Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


বগুড়ায় বন্যার পরিস্থিতি অবনতি : ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি : ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ৭৫ হাজার পরিবার : যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে : ওসমানীনগরে বানবাসীর দূর্ভোগ : ত্রাণের জন্য আহাকার


ইনকিলাব ডেস্ক : বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনার নদীর পানি বিপদ সীমার ৩৬ সেঃমিঃ উপর দিয়ে আর গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৪ সে.মি. উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মানুষজন জানমাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন-
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বগুড়ায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলো খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিস্কাশনের অভাবে দূর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে।
দূর্গত লোকজন জানিয়েছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা, কতুবপুর ও কামালপুর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের পানিবন্দি মানুষ এখন নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ¦বর্তী বাঁধে ও উচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্যার পানি প্রবেশ করায় ১৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল ও একটি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, বানভাসীদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন এবং ধুনট উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক সোনাতলা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেব জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চিলমারীতে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। এছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি সামান্য বেড়েছে। জেলার নদ-নদীগুলো সরাসরি ভারত থেকে প্রবাহিত হওয়ায় উজান থেকে বয়ে আসা বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত ৪ দিনে ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা অববাহিকায় প্রায় ৭৫ হাজার মানুষপানি বন্দি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদ সীমার ৫সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীতে ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যার ফলে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাটও রাজিবপুর উপজেলার নীচুএলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ জানায়, কুড়িগ্রাম সদরে ২০ হাজার, উলিপুরে ১৭হাজার, চিলমারীতে ২০ হাজার, রাজিবপুরে ৫ হাজারসহ অন্যান্য উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ইসলামপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৬ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে এ উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ উচু বাঁধে কিংবা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়া ফলে পানির তোড়ে ইসলামপুর উপজেলার শিংভাঙ্গা, নাওভাঙ্গা, দেলিরপাড় সড়ক পানিতে তালিয়ে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ সকল এলাকা মানুষসহ গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্যে সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা বাহাদুরাবাদ পার্থর্শী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা এবং ইসলামপুর পৌরসভা, আংশিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় নতুন করে প্ল­াবিত হয়ে প্রায় ১০হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, সিলেটের ওসমানীনগরে বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকারী -বেসরকারী ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও দুর্গতদের অধিকাংশই ত্রাণ প্রাপ্তি থেকেই বঞ্চিত রয়েছেন। বঞ্চিতদের দাবি, অনেকেই ত্রাণ দিচ্ছেন লোক দেখানো ও ছবি তোলার জন্য। যারা পাচ্ছে একাধিকবার পাচ্ছে। যারা পাচ্ছে না একবারও পাচ্ছে না।
গতকাল শনিবার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গেলে সাদিপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামের বৃদ্ধা আলেকজান বিবি ক্ষোভের সাথে বলেন, গত রোযা থেকে পানি বন্ধি অবস্থায় আছি। কিন্তু অনাহার-অর্ধাহারে দিনরাত কাটলেও আমার ভাগ্যে কোন ধরণের ত্রাণ সাহায্য জোটেনি। অতচ প্রায়ই শুনছি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল প্রবাসীর উদ্যোগে প্রথমবারের মত ১০কেজি চাল পেয়েছি।
অনেকেই সরকারী ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের কথা তুলে ধরে জানান, জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দ ব্যক্তিদের বার বার ত্রাণ দিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রাণ বঞ্চিতদের চেহারা এবং পোশাকে অভাবের চাপ বিদ্ধমান। অনেকেই জানান, তাদের ঘরে ও বাইরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। কেউ কেউ বিকল্প থাকার ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের মাচা বেধে বসবাস করছেন। এ অবস্থা শুধু সাদিপুর নয়, উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর, উমরপুর গোয়ালাবাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা আক্রান্ত গ্রামের শ্রমজীবী অধিবাসিদের।
গতকাল শনিবার সুন্দিখোলা গ্রাম ও ভেড়ারচর বাজার পরিদর্শন করতে গিয়ে এক প্রবাসীর বাড়িতে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা যায়। সেখানে এলাকার শত শত নারী পুরুষ দু’মুঠো চালের আশায় ভীড় করছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, নতুন ২৪ টন চাল বরাদ্দের পর গুদামে পর্যাপ্ত চাল না থাকায় তা ছাড় দেয়া যায়নি। তবে ইতিমধ্যে গুদামে চাল ঢুকেছে। আজ ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌছে যাবে আশা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ