পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করণে যত্রতত্র অবৈধভাবে বসা ভাসমান দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার থেকে বিশেষ এই অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। আর এ অভিযান পরিচালনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। এদিকে ক্যাম্পাসের এসব ভাসমান দোকানগুলো থেকে মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে তাদেরকে ব্যবসার সুযোগ দিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে টিমের বেশকিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভূত!
প্রক্টরিয়াল টিম ও ওইসব অস্থায়ী দোকান মালিক সূত্রে জানা গেছে, এতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় ৩০০ অস্থায়ী ভাসমান দোকানপাট ছিল। যেগুলো থেকে প্রক্টরিয়াল টিমের একাংশ প্রতিবছর অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা আদায় করে আসছে। প্রক্টর অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব টাকা থেকে অংশ পান বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, এজেন্টদের মাধ্যমে এসব দোকান থেকে সংগ্রহ করা সব অর্থ প্রক্টর অফিসের টোকেন ম্যান মো. শামীম হোসেন পেতেন। শামীম চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে তা বণ্টন করতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, অবৈধভাবে সংগ্রহ করা এসব টাকা তিনি যাদের মাঝে বণ্টন করতেন তারা হলো- প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার মো. রেজাউল করিম, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য মো. কাওসার আলম, মো. জুয়েল, মো. মাসুদ রানা, মো. হামিদুর রহমান, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ, মো. মিরাজ, মো. মেহেদী, মো. আমিনুল ইসলাম, কৃষাণ, সালাউদ্দিন ও মো. জাহিদ।
সূত্র মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতালের জরুরী বিভাগের গেটে ৩০টি দোকান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে প্রতিমাসে শামীমের হাতে ৮ হাজার টাকা তুলে দিতেন আকরাম নামের একজন লাইন্সম্যান। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার টাকা। সূত্র মতে এসব দোকান থেকে বছরে প্রায় লাখ টাকা করে আদায় করতো শামীম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের উত্তর পাশে দোয়েল চত্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে পর্যন্ত ফুটপাতের বিরাট জায়গা জুড়ে ছিল ফুল ও চারাগাছের ৩৫টির বেশি অবৈধ দোকান। এখানকার বিক্রেতাদের মধ্যেও রয়েছে একটি কমিটি। গাছের দোকানের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে পরিচিত নুরুল ইসলামের হাত ধরে এসব দোকান থেকে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা আসতো শামীমের পকেটে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনার পরিদর্শনে আসায় সিটি করপোরেশন এসব দোকানপাট সরিয়ে নেয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক বয়স্ক চায়ের দোকান মালিক জানান, এখানকার ১৫ জন চা দোকানিকে প্রতি মাসে প্রক্টরিয়াল টিমকে ৬ হাজার টাকা করে দিতে হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫টিরও বেশি ফুচকার দোকান থেকে প্রতিমাসে দোকান প্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা করে শামীমের হাতে তুলে দিতেন মো. কবির নামের এক লাইন্সম্যান। এভাবে শামীম প্রতি বছর এসব দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করে। টিএসসিতে একটি ফুচকার দোকানের মালিক সোহেল রানা বলেন, শামীম কবিরের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং মহামারীর আগের তুলনায় তিনি (শামীম) দুই গুণ ‹ভাড়া› বাড়িয়েছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে দুটি ফুসকা দোকানের মালিক সালাহ উদ্দিনের ছোট ভাই আলাউদ্দিন জানান, দুই দোকানের জন্য তার ভাইকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়।
খোকা ভাই নামে পরিচিত একজন লাইন্সম্যান টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম গেটের সামনে ফাস্টফুডের ৩০টির বেশি অস্থায়ী দোকান থেকে ভাড়া আদায় করেন। সূত্র জানায়, শামীমের হাতে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং প্রতি বছর এসব দোকান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা তুলে দেয় সে। তবে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা থাকায় অবৈধ স্টলগুলো এইস্থান থেকে সরিয়ে টিএসসির বিভিন্ন স্পটে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছেদ অভিযানের পর দোকানগুলো একেবারেই সরিয়ে নেয়া হয়।
প্রক্টোরিয়াল টিম সূত্রে জানা যায়, এ চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পাসে নারকেল বিক্রির প্রতিটি দোকান থেকে ১ হাজার টাকা করে নিত এবং ক্যাম্পাসে এরকম প্রায় ১০টি ভ্যান রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের ৩০টির বেশি ফাস্টফুডের দোকান মালিককে প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে মাসোহারা দিতে হতো, যাতে করে অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। তথ্য মতে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা থেকে ভাসমান এসব দোকানপাট থেকে বছরে শামীমের সংগ্রহ দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, দোয়েল চত্বরের কাছে ২৮টি মৃৎশিল্পের দোকান রয়েছে, যারা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার বেশি দেয়। শামীম নিজে টিএসসিতে চিকেন মোমোর ছয়টি অস্থায়ী দোকানের মালিক, যাও অবৈধ। তিনি স্টল দেখাশোনার জন্য তার বোন এবং বোন জামাইকে নিয়োগ করেছিলেন। কার্জন হল, মল চত্বর, হাকিম চত্বরের মতো অন্যান্য স্পটে, চা, আইসক্রিম, পানীয়, ভাজা ভুট্টা, ফলের ভর্তা ইত্যাদির শতাধিক অস্থায়ী দোকান ছিল যেখানে এসব জায়গায় স্টল বসানোর জন্য প্রত্যেককে ১ হাজার করে দিতে হতো। এ ধরনের স্টল থেকে চক্রের সদস্যরা প্রতি বছর ১২ লাখ টাকার বেশি সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইনকিলাবের এই প্রতিবেদক শামীম ও তার সহযোগীদের একটি অডিও রেকর্ডিং পেয়েছেন যেখানে তিনি অর্থ ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শামীম রেকর্ডিংয়ের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেন ওই অডিও আজ থেকে ৪ বছর আগের। তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বলেন, আমি তো প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য না। তাহলে দোকান মালিকরা আমাকে কেন টাকা দিবে? তিনি আরো বলেন, চার-পাঁচজন সদস্য চাঁদা আদায় করত এবং তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শামীম আরও বলেন, ্রনাজমুল, সাইফুল ও রুবেল এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল যার জন্য দুই বছর আগে তাদের চাকরি চলে যায়। এখনো তাদের মধ্যে রুবেল জগন্নাথ হলে অবৈধভাবে থাকছে। তারাই নতুনদের এ কাজ শিখিয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রক্টর ব্যবস্থা নিবেন।
প্রমাণ সাপেক্ষে লিখিত অভিয়োগ দেয়ার আহ্বান করেন ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতীতেও করা হয়েছে, এখনো করা হবে। লিখিত অভিযোগ এবং প্রমাণ দেয়া হোক যাতে সত্যতা যাচাই করা যায়। প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া অভিযোগকারীদেরও নাম প্রকাশ করার আহ্বান জানান প্রক্টর।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।