পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাহাড় ধস ঠেকাতে সহায়ক অবলম্বন বলতে ব্যাপক বনায়নই গ্রহণযোগ্য সমাধান
সাখাওয়াত হোসেন : পাহাড় ধস রক্ষায় কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বা কি করলে দ্রæত সুফল পাওয়া যাবে, সে দিকে লক্ষ রেখে সংশ্লিষ্ট্রদের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি পাহাড়ে বসবাসরত পাঙালী ও পাহাড়ীদের। পাহাড় ধসের অন্যতম কারন ঘাস ও গাছ কাটা, পাহাড় কেটে জুম চাষ এবং পাহাড়ের মাটি কেটে ঘর তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে গাছ কাটা, জুম চাষ এবং পাহাড় কেটে ঘর তৈরিতে এগিয়ে রয়েছে পাহাড়ীরা। গত ১১-১৩ জুন ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজারে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের করনে প্রাণহানির ঘটনা একবারে নতুন না হলেও এ বছরের পাহাড় ধস জনিত বিপর্যয় ইতিপূর্বের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে । বৃহত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে নিঃসন্দেহে রাঙামাটিতে এ বছর প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে বেশি। নিহতদের মধ্যে পাহাড়িদের সংখ্যা ৬০ভাগের অধিক বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এ থেকেই প্রতিয়মান হয় যে, পাহাড় ধসের জন্য কারা অধিকদায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি ও বাঙালী উভয় জনগোষ্ঠী এই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের গর্বিত নাগরিক । পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই সন্ধিক্ষণে ব্যক্তিগত পছন্দ ও মতামতকে উর্ধ্বে রেখে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ একসাথে কাজ করবে, এটাই সকলের কাম্য । সূত্র মতে, ১৯৯২ সালে প্রথম বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনে “ঞৎধফরঃরড়হধষ ঝপরবহঃরভরপ কহড়ষিবফমব” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল । অনেক আগের সেই সময় গুলোতে এই সনাতনী ধারা অবলম্বন করেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীরা পাহাড়ের মাটি না কেটে খুঁটির ওপর “টং ঘর” তুলতো । এছাড়া তাদের ধর্মীয় একটি সংস্কারও ছিল সেই সময় গুলোতে। প্রয়াত বিশিষ্ট উপজাতী গবেষক ও লেখক অমরেন্দ্র লাল খীসার গবেষনা পত্র থেকে জানা যায় অধিকাংশ গোত্রের উপজাতীরা “ধরিত্রীকে আঘাত করে মাটি কর্ষণ করাকে পাপ মনে করতো”। কিন্তু সা¤প্রতিক বছর গুলোতে উপজাতীদের জীবনে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, বাসস্থান ও পোষাক পরিচ্ছেদে আমূল পরিবর্তন এসেছে। উপজাতীরা পাহাড়ের মাটি না কেটে খুটির উপর “টং ঘর’’ জাতীয় ঘরে বসবাস করছেন না । বাঙালী ও পাহাড়ী উভয় স¤প্রদায় পাহাড় কেটে অনিরাপদ ভাবে তাদের বসতবাড়ী নির্মাণ করে অবস্থান করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় পাথুরে না হলেও, গাছের আচ্ছাদন এ পাহাড়কে ধস থেকে রক্ষা করে, কিন্তু পাহাড় দিন দিন ন্যাড়া হয়েছে।
সা¤প্রতিক বছর গুলোর পাহাড়ধস জনিত এই প্রাণহানির বিষয় বিশ্লেষণে অনুমান করা যায় যে, পাহাড় ধসের ভৌগলিক বিপর্যয় শুধুমাত্র পার্বত্য জেলাগুলোতে নয়, পাহাড় পরিবেষ্টিত বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধিকাংশ স্থানেই ঘটছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় ভৌগলিক দিক দিয়ে কিছুটা ভিন্ন। এখানে সমতল ভূমির পাশাপাশি উঁচু-নিচু, ছোট-বড় অনেক পাহাড় বা টিলা রয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড় গুলো সাধারণত মাটি এবং বালু মিশ্রিত, এসকল পাহাড়ের মাটি এটেল মাটির মত আঠালো নয়। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলো সাধারনত পৃথিবীর অন্যান্য কিছু কিছু অঞ্চলের পাহাড়গুলোর মতো পাথর পরিবেষ্টিত নয়। এই পাহাড়গুলোর মাটি কোন নির্দিষ্ট শক্ত অবলম্বনের অনুপস্থিতিতে ভারী বর্ষণের ফলে সহজে ধসে পড়ে। এখানে সহায়ক অবলম্বন বলতে ব্যাপক বনায়নই গ্রহণযোগ্য সমাধান। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া পার্বত্য চট্টগ্রামেও পড়েছে। এখানে আরো একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন । অনেক আগে দূর্গম পাহাড় এবং প্রত্যন্ত এলাকায় যখন কোন রাস্তা ঘাট ছিল না, পাহাড়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো মূল্য পেত না । সা¤প্রতিক কয়েক দশকের ক্রম উন্নয়নের অন্যতম হচ্ছে দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় রাস্তাঘাট তৈরী। বর্তমান সময়ে প্রত্যন্ত এলাকায় উপজাতীদের উৎপাদিত পণ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক উন্নয়নের ফলে শহর এলাকায় পরিবহন সহজেই সম্ভব হয়। উপজাতীগণ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভাল দাম পান এবং নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও ক্রমান্বয়ে আধুনিকতার সাথে মানিয়ে নিতে আগ্রহবোধ করেন। অর্থাৎ পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরী করা ছিল সময়ের দাবী। জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরীর ক্ষেত্রে পানি সঞ্চালনের জন্য উপযুক্ত কার্যকরী ড্রেন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়টি ভালভাবে নিশ্চিত করেছেন । এছাড়াও সময়ে সময়ে রাস্তা গুলোর রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা তারা ভালো ভাবেই করছেন। তাই, পাহাড় ধসের মূল কারন হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আধুনিকতার অন্যতম নিয়ামক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিক বাসস্থান তৈরী, পর্যটনের উন্নয়ন ইত্যাদি একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা সমীচিন নয় । চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০৭ সালের ভূমি ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে যে সমস্ত সমস্যা চিহ্নিত করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারী বর্ষণ, পাহাড়ের মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকা, উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, পাহাড় থেকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি এবং মাটি অপসারনের দুর্বলতা ইত্যাদি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭০ এবং ৮০ দশকে তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে সকল বাঙালীদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল, তাদের পরিবার প্রতি পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন খাস জমি থেকে সমতল ভূমি হলে ২.৫ একর আবার পাহাড় এবং সমতল মিশ্র ভূমি হলে ৪ একর ও সম্পূর্ণ পাহাড়ি ভূমি হলে ৫ একর করে জমির বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছিল । এ প্রসংগে উল্লেখ করা যেতে পারে, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এলাকার ৩ টি মৌজায় ১৮,৮৬৪ একর, বাবুছড়া এলাকার ৬ টি মৌজায় ১৭,৬৭৩ একর, বড় মেরুং এলাকার ২ টি মৌজায় ১১,৮৯৩ একর, ছোট মেরুং এলাকার ১ টি মৌজায় ১০,৪৮১ একর, খাগড়াছড়ি সদর এলাকার গোলাবাড়ী মৌজায় ১৯,৬১৬ একর, মহালছড়ি এলাকার ৭টি মৌজায় ২৬,৬২৫ একর, রামগড় এলাকার ২টি মৌজায় ২৬,৬৭৪ একর, আলুটিলা এলাকার ৯টি মৌজায় ২৯,৩৪৭ একর, মানিকছড়ি এলাকার ৭টি মৌজায় ২২,৫৪৪ একর, লক্ষীছড়ির ৫টি মৌজায় ১৩,১৬৫ একর, কাপ্তাই এলাকার ২টি মৌজায় ১৭,৮৭৯ একর, রাংগামাটি সদর এলাকার ৪টি মৌজায় ৭,২১৬ একর, বুড়িঘাট এলাকার ৬টি মৌজায় ১০,৫৯৪ একর, জুরাছড়ি এলাকার ৪টি মৌজায় ৯,৩০০ একর, ভূষনছড়া এলাকার ৬টি মৌজায় ২৬,৭১৭ একর, সুভলং এলাকার ২টি মৌজায় ১০,৯০৫ একর, লংগদু এলাকার ২টি মৌজায় ৮,৬৯৭ একর, কাচালং এলাকার ১টি মৌজায় ১৪,০০০ একর এবং আটারকছাড়া এলাকার ১টি মৌজায় ২,৬৩৩ একর জমি বাঙালীদের বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সময়ে শান্তিবাহিনীর আক্রমন এবং নিরাপত্তা জনিত কারনে অধিকাংশ বাঙালীগন সরকার কর্তৃক তাদের বন্দোবস্তিকৃত জমিগুলোতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পায়নি। ১৯৮৬ সাল পরবর্তী সময়ে বাঙালীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার গুচ্ছগ্রামে তাদের স্থানান্তর করা হয় । তবে সরকারী নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনেক বাঙালী অবৈধভাবে রাস্তা সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঘরবাড়ী তৈরী করে থাকছে। একই সাথে উপজাতীদের অনেকেই বাঙালীদের মতো পাহাড়ের পাদদেশে ঘরবাড়ী তৈরী করে বসবাস করছে। এ ক্ষেত্রে, উভয় স¤প্রদায়ই পাহাড়ের মাটি না কেটে খুটির উপর “টং ঘর’’ জাতীয় ঘরে বসবাস করছে না । রাঙামাটির ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ বলেন, পাহাড় ধস রক্ষায় কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বা কি করলে দ্রæত সুফল পাওয়া যাবে সে দিকে সংশ্লিষ্ট্রদের মনোযোগি হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া ভবিষ্যতে পাহাড় ধস ঠেকাতে কি ধরনের কাজ করা উচিত সে বিষয়ে পাহাড়ি ও বাঙালীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আন্যদিকে একই এলাকার শিতল চাকমা বলেন, পাহাড়ে বাঙালী ও পাহাড়িরা শান্তিতে বসবাস করতে আগ্রহী। কিন্তু কতিপয় মানুষ আমাদের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরি করছে। আমরা পাহাড়ে সুন্দরভাবে বাচতে চাই। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় ন্যাড়া হওয়ার পিছনে উপজাতীদের বহুল প্রচলিত জুম চাষই দায়ী। জুম চাষের জন্য একটি পাহাড়কে উপযোগী করার জন্য পাহাড়ের সমস্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তারপর ঐ জমিতে ক্রমান্বয়ে জুম চাষ করা হয়ূ। পূর্বে পার্বত্য এলাকায় যখন জনসংখ্যা কম ছিল পাহাড়ীরা এক বছরে একটি পাহাড় পুড়িয়ে জুম চাষ করার পর পরের বছরে অন্য একটি পাহড়ে জুম চাষ করতো। এভাবে প্রতি বছর পাহাড় পরিবর্তন করে প্রথম পাহাড়ে ফিরে আসতে তাদের ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগতো। তাই একটি পাহাড় জুম চাষের ফলে প্রথম বছর ভূমি ধসের ‘কারন’ তৈরী করলেও ১৫ থেকে ২০ বছর পর ঐ জমিতে ফিরে আসার কারনে মধ্যবর্তী বছরগুলোতে নতুন করে প্রাকৃতিক ভাবেই বনাঞ্চল তৈরী হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে উপজাতীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে ২ থেকে ৩ বছর পর পর একই পাহাড়ে পুনরায় জুম চাষ করার ফলে সেখানে প্র্রাকৃতিক ভাবে নতুন বনাঞ্চল তৈরী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। তাই পূর্বে সা¤প্রতিক বছরগুলোর মত এই রকম মারাতœকভাবে পাহাড় ধসের মত বিপর্যয় ঘটত না। জুম চাষ শুধুমাত্র উপজাতী জনগোষ্ঠীরা করে থাকে, বাংগালীরা জুম চাষে অভ্যস্ত নয় ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।