পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্যান্ট্রি ক্রেন অচল জেটি বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল চট্টগ্রাম বন্দরে
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি জাহাজ ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজে’র বেপরোয়া ধাক্কায় গুরুত্বপূর্ণ সিসিটির দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেটি-বার্থ এখনও অচল রয়েছে। এই ঘটনাটি অতীতের মতোই কী ধামাচাপা পড়বে? এই প্রশ্ন এখন পোর্ট-শিপিং ও বন্দর ব্যবহারকারী মহলে ঘুরেফিরে আলোচনায় উঠে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নিয়ে নানামুখী কারসাজির অপচেষ্টা চলছে পর্দার আড়ালে। এ ঘটনার সাথে বাতাস তথা প্রকৃতিকে দোষারোপ করে ‘অ্যাক্ট অব গড’ হিসেবে পুরো বিষয়টি তামাদি করে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে ঘোরানোর জন্য ‘তখন বাতাসের বেগ বেশি ছিল’ এমনটি কথিত প্রমাণপত্র হাজির করার জন্যও মহলটি উঠেপড়ে লেগেছে। অপপ্রয়াস চলছে নিছক এটি ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে চিত্রিত করার। এর সাথে কারা কীভাকে দোষী তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বদলে উল্টো পার পাওয়ার ও পাইয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। জাহাজের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ সিসিটির দু’টি জেটি-বার্থ গত ১০ দিন যাবত সম্পূর্ণ অচল রয়েছে।
এ কারণে বন্দরের বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও প্রতিদিনের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। এর জেরে বন্দরজুড়ে পণ্যজট এবং জাহাজের জট ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের মূল্য কয়েক শ’ কোটি টাকা। অতীতেও বন্দরের জেটি, বার্থিং স্থাপনায়, জাহাজে-জাহাজে কিংবা বিভিন্ন অঘটনে জড়িতরা অনায়াসে পার পেয়ে গেছে। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম জানান, বিদেশী বিশেষজ্ঞরা আসছেন। তারা সরেজমিনে গ্যান্ট্রি ক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন। সেই অনুসারেই জাহাজের সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ জুন (ঈদের আগের দিন) বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে মিসরের পতাকাবাহী ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ নামক জাহাজটি চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) মূল স্থাপনায় তথা জেটি-বার্থে একে একে দুইটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনে তীব্র গতিতে এসে আঘাত করে। আর ওই সময় সমগ্র বন্দর এলাকায় এমনকি চট্টগ্রামেও আবহাওয়া ছিল খুব স্বাভাবিক। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রও তাই জানিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, ওইদিন সমুদ্র বন্দরে কোনো রকম সতর্ক সঙ্কেত ছিল না। ফলে এ ঘটনার সাথে ‘অ্যাক্ট অব গড’ বা প্রকৃতিকে জড়ানো পোর্ট-শিপিং বিশেষজ্ঞদের মতে অবান্তর কাহিনী মাত্র। তাছাড়া ওইদিন চট্টগ্রাম বন্দরে ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত প্রায় পৌনে একশ’ দেশি ও বিদেশি জাহাজবহরের অথবা দেশীয় ছোট লাইটারেজ কার্গোজাহাজ, নৌযানের কোথাও কোনো দুর্ঘটনা বা ক্ষতির খবর মিলেনি। তাহলে শুধুই ‘এক্সপ্রেস সুয়েজ’ জাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার যুক্তি ধোপে টেকে না।
‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজে’র আঘাতে সিসিটির ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং জেটি-বার্থের অবস্থা পরিদর্শনের জন্য গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় ব্যাংকক থেকে চট্টগ্রামে আসেন মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাপানী মিৎসুবিশির তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে তারা সিসিটিতে যাবেন। জানা গেছে, তারা কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টির ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ, আর্থিক পরিমাণ এবং মেরামতের বিষয়টি দেখভাল করবেন। সিসিটির জেটি-বার্থের পরিস্থিতি দেখবেন। ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত আশপাশে অন্যকোথাও সরিয়ে নেয়া এবং অচল দুইটি জেটি গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) জাহাজ বার্থিয়ের উপযোগী রেখে কন্টেইনার খালাস ও উঠানোর জন্য সচল করা যায় কিনা, জেটির সম্ভাব্য কোন ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদি কারিগরি বিষয় যাচাই করে তাদের মতামত দেবেন। তবে তারা এখনই মেরামত কাজ শুরু করতে পারবেন না। ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা অনুযায়ী সেগুলো সরবরাহ ও আমদানির প্রক্রিয়া শেষ হলে একই টিম কিংবা ভিন্ন আরেক টিম চট্টগ্রাম বন্দরে এসে মেরামত শুরু করতে পারে। যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞ দলে কোন আবহাওয়াবিদ নেই। এরফলে গত ২৫ জুন কী ধরনের আবহাওয়া ছিল, কেন কী অবস্থায় জাহাজটি সিসিটি জেটির ক্রেনের উপর গিয়ে আছড়ে পড়ে সে সম্পর্কে তারা কোনো তদন্ত বা মতামত দেবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রও এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি। ঊর্ধতন সূত্র জানায়, পুরো ঘটনাটি স্পর্শকাতর। জাহাজের আঘাতে সিসিটি জেটিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটি পরিচালনা করে বেসরকারি অপারেটর। তবে সিসিটির যাবতীয় স্থাপনা, অবকাঠামো এবং কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ যন্ত্রপাতির মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ তথা সরকার।
২৫ জুন সিসিটি জেটিতে ভিড়ার সময় কন্টেইনার বোঝাই ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ নামে মিসরের পতাকাবাহী ১৮৪ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টার্মিনালের জেটিতে থাকা দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনকে প্রচন্ড গতিতে আঘাত করে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সিসিটি জেটি-বার্থের উপর রেল ট্র্যাকে অবস্থানরত দুইটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে বন্দরের সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা হতে পারে। আংশিক বিধ্বস্ত দু’টি ক্রেনের মধ্যে একটি বেঁকে রেল ট্র্যাক থেকে স্থানচ্যুত হয়ে গেছে। আরেকটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ভেঙে ও দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তখন থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সিসিটি জেটি-বার্থ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সিসিটির আরেকটি বার্থ চালু থাকলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে সেটি প্রায়ই অচল হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার পর আঘাতকারী জাহাজকে আটক করা হয়। জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট সী কনসোর্টিয়াম। শিপিং এজেন্ট ছাড়াও মলিকের প্রতিনিধি চট্টগ্রাম বন্দরে ঘটনাস্থল দেখে গেছেন। এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দরে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটটি প্রকট। আর এ অবস্থায়ই উক্ত ঘটনা বন্দরজটের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পড়েছে বিপাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম গতকাল ইনকিলাবকে জানান, মিৎসুবিশি কোম্পানির বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন। এরপর কর্তৃপক্ষ জাহাজ মালিকপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। ২৫ জুনের আবহাওয়া নিয়ে কেউ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্র বন্দরে কোনো সতর্ক সঙ্কেত ছিল না। তবে জাহাজের পরিচালনায় যারা ছিলেন তাদের কেউ কেউ বলেছেন, তখন হালকার চেয়ে একটু বেশি বাতাস ছিল। কর্তৃপক্ষের অন্য একটি সূত্র জানায়, ওইদিন উক্ত জাহাজকে বহির্নোঙর থেকে সিসিটি জেটিতে নিয়ম মাফিক পাইলটিং করে আনছিলেন বন্দরের পাইলট নূর আহমদ চৌধুরী। তিনি তার ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ২৫ জুন ওই সময় ‘প্রবল বাতাসের বেগ ও পানির স্রোত বেশি থাকায় এবং জাহাজের নোঙর ঠিকমতো কাজ না করায় এ দুর্ঘটনা’ ঘটেছে বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সারোয়ারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটি বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করবে বলেও সূত্র জানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।