Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার কবলে এবার মধ্যাঞ্চল

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উত্তর মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে ২৫ দিনে ১৪ জেলা বন্যা কবলিত : ভাটিতে পানি বৃদ্ধি ফুঁসছে যমুনা ধলেশ্বরীও বিপদসীমার উপরে, ব্রহ্মপুত্র ছুঁইছুই : সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
শফিউল আলম : উত্তরের বন্যার চাপ পড়তে শুরু করেছে এবার ঢাকার আশপাশে। প্লাবিত হচ্ছে মধ্যাঞ্চলও। যমুনার এপারে টাঙ্গাইলে প্রবাহিত মধ্যাঞ্চল তথা ঢাকা বিভাগের অন্যতম নদী ধলেশ্বরীর পানি (যমুনা নদের ভাটির ধারা) আরো বেড়ে গিয়ে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে সেখানকার নিম্নাঞ্চলগুলো।
এদিকে বিপদসীমা অতিক্রম করে যাওয়া এবং কাছাকাছি থাকা নদ-নদীসমূহের ভাটিতে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রান্তে পানি কম-বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন দিনের মতো গতকালও ফুঁসে উঠে যমুনা নদ। যমুনা পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা বিস্তার লাভ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র এবং এর উপনদী ঘাগটে পানির প্রবাহ বিপদসীমা ছুঁইছুই করছে। তবে বিপদসীমা অতিক্রমের আগে থেকেই চর ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে থৈ থৈ করছে বানের পানি। বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ভাঙন অব্যাহত থাকায় বন্যার মাত্রাও বেশি। সেই সাথে নানামুখী কষ্ট ও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এসব এলাকার বানভাসি লাখো মানুষকে। বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী, নেত্রকোনা জেলায় কংস নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ তিনটি নদীর পানি গত দুই-তিন দিনে কখনও হ্রাস, কখনও বৃদ্ধি ঘটে। তবে তা ধীর গতিতে। ফলে সিলেটে বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং দীর্ঘায়িতও হচ্ছে।
গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে সর্বশেষ গত ৩০ ঘণ্টায় পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল ৯টি পয়েন্টে। অথচ গত শুক্রবার বিপদসীমার উপরে ছিল ৭টি এবং বৃহস্পতিবার ৫টিতে। এ অবস্থায় সার্বিক বন্যা বন্যা পরিস্থিতির আরও কিছুটা অবনতি ঘটেছে। নদ-নদীর উজানের ঢল-বান অব্যাহত থাকায় আরিচা থেকে ক্রমশ ভাটি ও মোহনার দিকে গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, সুরেশ্বরে পানি ফুলে-ফেঁপে হয়ে উঠছে। এসব স্থানে নদীর স্রোতও বাড়ছে। ফেরি ও নৌযান চলাচল ব্যাহত ও ঝুঁকি বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও ভাটির দিকে এসব স্থানে প্রবাহ এখনও বিপদসীমার বেশ নীচে রয়েছে।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, সুরমা-কুশিয়ারা, ধলেশ্বরীসহ সর্বশেষ বন্যা ও পানির সমতল পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার খুব কাছাকাছি (মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নীচে)। তবে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। উজানভাগে ভারতেও (অববাহিকার মূল অংশ আসাম ও অরুনাচল প্রদেশে) ব্রহ্মপুত্র নদ আপাতত কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এই নদের পানি উজানে পানি কিছুটা বাড়ে, কিছুটা কমে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিন এভাবে মোটামুটি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে যমুনা নদে পানি বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দু’দিন এভাবে পানি বাড়তে পারে। উজানের পানি নামতে থাকায় আরিচার ডাউনে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা এখনই উদ্বেগের কারণ নয়। ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে অবস্থিত ধলেশ্বরী নদী গতকাল হতে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমে আসছে। তবে তা খুবই ধীরে কমছে। সর্ব উত্তরের নদী তিস্তার পানি এখনো বিপদসীমার কাছাকাছি (৩০ সেমি নীচে) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তায় পানির পরবর্তী হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করছে নদীটির উজানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ও ঢলের অবস্থার উপর।
বন্যা তথ্যকেন্দ্র সূত্রে পানির সমতল ও বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, যমুনার পানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই বৃদ্ধির প্রবণতা আগামী ৪৮ ঘন্টায়ও অব্যাহত থাকবে। যমুনা নদের পানি গতকাল সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো বৃদ্ধি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২২ সেমি উপরে, কাজীপুর পয়েন্টে ১৬ সেমি এবং সিরাজগঞ্জে ২১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে আরিচা পয়েন্টে আরো ২ সেমি বাড়লেও বিপদসীমার ৯৭ সেমি নীচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে গতকাল প্রায় স্থিতিশীল থাকায় বিপদসীমার মাত্র ৫ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া পয়েন্টে কিছুটা কমলেও তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঘাগট গাইবান্ধায় আরো বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার মাত্র ২ সেমি নীচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। টাঙ্গাইলের ্শানঘাটে ধলেশ্বরী আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার এক সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গতকাল থেকে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুরমা নদী কানাইঘাটে কিছুটা কমে ৩৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুরমা সিলেট ও সুনামগঞ্জে সামান্য কমে বিপদসীমার যথাক্রমে ২২ ও ১৮ সেমি নীচ দিয়ে বইছে। কুশিয়ারা নদীর প্রবাহ আরও কিছুটা বেড়ে গিয়ে এখন শেওলা ও অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৬৪ ও ৬৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীটি শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেমি নীচে নেমেছে। কংস নদী (নেত্রকোনায়) জারিয়াজঞ্জাইলে গতকাল হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৪১ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল কিংবা কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও স্থিতিশীল থাকতে পারে। যমুনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘন্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘন্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘন্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
পাউবোর বন্যা তথ্যকেন্দ্রের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৪৯টিতে। এরমধ্যে সর্বশেষ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ৯টি পয়েন্টে। বর্তমানে পানির সমতল অপরিবর্তিত থাকে ২টি পয়েন্টে। হ্রাস পায় ৩৩টি পয়েন্টে।
এদিকে উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে গত ২৫ দিনের মধ্যে ৬টি বিভাগের ১৪টি জেলা এ যাবত বন্যা কবলিত হয়েছে। গত ১২, ১৩, ১৪ জুন বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রবল বর্ষণ, জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে প্রথম ‘আকস্মিক বন্যা’ শুরু হয়। এরপর বৃহত্তর সিলেট, গত সপ্তাহে ফের উত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও কক্সবাজারে, তারপর উত্তরাঞ্চল ও ময়মনসিংহ বিভাগের একাংশ এবং গতকাল ঢাকা বিভাগে (টাঙ্গাইল জেলা) বিস্তার লাভ করে দেশের অব্যাহত বন্যা। এ যাবত বন্যা কবলিত ১৪টি জেলা হচ্ছে- রংপুর বিভাগের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা ও জামালপুর, ঢাকা বিভাগে টাঙ্গাইল, সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম (উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশ), কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবান। এসব জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত বসতঘর, ফল-ফসল, গৃহপালিত পশু-পাখি, কৃষি-খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়ক রাস্তাঘাটসহ গ্রামীণ অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট সর্বত্র চরমে। বন্যাজনিত নানাবিধ রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে গিয়ে স্বাস্থ্য-চিকিৎসা সেবায় অবর্ণনীয় দুর্দশা বিরাজ করছে।



 

Show all comments
  • জায়েদ ৯ জুলাই, ২০১৭, ১:০৫ পিএম says : 0
    সবই দাদাদের উপহার আর ভালোবাসা !
    Total Reply(1) Reply
    • Jahid ৯ জুলাই, ২০১৭, ১:৫৬ পিএম says : 4
      thik bolesen. tai agulake bonna bole opoman korben na.
  • Tania ৯ জুলাই, ২০১৭, ১:৫৮ পিএম says : 0
    এই বন্যাকবলিত মানুষদের স্বাস্থ্য-চিকিৎসা সেবা খুব জরুরী।
    Total Reply(0) Reply
  • আসিফ ৯ জুলাই, ২০১৭, ২:০১ পিএম says : 0
    এভাবে চলতে থাকলে দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun ৯ জুলাই, ২০১৭, ২:০৬ পিএম says : 0
    asub sobai tader pase darai
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ