পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এটিএম কার্ড ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউ ইয়র্কের ফেডেরেল রিজার্ভ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় একশ মিলিয়ন (প্রায় ৮শ কোটি) টাকা চুরি হয়ে গেছে। বিদেশি হ্যাকাররা অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এ অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে বলা হয়েছে। পাচার হওয়া প্রায় সব অর্থই অনলাইনের মাধ্যমে ফিলিপাইনের ব্যাংকিংয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সামান্য অর্থ গিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। সন্দেহভাজন চীনা হ্যাকাররা ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে এটা ঘটিয়েছে বলে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, আমি এইমাত্র মিডিয়ায় খবর দেখলাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি বিধায় কিছু বলা যাচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে ফেডেরেল রিজার্ভ ব্যাংক কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময়ে আলোচ্য অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। চক্রটি প্রথমে পাসওয়ার্ড হ্যাক করে। পরে আন্তর্জাতিক লেনদেনের নিয়ম অনুসরণের মধ্য দিয়ে জালিয়াতির কাজ সম্পন্ন করে। একপ্রকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতিতে টাকাগুলো নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যেভাবে লেনদেন করে, সেভাবে লেনদেন হয়েছে। প্রথমে টাকার পরিমাণ চেয়ে একটি আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা হয়। আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রাক্কালে যেভাবে আবেদন হয়, এ আবেদনটিও ছিল অনুরূপ। নির্ধারিত হিসাবে টাকা চলে যায় এবং নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি বুঝতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে দুই কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়, কিন্তু তারা টাকার কোনো হদিস পাননি। ১০-১২ দিন পর তারা খালি হাতে ফেরত এলেও বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে কিছু পাওয়াও গেছে।
রিজার্ভের অর্থ কোন দেশে কোথায় বিনিয়োগ বা সংরক্ষণ করা আছে তা সুইফট কোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী সুরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত এই নেটওয়ার্ক হ্যাক করে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। এদিকে এই বিপুল অর্থ হ্যাক হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নীতিনির্ধারকরা। সংগত প্রশ্ন উঠেছে, রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হলে বাকি রিজার্ভ সুরক্ষার উপায় কী? সাইবার ক্রাইম থেকে প্রতিরোধের উপায়ই বা কি? সাথে সাথে হ্যাকের এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকটের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, প্রবাসী ফিলিপিনোদের রেমিট্যান্স স্থানান্তরকারী সংস্থা ফিলরেমের মাধ্যমে এ অর্থ ব্যাংকের মাকাতি সিটি শাখায় জমা হওয়ার পর স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করে পুরো অর্থ একটি কর্পোরেট হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে। অলোচ্য হিসাবটি একজন চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ীর। ওই ব্যবসায়ীর হিসাব থেকে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে তিনটি স্থানীয় ক্যাসিনোয়। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে। এদিকে ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর একটি ইংরেজি দৈনিককে ফেডেরেল রিজার্ভ ব্যাংকের যথাযথ তদারকি না থাকাকে দায়ী করলেও সংশ্লিষ্টরা তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। প্রকাশিত রিপোর্টেও এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতা অনুসরণ করেনি। সংগত প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, যখন এটিএম বুথ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাটের কাহিনী চলমান এবং এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে, তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে কেন সতর্ক হয়নি বা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি? বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত হিসেবে পরিচিত কোড কীভাবে অন্যের গোচরে গেল এবং হ্যাক হলো বা হতে পারল? এটিএম বুথের কেলেঙ্কারির সাথে প্রথম দিকে একজন বিদেশির কথা সাড়ম্বরে প্রচার করা হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, তার সাথে ব্যাংকের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরাও জড়িত। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লোপাট হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনটেলিজেন্স ইউনিট সচল হলেও তারা আগে কী করেছিল?
এটা দেখা যাচ্ছে, দেশে বিভিন্ন খাতে একটার পর একটা গুরুতর অপরাধ ঘটেই যাচ্ছে। ঘটনার পর দু-এক দিন এ নিয়ে কথাবার্তা আলাপ-আলোচনা হয়, এর পর আবার নতুন অপরাধ সামনে চলে আসে। আলোড়ন সৃষ্টিকারী বুথ জালিয়াতির কথা ইতোমধ্যেই চাপা পড়ে গেছে। গত কয়েক বছরে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাংকের জালিয়াতিসহ বিপুল পরিমাণ আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো না কোনোভাবে সরকারের কোনো না কোনো মহলের নাম সম্পৃক্ত হয়ে আছে। হলমার্ক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো অর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব ক্ষেত্রে মুখরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কিছুই করা হয়নি। এ যাবৎকাল এ ধরনের কেলেঙ্কারির যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং নজিরবিহীন ঘটনা হচ্ছে রিজার্ভ কেলেঙ্কারি। সংশ্লিষ্ট মহল টাকা ফেরত পাওয়ার কথা বললেও তা কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার ব্যাখ্যা যেভাবে দেয়া হয়েছে, তাতে বেশকিছু ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রয়েছে। প্রচলিত নিয়মের মতোই হয়েছে, অথচ নিয়ম মানা হয়নি। এই যে বিষয়টি, এ নিয়ে কেন কোনো মহলের মনে সন্দেহ হলো না, সে প্রশ্নের জবাব কোথাও নেই। দায়িত্বশীলরাও থাকবেন, জালিয়াতিও হবে Ñ দুটো বিষয় একসাথে চলতে পারার কথা নয়। এর সদুত্তর প্রয়োজন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা নিরর্থক। প্রকৃতই এর সাথে দেশের কোনো মহল জড়িত রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রিজার্ভের এই কেলেঙ্কারির সামগ্রিক চাপ যে দেশের অর্থনীতির ওপরই পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আস্থার সংকট আরো তীব্রতর হলে তার বোঝা বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।