগ-শঙ্কা ব্যক্ত করেন। এদিকে নদ-নদী অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশে ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৭০টিতে। তবে সোমবার ছিল ৫৫টি, রোববার ৫১টি ও শনিবার ৪৯টি পয়েন্টে। বিপদসীমার উপরে প্রবাহও আরো বেড়ে হয়েছে ৭টি স্থানে। যা চলমান বন্যার নাজুক অবনতির সূচক বহন করছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ আরও অন্তত এক সপ্তাহজুড়ে আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশসহ দেশটির উত্তর-পূর্ব জোনে ভারীবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। বর্ষরোহী মৌসুমি বায়ুর একটি বলয় ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর-প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। দেশের নদ-নদী বিশেষজ্ঞরা সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং পদ্মা-গঙ্গা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি একযোগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি আগামী দু’তিন দিনেও অব্যাহত থাকবে। আর গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায়ও নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি আগামী দু’তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে উজানের ঢল-বানের তোড়।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ বছর চীন, ভারত ও বাংলাদেশে আগেভাগে ‘বর্ষাকাল’ শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় উজানের ঢল ও বন্যার চাপ। মৌসুমি বায়ু সমানতালে সক্রিয় থাকায় বর্ষার ঘনঘটা এখনও জোরালো রয়েছে। আগাম এ বর্ষা যদি চলতি জুলাই মাসের শেষ অবধি এমনকি আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার পাশাপাশি একযোগে গঙ্গা-পদ্মাসহ এর উপ কিংবা শাখা নদীগুলো ফুলে-ফুঁসে উঠতে পারে। বৃহত্তর সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলেও বন্যা আরো বিস্তৃত হতে পারে। এতে করে বন্যা ভয়াল রূপে মোড় নিতে পারে। গত দশ বছরের মধ্যে দেশে ব্যাপক বন্যা হয়নি। ২০০৭ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার বৈশিষ্ট্যের সাথে এবারের বন্যার গতি-প্রকৃতির উপরোক্ত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি মৌসুমি বায়ুর চলমান ঘোর বর্ষার মতিগতি বন্যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।
জলবায়ু-পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আখতার মল্লিক গতকাল ইনকিলাবকে জানান, মৌসুমি বায়ু আগাম সক্রিয় হওয়ায় এ বছর বর্ষার আগমনও হয় তাড়াতাড়ি। বৃষ্টিপাতও হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিহারে। বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর উজানভাগে ভারী বর্ষণ হয়ে আসছে। এরফলে অববাহিকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) পানির প্রবাহ ও ঢলের চাপ বেড়ে গেছে। এতে করে বন্যার আরো অবনতি ঘটতে পারে। বন্যা দীর্ঘায়িত, বিস্তৃতও হতে পারে। সরকারকে প্রথম থেকেই সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। কোন এলাকায় বন্যা এসে গেলে তখন তা হ্যান্ডেল করা কঠিন। এজন্য আগেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।
এদিকে গতকাল সর্বশেষ তথ্য-পরিসংখ্যান ও বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহ আরও বেড়ে গেছে। গঙ্গা-পদ্মার ভাটির দিকে বিভিন্ন পয়েন্টে দিন দিন পানি বেড়েই চলেছে। যদিও তা এখনও বিপদসীমার নীচে রয়েছে। কোথাও কোথাও কাছাকাছির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সামান্য কমলেও তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। পানি হঠাৎ আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল সর্ব-উত্তর জনপদের কুড়িগ্রামের ধরলা নদী।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল ৯টি নদ-নদী ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছিল। ১১টি জেলা রয়েছে বন্যাকবলিত। ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৭০টিতে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহ গতকাল ১৩টি পয়েন্টে, সোমবার ১২টি, গত শনি ও রোববার ছিল ৯টিতে। পানির সমতল অপরিবর্তিত আছে ৩টি পয়েন্টে। হ্রাস পায় ১১টিতে।
গতকাল যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। তিস্তায় পানি বিপদসীমার উপরে কিছুটা কমেছে। মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীসমূহে পানির অব্যাহত বৃদ্ধির মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এই অববাহিকায় পদ্মা নদী গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গঙ্গা-পদ্মার ভাটির দিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদ-নদী, শাখা-উপনদীতে ঘূর্ণি স্রোত, ভাঙনও দেখা দিয়েছে। এতে করে ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ফেরী ও নৌ চলাচল। দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোরের ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদ এবং খুলনায় পশুর নদীর পানি অবিরাম বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি নীচে রয়েছে। আবার ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় কংস নদীর পানি বিপদসীমার উপরে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আসামের লুসাই পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বর্ষণের কারণে উজানের ঢল নামতে থাকায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদী খর স্রোতা কর্ণফুলীর পানি বিপদসীমার নীচে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চকরিয়ায় পাহাড় ধসে ১১ বসতঘর নদীতে বিলীন
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার তান্ডবে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙগন ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এতে কোন কোন স্থানে ঘর বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীতে। আবার পাহাড় ধসে ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।
চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ছোট ভেওলাস্থ মাতামুহুরী নদীর লোপ কাটিং এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ওইসময় পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদীর পানির প্রবল ধাক্কায় ওই এলাকার পাহাড়ে অবস্থিত ১১টি বসতঘর মুর্হতে নদীতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবার খোলা আকাশের নীচে পলিথিনের তাবু টাঙ্গিয়ে তাতে দিন কাটাচ্ছে।ক্ষতিগ্রস্থ ১১টি পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ গবাদী পশুর সাথে বাঁধে আশ্রিত মানুষের বসবাস
মহসিন রাজু বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। ২৪ ঘন্টায় ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল দুপুরে যমুনার পানি বিপদ সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে।
যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। বন্যার্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সুপেয় পানির জন্য নলকূপ ও ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে।
বন্যার কারণে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার গোপাল চন্দ্র জানান, বন্যায় পানি প্রবেশ করায় ৮২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোকে তাদের গবাদি পশু নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করতে দেখা গেছে। উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, হাটশেরপুর ও সারিয়াকান্দি এ ১৫টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের একলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
জেলা ত্রান কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মোঃ আবু হেনা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৪ ইউনিয়নের ৭৫ গ্রামের ১৩,২২২ পরিবার। সারিয়াকান্দি আশ্রয়প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে ৭৬৫ পরিবার। বাঁধের উপর ৩৩৫৫ পরিবার ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, পাট, ধান, সবজী ও বীজতলাসহ ৩ হাজার ৮শ ৭৭ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে। গোটা জেলায় ১ হাজার ৩ শ’ ৬৭ হেক্টর জমির আউশ, ২ হাজার ৪ শ’ ৪০ হেক্টর জমির পাট, ৩০ হেক্টর বীজতলা, ৪০ হেক্টর সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৮৫ টি পুকুর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বৃষ্টির সৃষ্টিতে অসহায় সিলেটের কোটি মানুষ
ফয়সাল আমীন সিরে থেকে জানান, সিলেটের আটটটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন চার দিন বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টি হওয়াতে সিলেটের কোটি মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টি হওয়াতে কেউ ঘর-বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ যেতে সমস্যা হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সর্বস্থরের লোকজন।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকা করা হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকার পানি নেমে গেলেও অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে সুরমা ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে বন্যা কবলিত উঁচু এলাকার পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের পানি নামছে ধীরে ধীরে। ফলে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছেনা দুর্গত মানুষদের। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বেশ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশের প্রতিটি নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. সাহিদ আহমদ চৌধুরী জানান, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। তাই এ সময় বৃষ্টিপাত সিলেটে একটু বেশি বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে সাপ ও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপদ্রব। সাপের কামড়ে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বন জঙ্গল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব প্রাণী আশ্রয় নিতে লোকালয়ে চলে এসেছে। তাছাড়া রাস্তা-ঘাটে, বসত ঘরে কিংবা বাড়ির ঝোঁপঝাড়ে সাপের দেখা মিলছে বলেও জানান তিনি। একই ভাবে বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগরের বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রবের খবর স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপরে
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, উজানের ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্ট বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে নদীর তীরবর্তি নীলফামারী দু’টি উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রামের ১০ সহস্রাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আরো পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উচু জায়গা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। টানা ৫দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকা গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও তাদের হাতে কোন কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের শেফালী বেগম জানান,। দুইটা বাচ্চা নিয়া সারাদিন মানুষের নৌকায় নৌকায় ঘুরছি। সারাদিন রান্নাও হয় নাই, খাইও নাই। মেম্বার চেয়ারম্যান কোন রিফিলও দেয় নাই। জেলা ত্রাণ শাখা সুত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২শ ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এই বিপুল সংখ্যক বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তা অপ্রতুল। এদিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে বন্যার পানিতে জেলায় ৭শ ৭১ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ৭৪ হেক্টর, বীজতলা ১শ ১৩ হেক্টর, সবজি ৩শ ৪৪ হেক্টর, পাট ২শ হেক্টর এবং আখ ৪২ হেক্টর।
সুন্দরগঞ্জের ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ৩০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে তিস্তার পানি পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জনানা, তিস্তার পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উঁচু স্থান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরি বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও গবাদি পশু হাস-মুরগী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। এদিকে পানিবন্দি পরিবারের অনেক ঘরের চালে ও মাচা পেতে অবস্থান করছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মীর শামছুল আলম জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলার নির্বাহী অফিসার এস.এম. গোলাম কিবরিয়া জানান, সরকারিভাবে যে বরাদ্দ আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।