পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পূর্ব রামপুরা থানার বাসিন্দা গৃহবধূ জেসমিন আক্তার মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন যে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কলিং বেলের শব্দ পেয়ে তিনি দরজা খুলতেই রামপুরা থানার একজন এএসআই’র নেতৃত্বে চারজন পুলিশ সদস্য ও দু’জন সোর্স জোর করে তার ঘরে প্রবেশ করে। তিনি বলেছেন, নারী ব্যবসার অভিযোগ তুলে তারা সরাসরি বেডরুমে প্রবেশ করে। এরপর এএসআই খালেক ও সোর্স মাইনুল এবং রিপন বাসার দুটি ওয়্যারড্রব ও শোকেস তছনছ করে। তারা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। সোর্স মাইনুল বেডরুমে থাকা অপর ওয়্যারড্রব খুলে তা থেকে ৬ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেন, ১০ আনা ওজনের ২ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল নেয়। একপর্যায়ে রফিক ও এএসআই খালেক অপর পুলিশ সদস্য ও সোর্সদের বেডরুম থেকে বের করে দিয়ে জেসমিন ও তার বান্ধবী শাহিনুরের শ্লীলতাহানি করে। ওই বান্ধবী বিদেশে যাওয়ার জন্য জেসমিনের বাসায় এসেছিলেন পাসপোর্ট তৈরির কাজে। অভিযোগে তিনি আরো জানিয়েছেন, পুলিশ ও সোর্স তার বৃদ্ধ মা, বড় বোন নিলুফাসহ সকলকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য ও সোর্সরা এ কথা কাউকে না বলার জন্য বলে। তাদের কথা না শুনলে ইয়াবা দিয়ে মামলায় জেল খাটানো হবে বলে হুমকি দেয়। জেসমিনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
গত কিছুদিনে সামাজিক অপরাধের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসাথে এ ধরনের অপরাধের সাথে একশ্রেণীর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সম্পৃক্ততার কারণে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিছুদিন আগে পল্লবী থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তল্লাশির সময়ে আসামি না পেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ের সাথে তার অশ্লীল আচরণের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে একের পর এক নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ বেড়েই চলছে। একটি বেসরকারি সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৩৭ জন নারী পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে। ২০১৫ সালে সদর দফতরে ৮ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এদিকে বলা হয়েছে, গত বছর প্রতিদিন গড়ে দু’জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গণধর্ষণ বেড়েছে ১৪ ভাগ। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রকাশিত খবরে এ ধরনের ঘটনার খুব কম অংশই প্রকাশিত হয়। এসব ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হতে হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণীর পুলিশই এমন সব সামাজিক অপরাধ বিশেষ করে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ছে যে তাদের সন্ত্রাসী-মাস্তান থেকে আলাদা করার উপায় থাকছে না। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা বা একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের অপ্রতিরোধ্য হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভাবার রয়েছে, কেন এবং কী কারণে এমনটা হচ্ছে বা হতে পারছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেকদিন থেকেই বিশেষজ্ঞ মহল অভিমত প্রকাশ করে আসছে যে, পুলিশকে অধিকতর রাজনীতিকরণের কুফল হিসেবেই একশ্রেণীর পুলিশের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। তারা নিজেদের সর্বেসর্বা বা আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করছে। এর ফলে এ শ্রেণীর পুলিশ সদস্য বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে।
সামাজিক অপরাধ দমনে পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। অপরাধী আর কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের ভূমিকায় কোনো পার্থক্য না থাকলে কোনো সভ্য সমাজ চলতে পারে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষে জনগণকে সাথে নিয়ে ভূমিকা পালন করাও প্রায় অসম্ভব। পুলিশের অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। যেসব সদস্য অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে এবং প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণে এটা বলা যায়, কোনো অবস্থাতেই বাসা-বড়িতে পুরুষের অনুপস্থিতিতে পুলিশের তল্লাশি চালানোর এখতিয়ার থাকা সঙ্গত নয়। নাগরিকদের জান-মাল-ইজ্জত- আব্রু রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত জনবান্ধব ভূমিকা পালন করবে বা করতে সচেষ্ট হবে, এটাই জনগণ আশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।