Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : ১৯৭১-এর ৯ মার্চ ছিল মঙ্গলবার। এ দিন বাঙালিরা মুক্তির আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে তোলে। সরকারি ও আধা-সরকারি ভবন এবং যানবাহনে উড়েছে কালো পতাকা। বঙ্গবন্ধু যেসব সরকারি অফিস খোলা রাখার নির্দেশ দেন, কেবল সেগুলো ছাড়া কর্মসূচি অনুযায়ী দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বন্ধ থাকে সচিবালয়সহ সারাদেশে সব সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, হাইকোর্ট ও জজকোর্ট। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ অন্যান্য যানবাহন চালু থাকে। খোলা থাকে হাটবাজার ও দোকানপাট। সারাদেশে ব্যাংকিং কাজকর্মও ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের পরিবেশ ক্রমেই অস্বাভাবিক হয়ে উঠছিলো। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো এই দেশে বসবাস করা তাদের নাগরিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট প্রয়োজনে ঢাকা থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ঢাকার জাতিসংঘ উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। পশ্চিম জার্মানি সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সামরিক বিমান পাঠানোর। এই অবস্থায় জাপানও ঢাকায় অবস্থিত তাদের নাগরিকদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এদিকে এইদিন সকালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ঢাকায় পৌঁছলে বঙ্গবন্ধু তাকে ফোন করেন। ফোনে আলোচনার পর ন্যাপ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক করেন। সভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি আহ্বান জানায় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিকেলে পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সমন্বয় কমিটি›র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। জনসভা থেকে মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে ২৫ মার্চের মধ্যে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা দেয়ার আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। তিনি বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক হয়েছে আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। লা-কুম দ্বী-নুকুম, ওয়ালিয়া দ্বীন (অর্থাৎ তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার)। পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানীর এই বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে তাদের দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ হয়।
অপরদিকে ইসলামাবাদে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় আসবেন ইয়াহিয়া খান। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা মুখে সামরিক বাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বললেও সামরিক কর্তৃপক্ষ রাজশাহী শহরে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে আট ঘণ্টার কার্ফু জারি করে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কার্ফু জারির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। আর সরকারের এই আচরণের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, শাসক গোষ্ঠী এখনও সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়নি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়। এদিন ইসলামাবাদ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতিরা নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই ক্রমান্বয়ে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করতে থাকে। শাসক হিসেবে পাকিস্তানীদের হুকুম অকার্যকর হওয়ার কারণে তারা বেশি বিপাকে পড়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ