পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যস্ততম সড়কে হাঁটুপানিতে দাড়িয়ে আছে ট্রাফিক পুলিশ, প্রাইভেট কারগুলোর নিচের অর্ধাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে, পথচারিরা কাপড় বাঁচাতে পারছেনা, দুইদিনের বৃষ্টিতে এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায়। ইনকিলাব সংবাদ শিরোনাম করেছে ‘ঢাকা যেন নদী’। প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় বৃষ্টিতে ঢাকার তলিয়ে যাওয়ার এই দৃশ্য সচিত্র প্রতিবেদন আকারে উঠে এসেছে। শহরের নি¤œাঞ্চলে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে এক প্রকার বন্যা পরিস্থিতি তৈরী করেছে। গত কিছুদিন ধরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানকার নাগরিকদের দুর্ভোগ এবং মেয়র ও জনপ্রতিনিধিদের আক্ষেপ ও অসহায়ত্ব গণমাধ্যমে উঠে আসছে প্রতিদিনই। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতে সিলেট ইতিমধ্যেই বন্যাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সবগুলো বিভাগীয় শহরেই রাস্তার খানাখন্দ, পানিবদ্ধতা এবং অকাল বন্যায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। বিশেষত: ঢাকা শহরের পানিবদ্ধতা অতীতের যে কোন সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এখানে সামান্য বৃষ্টিতেই হাটুপানির এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। নগরবাসির এই দুর্ভোগ লাঘব করতে সরকারের সংশ্লিষ্টরা এবং নির্বাচনের আগে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। নির্বাচিত মেয়ররাও তাদের প্রায় অর্ধেক মেয়াদ পার করে এসেছেন। শহরের যানজট ও পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে কোন সফল প্রুকল্প এখনো দেখা যায়নি।
সামান্য বৃষ্টিতে এই শহরে এমন সয়লাব হওয়ার কথা নয়। একদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন ও পরিবেশগত স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রভাবশালী মহলের দখলবাজির কারনে ঢাকার চারাপাশের সবগুলো নদী মাত্রাহীন দূষণ ও দখলের শিকার হয়ে পানির গুনাগুন ও স্বাভাবিক উপযোগিতা হারিয়েছে, অন্যদিকে শহরের খালগুলো ভরাট ও দখলের শিকার হওয়ার পাশাপাশি অপর্যাপ্ত সুয়ারেজ ও অকার্যকর পয়ো:নিষ্কাশন ব্যবস্থার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসিকে। রাস্তার ফুটপাত, খেলার মাঠ, নির্বিঘœ যান চলাচল এবং পয়োনিষ্কাশনসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং জননিরাপত্তা যে কোন শহরের বাসযোগ্যতার প্রধান মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। নাগরিক জীবনের এসব মৌলিক বিষয়গুলো ঢাকা শহরে দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। এ কারণেই বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগাসিটি ঢাকা আন্তজার্তিক রেটিং-এ বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরের প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার পরও ঢাকা শহরের এই লজ্জাজনক অবস্থানের দায় দেশের শাসক শ্রেণীর। দশকের পর দশক ধরে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহলের ভ’মিদস্যুতা, দখলবাজি এবং নগর উন্নয়নের সঠিক গাইডলাইন অনুসনের ব্যর্থতার কারণেই ঢাকাসহ দেশের মেট্টোপলিটান শহরগুলো ক্রমে বসবাসের অযোগ্য দুর্ভোগের নগরীতে পরিনত হয়েছে।
তিলোত্তমা ঢাকা, গ্রীন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা ইত্যাদি অনেক স্বপ্ন ও প্রতিশ্রæতির গল্প্ শোনাতে শোনাতে অব্যাহত দখলবাজি, ক্রমবর্ধমান যানজট, ভাসমান মানুষের বস্তি, আবর্জজনার ভাগাড় ও খানাখন্দের নগরীতে পরিনত করা হয়েছে ঢাকা। ষাটের দশকে ৩০ লাখ মানুষের প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকার জন্য যে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল, কার্যত সেই নগর পরিকল্পনার উপরই দাড়িয়ে আছে। বিগত ৫ দশকে ঢাকার আয়তন ও জনসংখ্যা বহুগুন বেড়ে প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার মেগাসিটিতে পরিনত হয়েছে অপরিকল্পিতভাবেই। বিগত নব্বইয়ের দশকে ঢাকার জন্য একটি সুপরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা বা ডিটেইল্ড এরিয়্ াপ্লান (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হলেও মূলত: প্রভাবশালী মহলের ভ’মি দস্যুতার স্বার্থ সংরক্ষনেই ড্যাপ বাস্তাবায়ন অনাকাঙ্খিত দীর্ঘসুত্রিতার কবলে পতিত হয়েছে। শহরের উন্নয়ন ও যানজট নিরসনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে অনেকগুলো ফ্লাইওভার নির্মান করা হলেও যানজট নিরসনে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে এসব প্রকল্প তেমন কোন কাজে আসছেনা। যেখানে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজপথ- গলিপথ-বসতবাড়ি হাটুপানিতে তলিয়ে যাচ্ছে, সেখানে উড়াল সেতুর উন্নয়ন নগরবাসিকে আশ্বস্ত করতে পারছেনা। কয়েক ঘন্টার ভারীবৃষ্টিপাতেই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা থেকে রক্ষা করতে প্রথমত: ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত করে সংস্কার, নাব্যতা বৃদ্ধি ও দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। বেদখল হওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের পাশাপাশি সমগ্র নগরীকে শত বছরের পরিকল্পনায় আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা আবশ্যক। সেই সাথে জলাভ’মিগুলোকে ভরাট ও বেদখলমুক্ত এবং বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধগুলোর সম্প্রসারণ ও সময়োপযোগি করে তুলতে হবে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দ্রæত বর্ধনশীল সব নগরীকেই আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা অনুসারে উন্নয়ন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।