পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতিতে নানামাত্রিক সংকট ঘণীভূত হচ্ছে। সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে লক্ষকোটি টাকার ঘাটতি। রাজস্ব আদায়ে ক্রমশ নি¤œমুখিতা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা, তৈরী পোশাক রফতানীসহ সামগ্রিক রফতানী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা, রেমিটেন্স আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি প্রকট আকারে উঠে আসছে। এ ছাড়া বিগত প্রায় এক দশক ধরেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে যে বন্ধ্যাত্ব চলছে তা নিরসনেও কোন ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। উপরন্তু গত কয়েক বছরে আমাদের গার্মেন্টস রফতানী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মত মূল অর্থনৈতিক খাতগুলোতে নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা যুক্ত হয়েছে। রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরী পোশাক রফতানী খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতির পরিমান ছিল ৬.৪৩ ভাগ। অনেক প্রতিবন্ধকতা ও দুর্যোগ সত্তে¡ও তৈরী পোশাক রফতানী খাতে অতীতে কখনো এমন নেতিবাচক ধারা দেখা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গতকাল সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ সব বাজারেই তৈরী পোশাক রফতানীতে ধস নেমেছে। যখন আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার কথা বলছি, যখন হাজার হাজার কোটি টাকার স্বাপ্নিক মেগা প্রকল্প নিয়ে রাজনৈতিক উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে, তখন অর্থনীতির সব সূচকে ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক প্রবণতা আমাদেরকে ভিন্ন মেসেজ দিচ্ছে।
নতুন বাজেটে দেশের দরিদ্র মানুষ তথা সাধারণ জনগনের জন্য কোন সুখবর নেই। উপরন্তু বাড়তি ভ্যাটের বোঝা, ব্যাংকে আমানতের উপর বাড়তি আবগারিশুল্ক আরোপ, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়া ইত্যাদি সিদ্ধান্তের জেরে নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় আগামী দশকে একটি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ প্রত্যাশা করা কঠিন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং রফতানী আয়ের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যে সব রাজনৈতিক শ্লোগান ও প্রতিশ্রæতি শোনা যাচ্ছে সেখানে প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। দেশে কথিত জঙ্গিবাদ উত্থানের প্রচারনা এবং গত বছর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক হত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানী খাত নতুন করে চাপের মুখে পড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে বাংলাদেশি তৈরী পোশাক রফতানী গড়ে ৬ শতাংশ হারে কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বিজিএমইএ সুত্র বলছে, ছোটবড় সব বাজারেই তৈরী পোশাক রফতানী কমেছে। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রপ্তানীতে মন্দাভাব দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। অবস্থার পরিবর্তন না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা কারখানাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে এ সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত নিয়ে একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের নেতিবাচক আলোচনা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দেশের জননিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে তৈরী পোশাক রফতানীখাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমে আসতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশে তাদের কার্গো বিমান উঠানামার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তাদের শর্ত অনুসারে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হলেও ইউরোপীয়রা পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেই ফোকাসে এনেছিল। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের সাথে সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আলোচনায় অগ্রগতির কথাও শোনা যাচ্ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে কার্গো বিমানের সাথে সাথে বাংলাদেশে কার্গো জাহাজ পরিচালনায়ও নতুন করে বিশেষ নিরাপত্তা সর্তকতা জারির কথা প্রকাশ করেছে ইউরোপের কোন কোন দেশ। রফতানী বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগুলো নেতিবাচক আশঙ্কাকেই তুলে ধরছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা আটকে দেয়াকে সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক প্রভাবিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা। আইএমএফ’র একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট পরবর্তি ইউরোপের বাস্তবতা বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আইএমএফ রিপোর্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা’ হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা টারময়েল আবার ফিরে আসতে পারে, যা’ জননিরাপত্তা পরিস্থিতি ও দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই সাম্প্রতিক কয়েক মাসে হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলহানি, উত্তরাঞ্চলে ধানক্ষেতে বøাস্ট রোগ, উপকুলীয় সাইক্লোন, পাহাড় ধসে শত শত মানুষের প্রানহানি, অতিবৃষ্টির নাগরিক দুর্ভোগ দেশের অর্থনীতি ও পণ্যমূল্যে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।