Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুফলের অপেক্ষায় গ্রাহকরা

১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

টুজি, থ্রিজি-ফোরজির পর এখন ফাইভজির যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করেছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার হবে শিল্পক্ষেত্রে। তবে যাদের জন্য ফোরজি সেবা সেই গ্রাহকরাই এখনো বঞ্চিত আছে মানসম্পন্ন সেবা থেকে। কথা বলতে গেলে নিয়মিত কলড্রপ, মিউট কল (কল কানেক্ট হলেও কোথা শোনা না যাওয়া), নেটওয়ার্ক না থাকা, মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতি, ভিডিও চলার সময় বাফারিংসহ সেবা পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সেবার কারণে প্রতিদিনই ভূক্তভোগীদের শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিতে। হাজারো অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেইসবুক পেজে। খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারও অপারেটরদের সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নিম্ন মানের সেবার কারণ হিসেবে অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয় স্বল্প তরঙ্গ দিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে এই বিপত্তি। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নতুন করে তরঙ্গ নিলাম করেছে বিটিআরসি। ২২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে তোলা হলেও চার অপারেটর মিলে কিনেছে ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। এতে সরকারের আয় হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। নিলাম হওয়ার তরঙ্গের মধ্যে (২.৩ এবং ২.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে) গ্রামীণফোন ও রবি কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ করে। বাংলালিংক ও টেলিটক ৪০ এবং ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। নতুন করে তরঙ্গ কেনার ফলে সব অপারেটরের মোট তরঙ্গের পরিমাণ হবে গ্রামীণফোনের ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ, রবির ১০৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ৮০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটকের ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ। নতুন তরঙ্গ দিয়ে ফাইভ-জি ছাড়াও থ্রিজি এবং ফোরজি নেটওয়ার্কে সেবা দিতে পারবে অপারেটররা।
নিলামে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা আয় ও অপারেটরদের তরঙ্গ সমৃদ্ধ হলেও গ্রাহকদের প্রশ্ন সেবার মান বাড়বে কবে? আসিফুর রহমান নামে গ্রামীণফোনের এক গ্রাহক বলেন, সম্প্রতি শুনলাম তরঙ্গ নিলাম হয়েছে এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার তরঙ্গ বিক্রি হয়েছে কিন্তু গ্রাহক সেবা বাড়েনি। তিনি বলেন, শুধু তরঙ্গ নিলাম করা নয়, আমরা গ্রাহকরা টাকা দিয়ে সেবা কিনি সেটা মানসম্পন্ন পাচ্ছি কিনা সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও বিটিআরসির।
মাসুদ রানা নামে আরেক গ্রাহক বলেন, অপারেটরগুলোর সদিচ্ছা থাকলে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা জবাবদিহিতার আওতায় আনলে আমরা ভালো সেবা পেতাম। তবে অপারেটর, বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন নতুন তরঙ্গ কেনার পর অপারেটরগুলোর তরঙ্গ দ্বিগুণ হয়েছে। এতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভালো হবে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহীউদ্দিন আহমদ বলেন, নতুন করে তরঙ্গ কেনার পর অপারেটরগুলোর তরঙ্গের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এখন চাইলে তারা ফোরজি সেবা ভালোভাবে দিতে পারবে। তাবে সেটি দিতেও ছয় মাসের বেশি সময় লেগে যাবে। তবে গ্রাহকরা নিশ্চিতভাবে উন্নত সেবা পাবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, যে পরিমাণ তরঙ্গ এখন অপারেটরদের হাতে আছে তাতে তাদের ভালো সেবা দেয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে গ্রাহকরা তা পাবে। কারণ ডিভাইসের স্বল্পতা আছে, নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে অপারেটরদের আরো বিনিয়োগ করতে হবে, ইক্যুইপমেন্ট বসানো, সবখানে অপটিক্যাল ফাইবার সংযুক্ত হওয়াসহ নানা ইস্যু আছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলোর যে তরঙ্গ ছিল এখন থেকে তা সবার দ্বিগুণ হয়ে গেলো। ফলে গ্রাহক এখন থেকে মানসম্মত সেবা পাবে, এটা আশা করা যায়। তবে অপারেটরদের ফাইবার অ্যাক্টিভিটিও বাড়াতে হবে। কেননা আমাদের লক্ষ্য হল মোবাইল অপারেটরগুলোর সেবার মান নিশ্চিত করা। তারা যেন জনসাধারণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, এখন আর অপারেটরদের তরঙ্গের কোনও ঘাটতি থাকবে না।
বর্তমানে এক মেগাহার্টজ স্পেকট্রামে গ্রামীণফোন ১৪ লাখ, রবি ১১ লাখ এবং বাংলালিংক প্রায় ৯ লাখ গ্রাহককে সেবা দেয়। নতুন স্পেকট্রাম যুক্ত হওয়ার পরে গ্রামীণফোন ৭ লাখ ৭০ হাজার, রবি ৫ লাখ ২০ হাজার, বাংলালিংক ৪ লাখ ৭০ হাজার এবং টেলিটক ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহককে সেবা দিতে পারবে। ৯ মাসের মধ্যে এই স্পেকট্রামে ফাইভ-জি সেবা চালু করার কথা বলা হয়েছে। যদিও অপারেটররা বলছেন, পরীক্ষামূলক ফাইভ-জি চালু করতে হলে তাদের ৯ থেকে ১২ মাস সময় লেগে যাবে। যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমোদনসহ তা আমদানি করতে হবে। ইমপ্লিমেন্টেশন করতে সময় লাগবে। বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে বিষয়টি সহজ হবে না।
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা ত্বরান্বিত করতে সর্বোচ্চ ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে গ্রামীণফোন। তিনি বলেন, এই নিলাম সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। দেশের মানুষকে মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে সরকারের স্বদিচ্ছার এটি আরও একটি বহি:প্রকাশ। দেশের মানুষের ডিজিটাল সম্ভাবনা উম্মোচনে অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে ইয়াসির আজমান বলেন, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার আরও উন্নয়ন এবং সেবার মান উন্নয়ন সব সময়ই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। ভবিষৎতে নেটওয়ার্কে আমাদের তরঙ্গের ব্যবহার গ্রাহকদের আরও উন্নত ফোরজি সেবা প্রদানে সহায়ক হবে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত এই নিলাম থেকে আমরা ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, এই তরঙ্গ আমাদের নেটওয়ার্কে সেবার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে এবং আমাদের গ্রাহকদের আরও ভাল ডিজিটাল অভিজ্ঞতা পেতে সাহায্য করবে।
বাংলালিংক-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এরিক অস বলেন, এই তরঙ্গ বাংলালিংক-এর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দ্রুততর ইন্টারনেট এবং উন্নত মানের ডিজিটাল সেবা প্রদানে সহায়ক হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ