পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সুরমা সুনামগঞ্জে বিপসীমা অতিক্রম : বাড়ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামেও : মাতামুহুরী হঠাৎ বিপদসীমার উপরে : ভারতে উজানের ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত
শফিউল আলম : দেশের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে অনেক নদ-নদীতে। ফলে বর্তমানে বন্যা কবলিত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা সিলেট বিভাগের বন্যা দেশের আরও বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমশ বিস্তৃত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সূত্র এ আশঙ্কার কথা জানায়। এদিকে পাউবো’র বন্যা তথ্যকেন্দ্রের গতকাল (মঙ্গলবার) সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, মোট ৯০টি পানির সমতল বা লেভেল স্টেশনের মধ্যে গতকাল আরো ৩টি পয়েন্টে নতুুন করে পানি বৃদ্ধি পায়। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১টি। আর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ৭টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে। তবে সোমবার পর্যন্ত বিপদসীমার উপরে প্রবাহ ছিল ৪টি পয়েন্টে। আবার সুরমা নদী সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেমি বেড়ে সেই পয়েন্টে এখন বিপদসীমার এখন ৬ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। যা বন্যার নতুন বিস্তৃতি। ইতোমধ্যে হঠাৎ করেই গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের পার্বত্য অববাহিকার নদ-নদীতেও পানি বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছে। কক্সবাজার-বান্দরবানের উপর দিয়ে প্রবাহিত এ অঞ্চলের অন্যতম নদী মাতামুহুরী (লামা পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে) বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীটির সমতলে গত ২৪ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৭১৬ সেন্টিমিটার। গত রোববার পর্যন্ত পাউবো’র ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় ৪৫টিতে। সোমবার ১৩ পয়েন্টে পানি বেড়ে হয় ৫৮টি।
বন্যা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশের প্রধান নদ-নদীর উৎসমুখ ভারতে এবং নদী অবাবাহিকায় টানা মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিবর্ষণ হচ্ছে। আবার দেশের অভ্যন্তরেও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ছে। ভারতের রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বর্ষার বর্ষণের মূল ফ্যাক্টর বা নিয়ামক মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় রয়েছে। কোথাও কোথাও তা জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারত সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মাঝারি থেকে জোরালো অবস্থায় রয়েছে। এরফলে পুরো এই বিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধারা চলতি জুলাই মাসে অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। হিমালয় পাদদেশীয় এলাকাগুলো এবং পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যগুলো থেকে উজানের ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে বিস্তৃত হতে পারে বন্যা। আর বিস্তারের সাথে সাথে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটতে পারে।
এদিকে পাউবো’র বন্যা তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গতকালসহ গত দু’দিনে নতুন করে আরো বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। কোন কোন পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে নদ-নদীর পানিবৃদ্ধির এই প্রবণতা আগামী ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে প্রধান নদ-নদী অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে এবং নদীর উৎসমুখে তথা ভারতের উজানে বেড়ে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা। ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থা এ ব্যাপারে পূর্বাভাস প্রদান করে প্রায় দু’মাস আগেই। এ অবস্থায় এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী-উপনদী, শাখা নদীগুলোর প্রবাহ সমতল। বৃহত্তর সিলেট ছাড়ার দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অবাহিকায় তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামে এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বন্যার শঙ্কা তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে নদ-নদীর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পায়। গতকাল তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১টিতে। এরমধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ৭টি পয়েন্টে। অপরিবর্তিত থাকে ৪টিতে। প্রবাহ কিছুটা হ্রাস পায় ২০টি পয়েন্টে। বিপদসীমা অতিক্রম করে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও মাতামুহুরী নদী। গতকাল যে ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করছিল সেগুলো হচ্ছেÑ সুরমা নদী কানাইঘাটে ৫৭ সেন্টিমিটার, সুরমা সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেমি বেড়ে বিপদসীমার এখন ৬ সেমি এবং কুশিয়ারা নদী অমলশীদে ৮৩ সেমি, শেওলায় ৭৩ সেমি, শেরপুর-সিলেটে ১৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীর মধ্যে মাতামুহুরীর পানির সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় লামা পয়েন্টে ৭১৬ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে ১২৬ সেমি এবং চকরিয়ার (চিরিঙ্গা) পয়েন্টে ৭১৬ সেমি বেড়ে ৪১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে কিছুটা কমেছে।
বন্যা পূর্বাভাস কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। সুরমা নদীর পানি নতুন করে বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধির প্রবণতা আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধির প্রবণতা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদীর পানির সমতল আরো বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় পার্বত্য বান্দরবানের লামায় সর্বোচ্চ ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন নদ-নদীর অববাহিকায় বর্ষণ হয়েছে এবং অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।