Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

বৃষ্টি আর যানজটের কবলে ঈদ বাজার

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : আষাঢ়ের বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, ওয়ারী, লাক্ষিবাজার, রায়সাহেব বাজার, লালবাগ, মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ি, সুত্রাপুর, রামপুরা, মুগদাপাড়া, মানিকনগার মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি কাদা পানিতে একাকার। সমুদ্রে লঘূচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত। প্রবল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তির। সকাল থেকেই নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। সরকারি ছুটির দিনে ঈদ কেনাকাটা ও প্রয়োজনীয় কাজে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারলে কোথয়ও যানজট আবার কোথায়ও যানবাহন সঙ্কট। রাস্তায় পর্যাপ্ত রিকশা চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রিদের।
গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই কখনো ভারি বর্ষণ আবার কখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে দশটার পর থেকে মুশুলধারে ভারি বৃষ্টি হতে থাকে। এতে ঈদ কেনাকাটা করতে বের হওয়া মার্কেটগামী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েন। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় বাস, ট্যাক্সিসহ গণপরিবহন কম দেখা গেছে। খানাখন্দকেভরা রাস্তায় রিকশা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ছোট বড় আহতও হয়েছে। স্যুয়ারেজ লাইন ও সিটি কর্পোরেশেনের ড্রেনের উপচে পড়া পানি রাস্তাঘাট ও বাসা বাড়ির পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
ঈদ আসতে আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। নগরবাসী তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরতে বা কেনাকাটা করতে বের হচ্ছেন, কিন্তু তাদের এই ইচ্ছায় বাধ সাধছে বৃষ্টি ও যানজটে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও সন্ধ্যার পর ঈদ কেনা কাটা করতে বের হওয়া জন¯্রােতে এই চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোজার দিনে সন্ধ্যার পরেই রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য বের হন নগরবাসী। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাসের পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও বের হন তারা। এ জন্য মার্কেটগুলো সংলগ্ন প্রতিটি সড়কেই বাড়ছে তীব্র যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এই যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে খোদ ট্রাফিক পুলিশও।
ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে যেসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয় সেগুলো হচ্ছে-পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, নয়াপল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেট, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, নিউ বঙ্গবাজার, মালিবাগ ও মৌচাকের টুইন টাওয়ার, হোসাফ শপিং সেন্টার, রাপা প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, রাজধানী সুপার মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডির রাইফেল স্কয়ার, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, হকার্স মার্কেট ও চাঁদনী চক মার্কেটসহ বহু এলাকায়। এছাড়া ফার্মগেট, মিরপুর, ধানমন্ডি, বারিধারা, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এসব এলাকার মার্কেটগুলো থেকে কয়েক লাখ মানুষ ঈদের কেনাকাটা করে থাকেন।
মার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। ক্রেতারা তাদের গাড়িগুলো সড়কের পাশে কিংবা ফুটপাতের ওপরে রেখেই মার্কেটে প্রবেশ করেন। যে কারণে রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রাফিক সিগন্যাল অতিক্রম করা যায় না। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর পলওয়েল ও সিটি হার্ট মার্কেট এলাকাতে গিয়ে দেখা গেছে, এ এলাকার মার্কেটগুলোতে পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এতে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে বাধ্য হয়েই সড়ক কিংবা ফুটপাতে পার্কিং করতে হয়।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পলওয়েল মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সিমিন আক্তার বলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। গাড়ি কোথায় রাখবো? বাধ্য হয়েই রাস্তায় পার্কিং করেছি। এখন জ্যাম লাগলে আমরা কি করবো? এসব ভবন অনুমোদন দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্টদের উচিৎ ছিল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা।
বসুন্ধরা সিটিতে ঈদবাজার করতে আসা ধানমন্ডির বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সুমা বলেন, যেতে চেয়েছিলাম নিউ মার্কেটে। জ্যাম এড়াতে আসি বসুন্ধরায়। কিন্তু ৩২ নম্বর থেকে এখানে আসতে সময় লেগেছে পাক্কা এক ঘণ্টা। সবাই রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করে রাখে। কেউ কিছু বলে না।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটার সময় ব্যাংক পাড়া মতিঝিলের বনশিল্প ভবন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আশপাশে দেখা গেছে হাঁটু পানি। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিপাতে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানী। অধিকাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতার। সময় মত পানি নেমে না যাওয়ায় প্রধান প্রধান সড়কে পানি জমে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর মৌচাক, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ২৭, আজিমপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়গুলোতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। আবার পানিবদ্ধতার কারণে কোথাও কোথাও যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে ফকিরেরপুলে একটি হিউম্যান হলার বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বৃষ্টিতে রাজধানীর উত্তরা, বারিধারা, বাড্ডা, ফকিরেরপুল, পল্টন, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, বসুন্ধরা সিটির সামনে, মিরপুর, মহাখালী, কাজীপাড়া, শ্যামলী, শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, ধানমন্ডি ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে পানি জমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। অথচ এ নিয়ে মেয়রদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই।
ইফতারের আগে নানা প্রয়োজনিয় কাজে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। জমে থাকা পানির কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বাসে উঠার সিড়ি পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। এতে বাসে উঠা-নামা করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।
ঈদের কেনাকাটায় অনেকখানি বাদ সেধেছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে ঈদ মার্কেটের বিক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে রমজানের শুরু থেকেই কেনাকাটায় থাকে জমজমাট। আর ছুটির দিন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু দিনভর বৃষ্টি আর অসহনীয় যানজট যেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ছুটির দিনটিকে পন্ড করে দিয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ে গুঁড়ি গুঁড়ি আর ভারি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় শামিল হয়েছে নগরবাসী।
গতকাল শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বড় বড় মার্কেট, বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতার ভিড় শুরু হয়। অন্যদিকে বৃষ্টিতে ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। নগরীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়াসহ আশপাশের সব কয়টি মার্কেটের সামনেই থৈ থৈ করছে পানি। সেখানে নৌকা চলাচলের উপযোগি হয়ে গেছে।
তার পরও দোকানিরা ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সকাল থেকেই দোকান খুলে বসেছেন। আবার ক্রেতারাও একেবারে নিরাশ করেনি বিক্রেতাদের। বৃষ্টির কারণে কাদা আর পানিতে মাখামাখি, যেন ঠিকমতো চলাফেরা করাই দায়। তার পরও সপিং করতে আসছেন লোকজন।
সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর রাস্তায় পানি জমে যায়। রাজধানীবাসী এ অভিযোগ করে আসছে বহুদিন ধরে। এ যেন দেখার কেউ নেই অবস্থা। আসপিয়া নামের এক পথচারী বলেন, বর্ষার আগে পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন ওলি-গলিতে। মৌচাক-মগবাজার-রাশমনো মেডিকেল হাসপাতালের সড়কে গিয়ে দেখা গেছে হাঁটু পানি।
গতকাল শুক্রবার সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে হাজারিবাগ সড়কে রিকশাসহ সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ ছিল। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পানি জমে থাকায় মোহাম্মদপুর মকবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের আশপাশের এলাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। এছাড়া মিরপুরের সনি সিনেমা হল থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানা সড়কেও জমে ছিল বৃষ্টির পানি। মাজার রোড ও গাবতলীর বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধান

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ