পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর পরীবাগে নির্যাতনের পর ৭ তলা থেকে ফেলে গৃহকর্মীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সালেহ আহমেদ ওরফে কার্লোস সালেহ রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার বেপরোয়া জীবনের চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে এসেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, কার্লোস সালেহ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত তার পরীবাগের ফ্ল্যাটে রুমপার্টির আয়োজন করতো। পার্টির আকর্ষণ বাড়াতে যোগ দিতেন শোবিজের মডেল ও অভিনেত্রীরা। এছাড়াও প্রযোজক হিসেবেও কার্লোস সালেহ এর পরিচিতি রয়েছে। অস্তিত্ব নামে একটি ছবি প্রয়োজনা করে প্রযোজকের খাতায় নাম লিখিয়েছে সালেহ। সিনেমায় টাকা লগ্নি করার পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। সিনেমা বানানোর আড়ালে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা মডেল, অভিনেত্রীদেরকে নিয়ে সে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতো। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে কার্লোস সালেহ বেশ কয়েকজন উঠতি মডেল ও অভিনেত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে মডেল পিয়াসা অন্যতম। তার দেয়া বহু পার্টিতে পিয়াসা উপস্থিত হয়েছে। রাজধানীর ৪০নং সেগুন বাগিচায় অবস্থিত নাভানা আলপেন্ড রোজ এ্যাপার্টমেন্টের এ-১৪ নম্বরে কার্লোস সালেহ এর আরও একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্ল্যাটের একজন বাসিন্দা জানান, সালেহ তার সেই ফ্ল্যাটকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দারা আপত্তি জানায়। এতে করে সালেহ ক্ষীপ্ত হয়ে সবাইকে দেখিয়ে নেয়ার হুমকী দেয়। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই মধ্যরাতে ওই অফিসে ক্যাডার বাহিনী ও সুন্দরী মেয়েরা আসতো। সালেহ-এর দেহরক্ষী হিসাবে বিদেশি তরুণীরাও থাকতো। তারা রাতভর হই চই করতো। এতে আপত্তি জানালে সালেহ ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে। একজন বাসিন্দা বলেন, সালেহর কাছে সব সময় ভারী ভারী অস্ত্র থাকতো। লিফটে ওঠার পর সেই সব অস্ত্র অনেকেরই চোখে পড়ে। একবার এক শিশু সেই অস্ত্র দেখে ফেলার পর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সালেহর বাবা সৈয়দ আবুল হোসেন ডেমরার মাতুয়াইলের বাসিন্দা। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে সালেহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সরকারের এক মন্ত্রীর ছেলে। তাকে সেগুনবাগিচার নাভানার ফ্ল্যাটে অনেকবার দেখা গেছে। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চলতো বলে সালেহর প্রভাব ছিল অন্যরকম। কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করতো সালেহ। তার দামী গাড়ির বহর দেখে অনেকেই সন্দেহ করতো। কারণ সালেহ নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা তার ছিল না।
সূত্র জানায়, ব্যাংককের বড় বড় ডিস্কোতে কার্লোস সালেহ প্রায়ই যোগ দিতো। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের পর্যটন নগরী পাতায়ার রাশিয়ান ক্যাবারে ড্যান্সারদের নাচ দেখে সে দু’হাতে ডলারের বান্ডেল ছুড়ে দিতো। এ ছাড়া ঢাকার গুলশান-১ এলাকায় অবস্থিত মিরেজ নামের একটি শিশা বারে নিয়মিত আড্ডা জমাতো কার্লোস। নায়িকাদের অনেককে নিয়ে সে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাতায়াত করেছে। এদের কয়েকজনের সঙ্গে সে লিভটুগেদারও করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাজধানীর পরীবাগের ফ্ল্যাটে চিত্রনায়িকা সাবিনা রিমাকে নিয়ে বছর খানেক ধরে বসবাস করছে কার্লোস সালেহ। পরীবাগের ওই এ্যামপার্টমেন্টে সালেহ’র দুটি ফ্ল্যাট। একটিতে সে ফুর্তি করতো। আরেকটিতে থাকতো তার বাবা। গত ৩০ জুন শুক্রবার যৌন উত্তেজক ইনজেকশন নিয়ে কার্লোস তার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী ও সাবিনা রিমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্যাতন শেষে গৃহকর্মীকে সাত তলার ছাদে নিয়ে নিচে ফেলে দেয় সে। পরে পুলিশ গুরুতর আহত গৃহকর্মীর সঙ্গে সাবিনা রিমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরে অবশ্য সামাজিক মর্যাদাহানীর ভয়ে সাবিনা হাসপাতালের বিছানা থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, সালেহ আহমেদ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে কার্লোস নামে পরিচিত। এসব দেশের মাদক মাফিয়াদের সাথে কার্লোস নামেই পরিচিত সে। বিদেশে ‘ঢাকার ইয়াবা ডন’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি কার্লোসের। মাদক ব্যবসার অভিযোগে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর সরকার তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জরি করে ২০১৪ সালে। বর্তমানে তার ইয়াবা নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ঘিরে।
সূত্র জানায়, সালেহ এক সময় অস্ট্রেলিয়া যায় চাকরি করতে। সেখানেই সে অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়ে। দেশে ফিরে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মাত্র ১০ বছরে সে শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়। সেগুনবাগিচা নাভানা এ্যাপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা জানান, সালেহ নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ শিক্ষত বলে পরিচয় দিতো। ওধুষ কোম্পানীর কাঁচামালের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা তৈরীর কাঁচামাল আমদানীর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর বাইরে তার মূল ব্যবসা ছিল হুন্ডি। র্যাবের হাতে হুন্ডির টাকাসহ সে একবার ধরাও পড়েছিল। চোরচালানী হিসাবেও সে একাধিকবার ধরা পড়ে বলে সূত্র দাবি করে। তবে কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের একজন মন্ত্রীর ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারনে সে আর ধরা পড়েনি। সালেহ’র ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রীর ছেলের ইয়াবা ব্যবসার মূল পার্টনার এই কার্লোস সালেহ। সারাদেশেই এদের শক্তিশালী ইয়াবা নেটওয়ার্ক আছে। ইয়াবা ব্যবসা করেই সে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। পুলিশ জানায়, রিমান্ডে অনেক কিছুই বেরিয়ে এসেছে। প্রয়োজনে আবারও তাকে রিমান্ডে আনার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানানো হবে। আদালত সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার অপর একটি মামলায় কার্লোস সালেহকে আদালতে হাজির করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।