পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ভারতের গজলডোবা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য মূর্তিমান গজব। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের সব গেট বন্ধ করে পানি আটকে রাখা; বর্ষাকালে সব গেট খুলে দেয়া হয়। গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় হাজার গ্রাম পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় টানা বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে পানিবন্দী মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্গত মানুষগুলো ত্রাণের আশায় তাকিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার অর্ধশত গ্রাম বন্যাকবলিত। তিস্তা নদীর আশপাশের এই গ্রামগুলোর মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। টানা পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, চার দিন আগে বাড়িতে পানি উঠেছে। উলিপুর ও চিলমারীর বিস্তীর্ণ এলাকায় হাঁটু থেকে বুক পরিমাণ পানি ওঠায় মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপাখির খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উলিপুরের থেতরাই, কড়াইপিয়ার, গুনাইগাছসহ অর্ধশত ইউনিয়নে পানি বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবন। অবর্ণনীয় দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে এসব এলাকার দুর্গত মানুষ। নীলফামারী, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদী বেষ্টিত চর ও গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট চলছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টেও বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সকালে তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৫২ মিটার ৫০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হলো ৫২ মিটার ৪০ সেন্টিমিটার। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রতন সরকার সাংবাদিকদের জানান, কুড়িগ্রামের ধরলা পয়েন্টে পানি ছিল ২৬ মিটার ৬২ সেন্টিমিটার। এখানে বিপদসীমা ২৬ মিটার ৫০ সেন্টিমিটার। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ৩৮ সেমি ও ঘাঘট নদীর শহরের ব্রিজ এলাকার পানি বিপদসীমার ২৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৪ উপজেলার ৬০ গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বগুড়ার সাংবাদিকরা জানান, বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট পয়েন্টে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তীব্র খাবার সঙ্কটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বগুড়ার বন্যাদুর্গত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কর্ণিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপুর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভান্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন। ৩ উপজেলার এ ইউনিয়নগুলোর ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। এতে গৃহহারার সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার তীববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্গত পরিবারগুলো বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। যারা বাঁধে জায়গা পাচ্ছেন না তারা দূরদূরান্তের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। বিশাল এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার এবং তীব্র জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনাতোলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় বিভিন্ন ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ২০ হাজার ৫০ কৃষক পরিবার। বন্যার পানির নিচে ডুবে গেছে রোপা আমন, আউশ, বীজতলা, পাট, মরিচ এবং শাকসবজির ক্ষেত। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সারিয়াকান্দি ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর, সোনাতলা ৮২৫ হেক্টর, ধুনটে ১০৯ হেক্টর তথা ২০ হাজার ৫০ কৃষকের ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির ফসল বর্তমানে পানির নিচে ডুবে গেছে। বগুড়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সাহা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বন্যাকবলিত ৩ উপজেলার ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। পানি কত দিন অবস্থান করবে তার ওপর নির্ভর করবে ক্ষতির পরিমাণ। বন্যার কারণে বাঁধে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু মানবেতর জীবনযাপন করছে। টানা বৃষ্টির কারণে শুকনা জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট এসব এলাকয় তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। দুর্গত অধিকাংশ এলাকায় এখনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নীলফামারীর ডালিয়া থেকে সিরাজগঞ্জের চৌহালি পর্যন্ত প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী বিধৌত এলাকার বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণের আশায় মুখিয়ে রয়েছেন। বানের পানিতে ভাসিয়ে নেয়া ওই গ্রামগুলোর মানুষগুলোর প্রত্যাশা সরকার তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান, সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতির সংগঠন তাদের পাশে দাঁড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।