Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে উদ্বেগ তৈরি করেছে কাতার সংকট

অর্থ, সমর্থন, অবকাঠামো, ভবন নির্মাণ -সবকিছুই বন্ধ হওয়ার শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফিলিস্তিনি ভূখন্ড গাজায় শেখ হামাদ সিটির খেলার মাঠে শিশুদেরকে খেলতে দেখার দৃশ্য এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিশুরা যখন খেলাধুলা করে তখন তাদের অভিভাবকদেরও দেখা যায় পাশেই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ছায়ায় বসে গল্প করতে বা কথা বলতে। গাজায় এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় এলাকা হলো এই হাউজিং প্রকল্প, যার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১২ সালে। আর এ প্রকল্পের পুরো অর্থের যোগান দিয়েছে উপসাগরের ধনী দেশ কাতার; সে কারণে প্রকল্প এলাকার নামকরণ করা হয়েছে দেশটির সাবেক শাসক শেখ হামাদের নামে। নিম্ন আয়ের প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার ইতোমধ্যেই সেখানে স্থানান্তর হয়েছে। কমপ্লেক্স এলাকায় নতুন স্কুল, দোকানপাট, আকর্ষণীয় মসজিদ এবং এলাকা জুড়ে সবুজের আয়োজনে একটা নান্দনিক শহর হয়ে উঠেছে শেখ হামাদ সিটি। এখনো প্রতিনিয়ত নির্মাণকাজ চলছে, গড়ে উঠছে একের পর এক ভবন। কিন্তু এতো আয়োজনের মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের এই ভূখন্ড উদ্বেগ তৈরি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার সংকট। গাজার হামাদ সিটির অধিবাসীদের মধ্যে রীতিমত উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে এ সংকট, কারণ তারা মনে করছে বিষয়টি দীর্ঘায়িত হলে তারা হারাবেন তাদের একজন প্রধান দাতা ও সহযোগীকে। শেখ হামাদ সিটির একজন অধিবাসী বাহা শালাবি বলেন, আমরাই আসলে ভিকটিম হতে যাচ্ছি। তার মতে, অর্থ, সমর্থন, অবকাঠামো, ভবন নির্মাণ- সবকিছুই এবার বন্ধ হয়ে যাবে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে গাজা উপত্যকায় নতুন বাড়ি, হাসপাতাল ও সড়ক নির্মাণে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে কাতার। দেশটি আরো প্রায় একশ’ কোটি ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। যদিও সউদী আরবসহ উপসাগরীয় মিত্রদের সাথে কাতারের বর্তমান সংকট এসব প্রকল্পে ঠিক কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ তুলে সউদী আরব আর তার মিত্ররা কাতারকে একঘরে করার চেষ্টা করছে, যদিও কাতার সবসময়ই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার প্রধান যে সড়কের নির্মাণকাজ চলছে, তার প্রকৌশলী হানাফি সাদাল্লাহ অবশ্য সতর্ক, এই আশঙ্কায় যে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে অর্থ সহায়তা কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের শত শত কর্মী আছে এবং তারা সবাই পরিবারকে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, গাজায় বেকারত্ব অত্যন্ত প্রকট। এখন কাতারের তহবিলও যদি চলে যায়, তাহলে সবাইকে ঘরে অলস বসে থাকতে হবে। সরকারি হিসেবে গাজার ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষের কোনো কাজ নেই, বেকারত্বের ক্ষেত্রে যা বিশ্বে একটি রেকর্ড। সউদী আরব যেসব দাবিতে কাতারকে একঘরে করার চেষ্টা করছে, তার একটি হলো হামাসকে সহায়তা দেয়া বন্ধ করা। আর এই হামাস সংগঠনটিই গাজা শাসন বা পরিচালনা করছে। প্রায় এক দশক আগে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলো হামাস। তার এক বছর পর সেখানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে হামাস। এরপর হামাসই কাতারকে উদ্বুদ্ধ করে গাজার সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য। সংগঠনটির নেতা মাহমুদ জাহার বলেন, যেসব ঘরবাড়ি, সড়ক হচ্ছে সেগুলো হামাসের জন্য হচ্ছে না। মানবিক প্রতিষ্ঠান- স্কুল ও হাসপাতাল- এসবই হচ্ছে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য। তিনি বলেন, কাতার থেকে হামাসকে দূরে সরিয়ে রাখার সব উদ্যোগই ভুল ও অকার্যকর। ইসরাইলের অভিযোগ যে হামাস বিদেশী সহায়তা তার সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। তবে প্রকল্প নিয়ে যাতে কোনো অভিযোগ না ওঠে সেজন্য দোহার পক্ষ থেকে সমন্বয় অফিস খোলা হয়েছে গাজাতেই, যারা নির্মাণকাজের ঠিকাদার ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর সাথে নিজেরাই সরাসরি কাজ করে থাকে। খবরে বলা হয়, হামাস ও কাতারের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অনেকটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তের দু’ধারে ইসরাইল ও মিসর কঠিন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যদিও দোহার সমর্থনে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উদ্যোগও রয়েছে। কাতারের আমীর একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকা সফর করেছেন। আবার হামাসের বড় বড় নেতারা দোহায় বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে হামাসের সাবেক প্রধান খালেদ মিশাল। এখন তাদের অনেকে অবশ্য দোহা ছেড়েছেন। তবে এটিকে দেখা হচ্ছে কাতারের ওপর চাপ কমানোর ক্ষেত্রে হামাসের একটি সহযোগিতা হিসেবে। গত মাসেই হামাস তাদের নতুন নীতি ঘোষণা করেছে, যদিও তাতে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এই মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক নিয়ে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে কাতারকে। সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী বলেই মনে করে সউদী আরব ও তার মিত্ররা। এছাড়া কাতারকে কেন্দ্র সা¤প্রতিক এই সংকটে চাপ বাড়ছে হামাসের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প- মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মানবিক ও নিরাপত্তা বিপর্যয়ের জন্য ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদা ও হেজবুল্লাহর সাথে হামাসকেও দায়ী করেছেন। ইসরাইল গত সপ্তাহেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি পরিকল্পনায় সায় দিয়েছে যার ফলে গাজায় বিশ লক্ষ মানুষ দিনে ৪৫ মিনিট কম বিদ্যুৎ পাবে। বর্তমানে তারা গড়ে চার ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পায়। তবে হামাস এসব কিছুর জন্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেই দায়ী করে বলছে যে তারাই ট্রাম্প প্রশাসন ও ইসরাইলের সাথে মিলে এসব করছে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শঙ্কা

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ