Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ছে তরঙ্গের দাম

অভিন্ন নীতিমালায় টুজি থ্রিজি তরঙ্গ নিলাম

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : জটিলতা দূর করতে অভিন্ন নীতিমালায় সকল ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে টুজি ও থ্রিজি সেবার জন্য ব্যবহৃত ই-জিএসএম ৯০০ মেগাহার্জ (এক্সটেনডেড গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল), ১৮০০ মেগাহার্জ ও ২১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ একই নীতিমালার আওতায় আসছে। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশ (্অ্যামটব) এর পক্ষ থেকে তরঙ্গের দাম কমানোর দাবি জানানো হলেও নতুন নীতিমালায় বাড়ানো হয়েছে তরঙ্গের দামও। ২০১৩ সালের পর এবার তরঙ্গ নিলাম হতে যাওয়ায় সময়ের সাথে মুদ্রার মান বিবেচনায় তরঙ্গের ভিত্তি মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রস্তাবিত এই নীতিমালায় পরবর্তীতে থাকছে টেকনিউট্রালিটির সুযোগও। এর আগে প্রতিটি ব্যান্ডের তরঙ্গের জন্য পৃথক পৃথক নীতিমালা করে তা নিলাম করা হতো। ইতোমধ্যে পূর্বের পৃথক তিনটি নীতিমালার পরিবর্তে একটি একক স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করেছে বিটিআরসি। খসড়া নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।  
মূল্য বৃদ্ধির পর ই-জিএসএম ৯০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গ ৩০ মিলিয়ন, ১৮০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জ ২৫ মিলিয়নের পরিবর্তে ৩৫ মিলিয়ন এবং ২১০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জ ২৫ মিলিয়নের পরিবর্তে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিআরসিকে নিলামযোগ্য সকল টুজি ও থ্রিজি তরঙ্গ একীভূত করা, টেক নিউট্রালিটির জন্য বিবেচনা করা এবং নিলামের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। এর ফলে টুজি ও থ্রিজি সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় তরঙ্গ নিলামের নীতিমালাসমূহে সংশোধন/সংযোজনের জন্য খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুতকরণের লক্ষ্যে বিটিআরসি গত ১৪ মার্চ একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি ৩০ মার্চ ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে তরঙ্গ নিলামের জন্য ইতোপূর্বে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত গাইডলাইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন/সংযোজন করে। ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে ওয়ার্ল্ডটেলকে বরাদ্দ দেয়া ৭.৪ মেগাহার্জ তরঙ্গ বাতিল করে তা নিলামের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এছাড়া কমিটির প্রস্তুত করা গাইডলাইন এবং প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সভায় তরঙ্গের মূল্য নির্ধারণ, গাইডলাইন অনুমোদন দেয়া হয়।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানা যায়, ওই কমিটি তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গের জন্য তিনটি পৃথক গাইডলাইন প্রণয়নের কথা বলে। তবে কমিশনের লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগ জানায়, শুধুমাত্র তরঙ্গ নিলামের জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ডে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অংশ প্রণয়নের কোন প্রয়োজন নাই। কোন কারণে একটি ব্যান্ডে তরঙ্গ নিলামের অংশে কোন জটিলতার উদ্ভব হলে সম্পূর্ণ তরঙ্গ নিলাম কার্যক্রমই ব্যহত হতে পারে। জটিলতা পরিহার করার জন্য লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগ তিনটি অংশকে একীভূত করে প্রয়োজনীয় সংশোধন/সংযোজন/ বিয়োজন/পরিমার্জন/পরিবর্ধন করার কথা বলে। পরবর্তীতে লিগ্যাল বিভাগ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গাইডলাইন প্রস্তুত করে। ওই গাইডলাইনে তরঙ্গ ফি সংক্রান্ত কারিগরি, কারিগরি এবং তরঙ্গ শর্ত সংক্রান্ত বিষয়ে কোন সংশোধন করা হয়নি। তবে একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আইনগত বিষয় মূল্যায়ন শর্ত প্রদান, তরঙ্গ লাইসেন্স ফরম্যাট সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়। ওই নীতিমালায় কমিশন অনুমোদন করে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে।
তরঙ্গের মূল্য নির্ধারণ: তরঙ্গের মূল্য কমানোর জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকেও চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। তবে নতুন নীতিমালায় পূর্বের তুলনায় তরঙ্গের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিটিআরসি বলছে, তরঙ্গের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কমিটি অন্যান্য দেশের নিলামের ভিত্তিমূল্য, বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা, রেভিনিউ, বিনিয়োগ (বিটিএস সংখ্যা, মাইক্রোওয়েভ লিংক সংখ্যা, নেটওয়ার্ক) এবং তরঙ্গের প্রতি বিনিয়োগ ইত্যাদি বিবেচনা করেছে। জিএসএমএ রিপোর্ট অনুযায়ি ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ইকো সিস্টেম সবচেয়ে বেশি ডেভেলপ করেছে। তাই অপারেটররাও স্বল্প বিনিয়োগে এই ব্যান্ডে ফোরজি/এলটিই সেবা দিতে পারবে। নতুন নীতিমালায় টুজি ও থ্রিজি সেবার জন্য ব্যবহৃত তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গেরই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর মধ্যে ই-জিএসএম ৯০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জের ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৮০০ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জের ভিত্তি মূল্য ৩৫ মিলিয়ন এবং ২১০০ ব্যান্ডের তরঙ্গ প্রতি মেগাহার্জে ২৭ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। এর মধ্যে ই-জিএসএম ব্যান্ডের কভারেজ সবচেয়ে বেশি হলেও আসন্ন নিলামে প্রস্তাবিত ৩.৪ মেগাহার্জ তরঙ্গে সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় আংশিক তরঙ্গ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এছাড়াও এ ব্যান্ডের তরঙ্গের স্বল্পতার কারণে বøকগুলি ছোট সাইজের। এ সকল সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে এই ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল ব্যান্ড হিসেবে পরিচিত। এই ব্যান্ডে ইকোসিস্টেম সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত। এছাড়া টেকনোলজি নিউট্রালিটি প্রদান করা হলে এই তরঙ্গ ব্যান্ডের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে এবং কম বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। তাই ইতোপূর্বে সরকার অনুমোদিত প্রতিমেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ২৫ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি করে টেকনোলজি নিউট্রালিটিসহ ৩৫ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
২১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ আগে থেকেই টেকনোলজি নিউট্রালিটি দেয়া ছিল। ২০১৫ সালে এই ব্যান্ডের তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার। সময়ের সাথে মুদ্রার মান বিবেচনা করে এই ব্যান্ডের তরঙ্গের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ মিলিয়ন ডলার।
নিলামযোগ্য তরঙ্গ: নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কমিশনের কাছে নিলামযোগ্য ৪৬.৪ মেগাহার্জ তরঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে ই-জিএসএম ব্যান্ডের ৩.৪, ১৮০০ ব্যান্ডের ১৮ এবং ২১০০ ব্যান্ডের ২৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ নিলামের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
তরঙ্গ রূপান্তরে ফি: বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ব্যবহৃত তরঙ্গসমূহে টেকনোলজি নিউট্রাল তরঙ্গে রূপান্তর করতে কনভারশন ফি (রূপান্তর ফি) নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। প্রস্তাবিত টেকনোলজি নিউট্রালিটিসহ প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। টেকনোলজি নিউট্রালিটি ছাড়া প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ২৫ মিলিয়ন ডলার। টেকনিউট্রালিটিসহ ই-জিএসএম ব্যান্ডের তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ৩০ মিলিয়ন এবং ১৮০০ ব্যান্ডের ভিত্তি মূল্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া তরঙ্গের কনভারশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, অন্যান্য দেশের নিলামের ভিত্তিমূল্যসহ অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অপারেটরদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সব দাবিতো পূরণ করতে পারবো না। তবে যতটুকু সম্ভব ছাড় দিয়েই এটি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে তরঙ্গের যে মূল্য ছিল এখন চার বছর পর স্বাভাবিকভাবেই সেই মূল্যে সেটি বিক্রি হবে না। আমরা সরকারের এবং অপারেটরের সবার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তরঙ্গ মূল্য নির্ধারণ করছি। আশা করছি অপারেটরদের জন্য এটি বোঝা হবে না। ####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তরঙ্গ

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ