পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতে অতিবর্ষণের সতর্কতা : উজানের ঢলে ভাসবে ভাটি : প্রয়োজন পূর্ব-প্রস্তুতি : সাগরে ফের ঘনীভূত হচ্ছে লঘুচাপ
শফিউল আলম : ‘দি সেভেন সিস্টার’ উত্তর-পূর্ব ভারতে এবারের বর্ষা মৌসুমে ঘোর বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘনঘোর মেঘমালা সঞ্চারিত হয়ে অতিবৃষ্টির আবহ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বিশাল এই অঞ্চলজুড়ে। বাংলাদেশের লাগোয়া বিশেষ করে পার্বত্যাঞ্চল আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম প্রদেশগুলোতে ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল, ধস, আকস্মিক বন্যার আগাম সতর্কতা জারি করেছে সেদেশের সরকারি প্রশাসন। জনগণের জানমাল রক্ষায় গ্রহণ করা হয়েছে আগাম প্রস্তুতি ও সতর্ককামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা। আসাম এমনিতেই পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃষ্টি-প্রবণ। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সেসব অঞ্চল অর্থাৎ উজানভাগ থেকে যদি পাহাড়ি ঢল-বন্যা নেমে আসে সরাসরি তার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ভাটিতে। এতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল ও আকম্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও চলতি জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানায়, এ মাসে বিশেষত আষাঢ়ে দেশের উত্তরাঞ্চল (রাজশাহী-রংপুর), মধ্যাঞ্চল (ঢাকা-কুমিল্লা ও আশপাশ) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বৃহত্তর সিলেট) কিছু কিছু স্থানে ‘স্বাভাবিক’ বন্যা হতে পারে। সম্ভাব্য এই দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ মুহূর্তে প্রয়োজন পূর্ব-প্রস্তুতি ও সতর্কীকরণের। তবে তা এখনও অনুপস্থিত।
এদিকে গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাতের পরবর্তী সময়ে প্রবল বৃষ্টি-ঝরানো, ঝড় ও জোয়ার সৃষ্টিকারী একটি মৌসুমি নি¤œচাপ গত ১২ জুন সোমবার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব অতিক্রম করে যায়। সেই মৌসুমি নি¤œচাপের জের ও প্রভাব না কাটতেই গতকাল (শুক্রবার) উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ফের লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি নি¤œচাপে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এর প্রভাবে সমগ্র উপকূলভাগসহ দেশের প্রায় সর্বত্র মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ এবং এ কারণে পাহাড়ি ঢল, আকস্মিক বন্যা ও ফের পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি জুনের পূর্বাভাসে জানানো হয়, এ মাসে সাগরে ১ থেকে ২টি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা প্রবল বৃষ্টি ঝরাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আর তখন যদি ফের মৌসুমি নি¤œচাপ সঙ্গী হয় তাহলে দেশে এবার বর্ষা মৌসুমে মুষলধারে টানা বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন এলাকা আকস্মিক অথবা নিয়মিত বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সাথে ভারতীয় পাহাড়ি ঢল-বন্যার পানি ভাটিতে নিচের দিকে নেমে আসলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এরজন্য আগাম সতর্কতার তাগিদ বিশেষজ্ঞ মহলের।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর ও গণমাধ্যম জানিয়েছে, এবারের বর্ষা মৌসুমজুড়ে (জুন-জুলাই-আগস্ট) বিশেষ করে হিমালয় পাদদেশীয় ও উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানকার সাতটি রাজ্য হচ্ছেÑ আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, মনিপুর, অরুনাচল ও নাগাল্যান্ড। উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যময় এসব এলাকার উজানে ভারী বর্ষণ হলে ভাটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীর দু’কুল ছাপিয়ে আকস্মিক অথবা নিয়মিত বন্যার শঙ্কা আছে। একই কারণে পাহাড়ি ঢলেও বন্যা কবলিত হতে পারে দেশের কোনো কোনো অঞ্চল। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগের পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে দেশটিতে বর্ষাজুড়ে হতে পারে অতিবৃষ্টি। তবে এরআগে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বর্ষার অনেক আগেই পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, এল-নিনোর প্রভাবে দেশটিতে বর্ষায় গত ৫০ বছরের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের চেয়ে ৯৬ শতাংশ (অর্থাৎ ৪ শতাংশ কম) হতে পারে। আবহাওয়ামÐলে এল-নিনোর প্রভাব বলয় হ্রাসের ফলে ভারতে বেশি বৃষ্টির আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরোর পর্যবেক্ষণেও জানানো হয়, আবহাওয়ার উপর এল-নিনোর প্রভাব কমে এসেছে। ‘এল-নিনো’ হচ্ছে পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্রমাগত উষ্ণায়নের প্রভাবে সুদূর বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতে ঘাটতি এমনকি অনাবৃষ্টির নিয়ামক অবস্থা সৃষ্টি। এল-নিনো স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আবহ রোধকারী আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশেষ একটি অবস্থা। এতে করে বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুমালার সৃজন ও আগমন ব্যাহত, বিলম্বিত কিংবা সংকুচিত হয়। বৃষ্টিপাতের আবহ দীর্ঘদিনের জন্য বিঘিœত হতে পারে আবহাওয়ায় এল-নিনো পরিস্থিতির কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইদানীং এল-নিনোর প্রভাব কমে এসেছে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, জুনের (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে দেশের উত্তর, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে বন্যার সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। জুনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতে এ বন্যা হতে পারে এবং যা বর্তমান সময়ের ‘স্বাভাবিক’ বন্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।
পাহাড় ধসের সতর্কতা
আবহাওয়া বিভাগ গতকাল সতর্কবার্তায় জানায়, সক্রিয় থাকা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গতকাল বিকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় : বৃষ্টি অব্যাহত
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশে আরো ৩ থেকে ৪ দিন মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আষাঢ়ের আগেই বর্ষার মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় থাকায় গতকালও দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। সেই সাথে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় এলাকায় বয়ে গেছে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া। আজও (শনিবার) দেশের অধিকাংশ স্থানে বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কুতুবদিয়ায় ১২৫ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৩৫, ময়মনসিংহে ২৫, চট্টগ্রামে ১০৫, সিলেটে ২৮, রাজশাহীতে ৭, রংপুরে ৮, খুলনায় ৫৮, বরিশালে ১০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি আকারে বিরাজ করছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাভাস মতে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।