পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : তলিয়ে গেছে ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে ডিএনডির নিচু এলাকার বহু বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ, সবজি ক্ষেত ও নার্সারিসহ বিভিন্ন স্থাপনা তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে পারছে না।
বর্ষণের ফলে নারায়ণগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভূইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, ঢাকার ডেমরা থানার মাতুয়াইল, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, নয়াপাড়া ও ধনকুন্ডা, কদমতলী থানার রসুলপুর, রায়েরবাগ, জিয়া স্মরনী, পলাশপুর, পাটেরবাগ, দনিয়া, কোদারবাজার, মুরাদপুর, শ্যামপুর থানার নি¤œাঞ্চল, জুরাইন, ধেলাইপাড়সহ বিভিন্ন নিচু এলাকার অনেক বাড়িঘর ও রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, সবজি খেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, স্থান ভেদে ডিএনডির অভ্যন্তরে এখনও দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে ডুবে আছে।
দনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জুম্মন মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, নিচু এলাকা হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন এলাকার পানি দনিয়া ইউনিয়নে প্রবেশ করে অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি নিজে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পানি নিস্কাশনের জন্য কাজ করিয়েছি। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার জন্য কয়েকটি স্ক্যাবেটর প্রস্তুত রাখা হয়ছে। পানি প্রবাহটা একটু কমলেই ড্রেনগুলো পরিস্কার করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ সাঈদ খোকন বলেছেন, গত বছর ডিএনডি এলাকার কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পানি দ্রæত নিস্কাশনের জন্য সেচ পাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ডেমরার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ডিএনডি বাঁধ। এই বাঁধের অভ্যন্তরে এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। বাঁধের অভ্যন্তরে এই এলাকা থেকে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্তা নেই বললেই চলে। বরং বাঁধের অভ্যন্তরে নিচু জমিতে পলিথিনের বেরা দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। পানি নিস্কাশনে এটাও একটা বড় বাধা। ভুক্তভোগিরা জানান, ডিএনডি থেকে দ্রæত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রতি বছরই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুদিন আগে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ শিমরাইল পাম্প হাউজের একজন কর্মকর্তা জানান, পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনার কারণে ডিএনডির খাল দিয়ে সেচ খালে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সবগুলো পাম্প চালানো যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ময়লা-আবর্জনা ফেলে ডিএনডি বাঁধসংলগ্ন সারুলিয়া-সিদ্ধিরগঞ্জের খালগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি ওই খাল দিয়ে ঠিকমতো সরতে পারছে না। এতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। পানি উন্নয়ন বের্ডার একজন প্রকৌশলী জানান, ডিএনডির নিষ্কাশনে খালে পানির ¯্রােতের সঙ্গে ময়লা আবর্জনা এসে পাম্পের মুখে জমতে থাকায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে এক সঙ্গে সবগুলো পাম্প চালানো যাচ্ছে না। তিনটি পাম্প চালু রাখা হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে একটি পাম্প বন্ধ রেখে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে আবারও বন্ধকৃত পাম্পটি চালু রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ডেমরার সারুলিয়া এলাকার খালগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। এছাড়া খালের জায়গা দখল করে কিছু কিছু এলাকায় দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। এতে খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি সরতে পারছে না। এমতবস্থায় খাল খননের কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে, ঢাকার কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী, কাজলা, দনিয়া, কদমতলীর রসুলপুর, দক্ষিণ দনিয়া, পাটেরবাগ, কোদার বাজার, মুরাদপুর, পলাশপুর, গোবিন্দপুর, রায়েরবাগ, জিয়া স্মরণী, জাপানীবাজার, জুরাইন, আলমবাগ, শ্যামপুর, ধোলাইপাড়সহ প্রতিটি এলাকার অলিগলি এখনও পানির নিচে। মূল সড়ক না ডুবলেও ড্রেনের পানি উপচে মানুষের ঘরবাড়ীতে প্রবেশ করেছে। ভুক্তভোগিদের মতে, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দনিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মঞ্জু বলেন, ড্রেনগুলো দিয়ে পানি সময়মতো নামতে পারে না। বিশেষ করে শনিরআখড়া বাজারের আরএস টাওয়ারের নিচের অংশ এবং শ্যামপুরের মাথায় খাল দিয়ে পানি নামতে না পেরে এলাকার ড্রেনগুলো উপচে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। তিনি বলেন, গত বুধবার সারাদিন আমরা পানি নিস্কাশনের জন্য কাজ করেছি। অন্যদিকে, পূর্ব জুরাইনে ৫২ ও ৫৪নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। তাতে হাজার হাজার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানান, পাশ্ববর্তী ৫৩নং ওয়ার্ডে সারা বছরই পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ৫৩নং ওয়ার্ডের ড্রেন ও খাল বছরেও একবার পরিস্কার করা হয় না। এ কারণে পানি নিস্কাশন হতে পারে না। ভুক্তভোগিরা বলেন, মুরাদপুর মাদ্রাসা রোড থেকে কোদারবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি সারা বছরই ড্রেনের ময়লা পানিতে ডুবে থাকে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন। অথচ সভা-সমাবেশে তিনি বেশ সক্রিয়। নিজেকে তিনি আদর্শ ‘কাউন্সিলর’ বলে দাবি করে থাকেন। সরেজমিনে পূর্ব জুরাইন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জুরাইন কমিশনার গলি থেকে মিষ্টির দোকান এলাকায় আসতে হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডের অর্ধেকের বেশি পানির নিচে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এ অবস্থা থাকে সারা বছরই। ভুক্তভোগিরা জানান, পূর্ব জুরাইন এলাকার পানিবদ্ধতা সমাধানের জন্য প্রায়ই স্থানীয়রা বৈঠক করেন। তবুও এর সমাধান মেলেনি দীর্ঘ ২৫ বছরে। স্থানীয়রা গণস্বাক্ষর নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু প্রতিবার নামমাত্র খাল পরিষ্কার করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, পূর্ব জুরাইনের তিতাস খাল প্রায় ২ কিলোমিটার। যা শ্যামপুর খালের সাথে মিলেছে, সেখান থেকে শনিআখড়া হয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পানি শোধনাগারের পাম্পে থেকে শীতাল²া নদীতে। মূলত তিতাস খাল পরিষ্কার করা হলে পূর্ব জুরাইনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পানিবদ্ধতা কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫-৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকার ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ডিএনডি বাঁধটি নির্মিত হয়। ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারা দেশ পানিতে ডুবলেও ডিএনডি বাঁধ ছিল বন্যামুক্ত। এরপর ডিএনডিতে বাড়িঘর, মিলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। বর্তমানে ডিএনডিতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।