Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কট, মানুষের দুর্ভোগ ও পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব, মেডিকেল টিম গঠন, কোথাও পানি কিছুটা কমেছে, কোথাও পরিস্থিতি অপরিবর্তীত, নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, যমুনা ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি
ইনকিলাব ডেস্ক : বন্যায় সিলেট, বগুড়া,জামারপুরের বিভিন্ন উপজেলার কোথাও পানি কমছে, নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। আমাদের সিলেট, বিয়ানীবাজার (সিলেট) বগুড়া ব্যুরো, কুড়িগ্রাম, ইসলামপুর (জামালপুর), ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট
খলিলুর রহমান, সিলেট থেকে জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় বন্যার পানি কমছে শুরু করেছে। কিন্তু বন্যা কবলিত মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। দিন দিন মানুষ ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে। এছাড়াও পানিবাহিত রোগের মহামারি দেখা দিয়েছে এসব উপজেলা। এদিকে, বন্যা কবলিত মানুষগুলোকে সান্তনা দিতে গতকাল সিলেট যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি। এ সময় তারা বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় দেশে আল্লাহর গজব পড়েছে, তাই বন্যা আর পাহাড় ধস হচ্ছে মন্তব্য করেছেন এরশাদ। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছন, বন্যা দুর্গত এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি গত বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলায়
ইসলামপুরে বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে এমন কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যের কোনো অভাব নেই। বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করা হচ্ছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় যথেষ্ট পরিমান খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়াও বন্যার্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হচ্ছে বিএনপি এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিএনপি সম্পের্ক আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তারা সব সময় আনরিয়েলেস্টিক (বাস্তবতা বিবর্জিত) কথা বলে। আই ডোন্ট কেয়ার।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী, সাংসদ কেয়া চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে গতকাল দুপুরে সিলেটের ওসমানী নগর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘গুম-খুন’ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘দেশে আল্লাহর গজব পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ভালো নেই। চারদিকে শুধু গুম-খুন। দিন শুরু হয় খুনের খবর দিয়ে। ঘরে ঘরে গুম-খুনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশে আল্লাহর গজব পড়েছে। এ জন্য বন্যা হচ্ছে, পাহাড় ধস হচ্ছে, মানুষ মরছে। এর আগে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর বাজারেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন এরশাদ। এ সময় সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি বলেন, ‘বন্যায় ফসল হারিয়ে মানুষ আজ নিঃস্ব, চরম দুর্ভোগে সবাই, কোনো সুসংবাদ নেই।’ এ সময় এরশাদের সাথে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সংসদ সদস্য মুমিন চৌধুরী বাবু, ইয়াহইয়া চৌধুরী, ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সিলেটের বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে মানুষের দুর্ভোগ ও পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, বন্যা উপদ্রæত অনেক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং দূর্গম এলাকায় পৌছাতে পারছেন না মেডিকেল টিম। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায় থেকে ত্রাণ হিসেবে খাবার পৌছে দেয়া হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না বন্যাদূর্গতরা। বন্যায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও ভাইরাসজনিত জ্বরের জীবাণু বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে সহজেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ঠান্ডাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে যে কোনো সময় ডায়রিয়ার মতো নানা ধরনের রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রেও সকাল-বিকাল স্বাস্থ্যকর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, বন্যায় কোন কোন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণেও অভিযোগ উছেঠে। তবে সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ত্রাণ সামগ্রী সবার কাছে পৌছে দিতে দিন রাত করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার।
প্রসঙ্গত, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের আট উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্থ হয়েছেন। ওইসব উপজেলায় মোট ৫৬ টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১ টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দু’শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এ পর্যন্ত হয়েছে ২৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবারও।
আবুল কালাম আজাদ বালগঞ্জ থেকে জানান, সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমেছে। পানিবন্দি আট ইউনিয়নের মানুষের মাঝে পানি বাহিত রোগসহ গোখাদ্য সঙ্কট ও ডায়রিয়ার প্রাদুভার্ব দেখা দিয়েছে। কোথাও নতুন পানি বাড়ার খবর পাওয়া যায়নি। বৃষ্টি না হলে হয় পানি কমতে পারে বলে মনে করেন বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ। তিনি আরও জানান গত দুদফায় ১৭ টন ২১ হাজার ৫শ টাকার পর নতুন করে ১৮ টন চাল ও ৪০হাজার টাকার বরাদ্ধ এসেছে। তা প্রতিটি ইউনিয়নে সমবন্টন করা হয়েছে। সর্বোপরি উপজেলা বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর, বোয়ালজুড়, দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরিপুর, বালাগঞ্জ ও পূর্বগৌরিপুরসহ ৬টি ইউনিয়নে ১৫৭টি গ্রামই ক্ষতিগ্রস্থ। অর্থশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার কারনে বন্ধ রয়েছে। ৬৪০৩টি পরিবার প্রায় ৪৩হাজার মানুষ, মোট ফসলি জমি ২৬৫ হেক্টর বন্যার পানিতে আক্রান্ত। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ১৭১৬৪ হাস মুড়গী গবাদিপশু ১৪৪৩ টি। ৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২টি পরিবার ৬১ জন বসবাস করছে। বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, উপজেলার পূর্ব পৈলনপুরে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে একটি স্বয়ং সম্পন্ন মোবাইল টিম সবধরনের সেবা নিয়ে ইউনিয়নটি পরিদর্শন করেছে। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সিরিয়া গ্রামের বাদুর মিয়া তালুকদার বলেন, আমি বয়ষ্ক ভাতা পাই বলে আমাকে আর কোন ধরনের ত্রাণ দিচ্ছেনা।
অপরদিকে, গতকাল বিকেলে ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এম পি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেরা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, এডঃ লুৎফুর রহমান, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, ডঃ এ কে মোনেন, আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, সৈয়দ এপতেয়ার হোসেন পিয়ার, প্রমূখ
বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ৪ ওয়ার্ডে ৪১৫ জন ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ টাকা প্রদান করা হয়েছে। বোরো ও আউস ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষের এখন ‘মরার উপর খড়ার গা’ বিরাজ করছে। মানুষেরা চাহিদা ত্রানের প্রতি বেশি রয়েছে। যা পাওয়া গেছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন। নৌকা দেখলে মানুষ আমা করে এই বুঝি ত্রাণের নৌকা আসছে। এমন দৃশ্য পূর্ব গৌরিপুর এলাকয় দেখা যায়।
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বালাগঞ্জ বাজার, হাসপাতাল, বালাগঞ্জ ডিএন মডে উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। এদিকে বালাগঞ্জ বৈশাখী ক্রীড়া উন্নয়ন ও সমাজ কল্যান সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত অসহায় বন্যার্তদের মধ্যে ৫ কেজি করে প্রায় ৫শ জনের মধ্যে চাল বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরন করেন করা হয়েছে। এদিকে ওসমানীনগরের বন্যা দুর্গত অনেকই মানুষ ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভিজিএফ নং-৪০ এর কার্ডধারী শাকিল মিয়া জানান, আমরা গত ২ মাস চাউল পেয়েছি ৩৮কেজির মধ্যে ২৭ ও ২৩ কেজি করে এবং নগদ ৫শ টাকা তৃতীয় মাসে ২ কেজি ও ৫শ টাকা। আমদেরকে কম চাউল দেয়া হবে কেন? এমন প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান আব্দুর রব বলেন, অন্য মানুষ নিয়ে গেছে এবং অকথ্য ভষায় গালিগালাজ করেন। এ ধরণের অভিযোগ অনেকের। যা দায়ের করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য আমরা তৎপর তেকে ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রেখেছি। বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি না হলে উন্নতি হবে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর লাগাতার মাঝারি ও ভারী বর্ষণে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে গতকাল বিকেলে বিপদসীমার ৬ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো )। পানি বাড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুর্ব দিকের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এর ফলে বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছে বহু মানুষ। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে অন্তত ২৫শ পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির ইউএনও মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, সকালে পানি বিপদ সীমার ৬ সেঃ মিঃ এবং বিকেলে ১০ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে সারিয়াকান্দি’র কুতুবপুর ও কামালপুরের বাঁধের পূর্বাংশে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও কর্ণিবাড়ি ও বোহাইল চন্দনবাইশাসহ ১৫টি গ্রামের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ২৫’শ পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষ বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধের নিচু এলাকা থেকে মানুষদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে সেখানকার রাস্তাঘাট ও ফসলী জমির ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ।
গতকাল সকালেই বগুড়ার জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্যা এলাকা পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের সাবিক সহায়তা দেওয়া জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের দেড় শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চিলমারী, উলিপুর, ও সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজন নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় যাতায়ত করছে। নলকুপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট। চারন ভুমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানুষজন। উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের খেয়ারচর গ্রামের নজিবুল হক জানান, বন্যার পানি বাড়িতে প্রবেশ করায় পানিবন্দি অবস্থায় আছি। পানি আরো বাড়ছে। এ অবস্থায় পানি বাড়তে থাকলে বউ বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর বাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র তীরের হাজেরা বেগম জানান, নদীর তীরে আমাদের বাড়ি। উচু জায়গায় বাড়ি করলেও বন্যার পানি বাড়িতে উঠতে শুরু করেছে। পানি আরো বাড়লে কোথায় যাবো জানি না। এদিকে, সদর উপজেলার কাচিচর ও পিপুলবাড়ী, ঝুনকারচর কমিউনিটি ক্লিনিকের চারিদিকে পানি উঠায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, জেলার চরাঞ্চলের ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বন্যার পানি উঠলেও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল যমুনার নদীর পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি ২৪সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুসেঁ উঠে যমুনার পানি বিস্তৃর্ণ জনপদে হু হু করে প্রবেশ করছে।
উপজেলা পৌর এলাকাসহ তলিয়ে গেছে পশ্চিাঞ্চলের নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা, পাথর্শী ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। পানির তোড়ে বলিয়াদহ ব্রীজের একাংশ ভেঙে গেছে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি উঠায় প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সন্ধ্যায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া, চিনাডুলি, বেলগাছা, পাথর্শী ও কুলকান্দি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা, পশ্চিম বেলগাছা গ্রাম ও পার্থশী ইউনিয়নের দেলিরপাড়া, ছোট দেলিরপাড়া, মোজাআটা গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বসত বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বেলগাছা গ্রামের সুরুজ আলী জানান, প্রতি বছর বন্যায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। নিচু জায়গায় আমার বসত বাড়ি হওয়ায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শুরুতেই বাড়ীঘর ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেথে হচ্ছে। পার্থশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার বাবুল জানান, এ ইউনিয়নের মোজাআটা ,দেলিরপাড়া, ছোট দেলিরপাড়া, শুরেরপাড়া এলাকায় কিছুলোক পানিবন্দি হযে পড়েছে। তাদের জন্য দ্রæত আশ্রয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যাতে করে রোগ বালাই ধরতে না পারে সে দিক থেকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। স্থানীয় এমপির নিকট জানিয়েছি তিনি দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, এ উপজেলা যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদ নদী বেষ্টিত এলাকা। প্রতি বছর এ অঞ্চলে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যা কবলিত মানুষরা আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসার সকল সুবিধা পায় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয়ভাবে কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের কারণে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের নিম্নাঞ্চলের বিশাল জনপদ। পানি বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী ও নামাপাড়া এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ৫০টি পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তর উড়িয়া গ্রামে বালুভর্তি এক হাজার জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করার কথা জানিয়েছে। উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার জানান, উত্তর উড়িয়ায় কয়েকদিনের ভাঙনে ৩৫টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গৃহহীন পরিবারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয় নাই। তিনি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। তিনি দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ