Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তরঙ্গ নিলামের ব্যর্থতা প্রভাব ফেলেছে রাজস্বে

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : তরঙ্গ নিলামের ব্যর্থতা প্রভাব ফেলেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায়। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া সাত হাজার টাকার (তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে অর্জিত রাজস্বসহ) মধ্যে আদায় হয়েছে ৪ হাজার টাকা। তাই রাজস্ব আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও তরঙ্গ নিলাম আয়োজন করতে না পারায় ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার অর্জনে সবকিছু ঠিক থাকলেও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে স্পেকট্রাম নিলাম অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা। যদিও কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তরঙ্গ হচ্ছে জাতীয় সম্পদ, এটি যে কোনো সময় নিলামে দিলেই ওই রাজস্ব আদায় হবে। এজন্য এটিকে ঘাটতি হিসেবে দেখা যাবে না। নিয়মিত যেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা তা ইতোমধ্যে অর্জন করে ফেলেছে বিটিআরসি। যে অল্প পরিমাণ রাজস্ব আদায় বাকি আছে, তা জুলাই মাসের মধ্যেই আদায় হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন তারা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া চাপে ফেলেছে কমিশনকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের কাছেই বকেয়া রয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া বন্ধ থাকা পাঁচ আইজিডব্লিউ (ইন্টান্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটর) অপারেটরদের কাছে ৬০০ কোটিসহ মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল ও ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়নের কাছে রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা বকেয়া। ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মতো ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিটিআরসি’র রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সংযুক্ত ছিল কমিশনের কাছে থাকা ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজের অতিরিক্ত তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করার কথাও উল্লেখ করা হয়। যদিও কমিশনকে প্রাথমিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৪ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। আর তরঙ্গ নিলামে ধরা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের রাজস্বের মধ্যে ইতোমধ্যে বিটিআরসি ৪ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। জরিমানা ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ জুলাই পর্যন্ত রাজস্ব পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতেও জরিমানাসহ পরিশোধ করতে পারবেন। বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তা জানান, বিটিআরসিকে দেয়া রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। যে অল্প পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া রয়েছে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদায় হয়ে যাবে। তরঙ্গ নিলামের বিষয়ে তিনি বলেন, তরঙ্গ হচ্ছে জাতীয় সম্পদ। এটা যে কোনো সময় নিলামে দিয়ে ওই রাজস্ব আদায় করা যাবে। এজন্য এটাকে ঘাটতি হিসেবে দেখা হচ্ছে না। যদিও ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বেতার তরঙ্গ নিলাম থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আশা করেছিল সরকার। তাই তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দিয়ে গত জানুয়ারিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নিলাম অনুষ্ঠান করা গেলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে বলেও সেসময় চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
কমিশন টেলিযোগাযোগ খাতের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নিয়মিত রাজস্ব আদায় করতে পারলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের কাছেই বকেয়া রয়েছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। আরেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানী লিমিটেডের (বিটিসিএল) কাছে বিটিআরসি’র বকেয়া ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বন্ধ থাকা পাঁচ আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরের কাছে লাইসেন্স ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং, ভ্যাট ও বিলম্ব ফিসহ সরকারের রাজস্ব বকেয়া রয়েছে ৬৩১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করায় ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা করেছে কমিশন। এছাড়া বেসরকারি মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের কাছে ২৭৪ কোটি টাকা ও ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়নের কাছে ৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা টাকা বকেয়া রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিটিআরসি’র রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পিত ১৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিটিআরসি ১০ হাজার ৮৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। সে বছর থ্রিজি স্পেকট্রাম নিলাম এবং ২জি লাইসেন্স নবায়ন ফি’র কারণেই এত রাজস্ব সংগ্রহ করতে পেরেছিল কমিশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তরঙ্গ নিলামের ব্যর্থতা প্রভাব ফেলেছে রাজস্বে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ