পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনের ফলে বসতবাদী, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। হুমকির মুখে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট
জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে বর্তমানে নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে পৌর শহর রক্ষা বাঁধ ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার পর থেকে দুই তীরে শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গনের মহোৎসব। ইতোমধ্যে গত কয়েকদিন আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের শহররক্ষা বাঁধ এলাকার গনী সিকদারপাড়া গ্রামের অন্তত ১২টি বসতঘর ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। বর্তমানে নদীতে হেলে পড়েছে ৬টি বিদ্যুত লাইনের খুটি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার আয়তনের বেড়িবাঁধ বর্তমানে এক কিলোমিটার এলাকার নিকটে চলে এসেছে নদী।
স্থানীয় ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে দ্রত সময়ে ভাঙ্গন এলাকাটি রক্ষা করা না গেলে চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের জনবসতি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ মাদরাসা, স্কুল ও মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা। পাশপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে যে কোন মুহুর্তে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে উপজেলার ফাসিয়াখালী ও চকরিয়া পৌরসভার অন্তত লক্ষাধিক জনগনের মাঝে নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চকরিয়া পৌরসভা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের জনসাধারণ।
চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরপর ইতোমধ্যে নদীর তীর এলাকায় তাঁর ওয়ার্ডের গনী সিকদারপাড়া গ্রামের ১২টি বসতঘর, আবাদি জমি ও কয়েকটি সমিল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বাড়ি-ভিটা হারানো স্থানীয় জসিম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবু তালেব, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আবছার, আমির হোসেন, নুরুল হোসেন, গুরা মিয়া, সামসুল আলম, ছৈয়দ নুর ও ছৈয়দ আলমসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো সব হারিয়ে পরিবার সদস্যদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
গতকাল বিকালে ক্ষতিগ্রস্থ নদী ভাঙ্গন এলাকা পরির্দশন করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ এলাকার অন্তত ১২টি বসতঘর ও ৬টি বিদ্যুত লাইনের খুটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থার উত্তোরণের লক্ষ্যে আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে নদীতে স্পার বসানো শুরু করেছি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে হলে ভাঙ্গন এলাকায় আরো স্পার বসানো হবে। বর্তমানে ভাঙ্গন এলাকায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পাথরের আরসিসি বøক বসানোর কাজ চলছে। আগামী শুস্ক মৌসুমে একই স্থানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আরো তিনশত মিটার এলাকার পাথরের বøক বসানোর কাজ করা হবে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চকরিয়া শহররক্ষা বাঁেধর ঝুঁিকপুর্ণ এলাকায় ইতোমধ্যে নদীতে স্পার বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করা হয়। তিনি বলেন, নদীর তীর এলাকার জনগনের স্বাভাবিক বসবাস নিশ্চিত করতে আগামীতে চকরিয়া শহর রক্ষা বাঁধ ও ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ দুটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উর্ধ্বতন মহলে সবধরণের চেষ্টা করা হবে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ফুলছড়ি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঝুঁকির মধ্যে থাকা ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপ বাড়লেই বাঁধের ওই অংশগুলো ভেঙে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। গত এক দশকে এ বাঁধটির ব্যাপক ক্ষতি হলেও এর সংস্কার বা মেরামত কাজ কোনটাই করা হয়নি। ফলে যেকোন সময় বাঁধের দূর্বল অংশগুলোতে পানির চাপ পড়লেই ভেঙ্গে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সুন্দরগঞ্জ হতে ফুলছড়ি হয়ে সাঘাটার জুমারবাড়ি পর্যন্ত গাইবান্ধা অংশে ৭৮ কি.মি. বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এদিকে গতকাল গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল মোটরসাইকেল যোগে সাঘাটার জুমারবাড়ি থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এসময় তার সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী চন্দ্র শেখর, ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয়, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার ঘোষ, ভরতখালী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল, গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম, উদাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন প্রমুখ।
অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় নির্মাণাধীন নদী তীর রক্ষা বাঁধে আবারো ধস দেখা দিয়েছে। যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঘূর্ণাবর্তের কারণে বাঁধের নিচে মাটি ও বালির বস্তা সরে যাওয়ায় সপ্তম বারের মতো সেখানে ধস তৈরি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার অংশ যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
গতকাল সকালে ধসের খবর শুনে ছুটে আসেন পাউবোর টাস্কফোর্স প্রধান প্রকৌশলী কাজী তোফায়েল আহম্মেদ, এফ.আর.ই.আর.এম.আই.টি প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এবং বাঁধ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ। তারা দিনভর থেকে লোকজন দিয়ে বালুর বস্তা নিক্ষেপ করান।
স্থানীয়ভাবে আরও জানা যায়, গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বাঁধটির আজিমউদ্দিন মোড় এলাকায় প্রায় ৬০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। বাঁধধসের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চৌহালী আলিয়া মাদরাসা, বিএম কলেজ, বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশকিছু স্থাপনা।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান জানান, নদীভাঙন থেকে টাঙ্গাইল, নাগরপুর ও চৌহালী রক্ষা নির্মাণাধীন বাঁধের আজিমউদ্দিন মোড় অংশে গত শুক্রবার রাত থেকে হঠাৎ করেই ধস দেখা দেয়।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫০ মিটার ধসে গেছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ধস দেখা দিলেও বালির বস্তা নিক্ষেপ চলছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধেও এ ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধের কোনও কোনও অংশের মাটিও তেমন ভালো না। তার ওপর যমুনার ঘুর্ণাবর্ত তো আছেই। পানি কমে যাওয়ার পর আগামী শুষ্ক মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দেখে দেখে ব্যাপকভাবে জিও ব্যাগ বালুর বস্তা নিক্ষেপ করা হবে। বর্তমানে ধসের স্থানে জিওব্যাগ বালুর বস্তা ফেলেই ভাঙন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আপাতত আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার নেই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।