পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতে উজানের বর্ষণ ও ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে : চরম দুর্নীতিতে নাজুক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতার অভাব : পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তারা ব্যস্ত পকেট ‘উন্নয়নে’
শফিউল আলম : বাংলাদেশেরই ঠিক লাগোয়া আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যগুলো অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ভাসছে গত এক সপ্তাহেরও বেশিদিন ধরে। উজানের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল ধেয়ে আসছে হু হু করে। সেই সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বন্যামুক্ত করতে সবক’টি নদ-নদীর বাঁধ খুলে দেয়ায় দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল (বুধবার) শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকায় বিশেষত সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যদিও মঙ্গলবারের তুলনায় কমতির দিকে। তবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সতর্ক ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানিবৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অববাহিকার নদ-নদী, খালগুলোও উপচে যাচ্ছে। স্থানীয় বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা।
জনমনে বন্যার শঙ্কা-আতঙ্ক, পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণের মধ্যদিয়ে যে দুর্যোগময় অবস্থা বিরাজ করছে তাতে মাহে রমজানে এবং পবিত্র ঈদের আগে মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। হবিগঞ্জ ও মৌলবিবাজার শহর রক্ষা বাঁধের যথাক্রমে তিন ও দুই জায়গায় ভয়াবহ ফাটল ও ভাঙনের কারণে শহর-জনপদ বাঁচাতে রোজাদার এলাকাবাসী নিজেরাই মাটি কেটে, বস্তা ভরে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গত তিন দিন যাবত। এসব এলাকায় ঢল ও বান হঠাৎ করেই হয়নি। বরং ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ও দুর্যোগ কবলিতদের উদ্ধার সংস্থাগুলো প্রায় এক মাস আগে থেকেই আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুনাচল, মণিপুর, নাগাল্যান্ড (পার্বত্য দি সেভেন সিস্টার খ্যাত) অঞ্চলে এবার অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার সতর্কতা ও পূর্ণ প্রস্তুতি জারি রেখেছে।
উজানের ঢল ভারত থেকে নেমে আসবে, তদুপরি তাদের গেইট ও বাঁধগুলো ছেড়ে দেবে এই ধ্রুব আশঙ্কা সত্তে¡ও দেশের পাউবোর কর্তাব্যক্তিদের মাঝে আগাম কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ এহেন চরম দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সময়েই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক কথায় নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। নদ-নদী ভাঙন কী বাঁধের কোথায় কী অবস্থা তা চোখে দেখা আর কানে শোনার সময় পর্যন্ত তাদের নেই। অনেক ক্ষেত্রেই এসব কর্তারা অন্ধকারে এবং নির্বিকার এমনটি অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরই। পাউবো চলছে ঢিমেতালে শুধু তাই নয়; ‘কাজ’ না করে কিংবা জোড়াতালি দায়সারা মেরামত সেরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্তাদের যোগসাজশে অসাৎ ঠিকাদারর আর কর্তারা সবসময়ই ব্যস্ত নিজেদের পকেট ‘উন্নয়নে’। নদ-নদী এলাকার তেমন কোথাও পাউবো’র বাঁধ টেকসই করে নির্মাণের খবর মিলে না। তাদের কর্মকান্ড কীভাবে চলে তার খবরদারির জন্য যেন দেখার কেউই নেই। নেই কোন জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতার বালাই। এতে করে স্বেচ্ছাচারিতাই পাউবোতে ‘নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ভুক্তভোগী নদ-নদী তীরবর্তী ভাঙন এবং বন্যা-প্রবণ এলাকার লাখ লাখ মানুষ। ফলে তাদের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাওড়ের ব্যর্থতা দগদগে
পাউবো’র করিৎকর্মা কর্তাদের সীমাহীন অদক্ষতা, ব্যর্থতা, দায়-দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার খুব নিকট অতীতের উদাহরণও এখনও দগদগে। তা হলো, মাত্র গেল এপ্রিল মাসে উত্তর-পূর্ব ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল, অতিবৃষ্টি এবং দেশের অভ্যন্তরে অতিবর্ষণে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে কৃষকের ধানের চুড়ান্ত সর্বনাশ ঘটে। সেই সাথে হাওরের মাছ, হাঁস-মুরগিসহ কৃষি-খামারের ভয়াবহ বিপর্যয়ের ক্ষত এখনও শুকায়নি। হাওরে আজও চলছে শূণ্যতার হাহাকার, অভাব-অনটন আর জীবনযন্ত্রণা। যা হাওড় অঞ্চলের ইতিহাসে ভয়াবহতম দুর্যোগ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অথচ পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্তারা এই বিপর্যয় এড়ানোর ক্ষেত্রে যথোচিত দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন অন্ততপক্ষে দুইটি ক্ষেত্রে। এক. ভারতীয় বর্ষণ ও ঢল দেশের বিশাল হাওড় অঞ্চলকে সম্পূর্ণ ভাসিয়ে দেবে এমনটি পূর্বাভাস দেয়া হয়নি। দুই. হাওড়ের বাঁধগুলো নির্মিত হয়েছিল নয়-ছয় দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে এবং তা ছিল জরাজীর্ণ ও নড়বড়ে। নির্মাণ কাজে চলে চরম গাফিলতি, ফাঁকিঝুকি, শুভঙ্করের ফাঁকি। এতে করে বানের পানির প্রথম ধাক্কায় বিলীন হয়ে গেছে। এসব নিয়ে রুটিন মাফিক ‘তদন্ত’ হলেও এর পেছনে দায়ী কারা তা আড়ালে এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাছাড়া মাঝেমধ্যে দেশের কোথাও কখনও বন্যা এসে হামলে পড়লেই পাউবোর কুম্ভকর্ণ কর্তাদের টনক নড়ে। আর তখনই শুরু হয় দৌঁড়ঝাঁপ। তবে বিলম্বের এহেন তোড়জোড়ে বন্যার্ত মানুষের চরম সর্বনাশ ঘটে যায়।
‘নদী মেখলা’ বাংলাদেশে পাউবো’র কাজে পুকুর চুরি, দুর্নীতি, অনিয়ম আর সীমাহীন অবহেলার নজির ভুরি ভুরি। এতে করে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম-জনপদ। তাদের নেই কোনো সুদূরপ্রসারি ভিশন কিংবা মিশন। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আদি বাণিজ্যিক এলাকা ও ‘নাভি’ হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদ। সেই আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে বৃহত্তর হালিশহর, সাগরিকা, বন্দরকলোনী, কাটগড়, পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় ডুবভাসি করছে। লাখো মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। অথচ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নগর বিশেষজ্ঞদের বারংবার দাবি-সুপারিশ পাশ কাটিয়ে পাউবো’র করিৎকর্মা কর্তারা বহুল আলোচিত শহর রক্ষা বাঁধ উঁচু ও টেকসই করে নির্মাণের উদ্যোগ হিমাগারে পড়ে আছে। চাটগাঁবাসীর পানিবদ্ধতার সঙ্কট যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। নগরীর অগণিত উপকূলীয় এলাকাবাসী রয়েছেন দুর্যোগ আতঙ্কে।
এদিকে ভারতে উজানের ঢল, অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে আসছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ এক মাসেরও বেশি আগে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ প্রধান জানিয়েছিলেন, আবহাওয়ারাজ্যে এল-নিনোর প্রভাব বলয় হ্রাস পাওয়ার ফলে এবার ভারতে বর্ষার বর্ষণ বেশি হবে। সেখানে দুর্যোগের সমানতালে সর্বোচ্চ সতর্কতাও অব্যাহত রয়েছে। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, এ মাসে (আষাঢ়) দেশের উত্তরাঞ্চল (রাজশাহী-রংপুর), মধ্যাঞ্চল (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ, কুমিল্লা ও আশপাশ) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বৃহত্তর সিলেট) কিছু কিছু জায়গায় ‘স্বাভাবিক’ বন্যা হতে পারে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলজনিত সম্ভাব্য বন্যার বেশ আগেভাগে যেখানে পূর্বাভাস দেয়ার কথা সেখানে পাউবো যেন অন্ধকারে। হবিগঞ্জে খোয়াই নদী বিপদসীমা অতিক্রমের পরই বন্যার ধাক্কা এসে পড়তেই সংস্থাটির যেন হুঁশ ফিরে আসে। যা সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিত করে তুলেছে।
বন্যার শঙ্কা যেভাবে-
উজানে ভারতে টানা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের দিকে ক্রমাগত ধেয়ে আসছে বানের পানি। বন্যার চাপ কমাতে ভারত একে একে সবক’টি বাঁধ খুলে দিয়েছে। এ কারণে দেশের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা। গতকাল বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকায় বৃহত্তর সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, ধলাই, মনুসহ সকল নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তা মঙ্গলবারের তুলনায় কমে এসেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) প্রবাহ আরো হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপদসীমার ৮ সেমি উপরে, কুশিয়ারা শেওলা পয়েন্টে ১৬ সেমি উপরে, শেরপুরে ৪০ সেমি উপরে রয়েছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির প্রবণতা এখন পর্যন্ত নেতিবাচক অবস্থার আলামত বহন করছে। কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা আরও জানান, পানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা স্পষ্ট হতে আর দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। যদিও এখনো কোথাও পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৬ সেমি বেড়েছে (তবে বিপদসীমার ২০৩ সেমি নিচে)। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বেড়েছে ৩১ সেমি (বিপদসীমার ১১১ সেমি নিচে)। সিরাজগঞ্জে ২৪ সেমি উপরে (বিপদসীমার ১৩১ সেমি নিচে) অবস্থান করছে। তবে পানি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের মধ্যাঞ্চল আগামী সপ্তাহ নাগাদ বন্যা কবলিত হতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, সিকিম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অধিক সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যার ধকল এসে পড়তে পারে ভাটিতে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোতে। তবে ভারত উপরোক্ত অঞ্চলগুলোতে বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও ধসের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও সতর্কতা বজায় রেখেছে অনেক আগে থেকেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।