Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আর্থিক খাত সংস্কারে পরিকল্পনা প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আর্থিক খাতের রেগুলেটরি কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। এর সফল বাস্তবায়ন হলে ওয়াল স্ট্রিটের তালিকায় থাকা অনেক প্রত্যাশাই পূরণ হবে। যদিও এরই মধ্যে পরিকল্পনাটি স্বয়ং সংস্কারবাদী গ্রæপসহ ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গত সোমবার প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রায় দেড়শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে ১০০টিরও বেশি পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের বেশির ভাগই কংগ্রেসের পরিবর্তে রেগুলেটরদের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। উল্লেখ্য, রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্রমে দেশের বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার প্রধান হিসেবে নিজ ক্ষমতানুসারীদের দায়িত্ব দিচ্ছেন, যার মধ্যে অফিস অব দ্য কম্পট্রলার অব দ্য কারেন্সি ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও রয়েছে। এদিকে সুপারিশকৃত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে বড় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ বর্তমানে দেশটির বড় ব্যাংকগুলোকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব বিধি-নিষেধের মুখে পড়তে হয় তা কমিয়ে আনা, অত্যাবশ্যকীয় বার্ষিক স্ট্রেস টেস্টের কার্যক্রম দ্রæতগতিতে সম্পন্ন করা এবং কনজিউমার ফিন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর (সিএফপিবি) ক্ষমতা হ্রাস। এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ওভারসাইট কাউন্সিলের ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টিও পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মানিউচিন এ কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মূলধন মানদÐ নির্ধারণের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায়, যেন বিদেশী প্রতিদ্ব›দ্বী ব্যাংকগুলোর চেয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা এগিয়ে। এছাড়া তুলনামূলক ছোট ব্যাংকগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দেয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়। মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলার ব্যালান্স শিটের ব্যাংকগুলোর তুলনায় ৫ হাজার কোটি ডলার বা এর চেয়েও কম সম্পদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিথিল নীতিমালার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত অনেক দিন ধরেই এ ধরনের পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রস্তাবিত সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কো., ব্যাংক অব আমেরিকা করপোরেশন, সিটিগ্রæপ ইনকরপোরেশন, ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কোম্পানি, গোল্ডম্যান স্যাকস ও মরগান স্ট্যানলির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো উপকৃত হবে। গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এ পরিকল্পনা প্রস্তাবটি সাদরে গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় ব্যাংকের বিভিন্ন ট্রেড গ্রæপ। অবশ্য এর মধ্যে অনেকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় আরো স্পষ্ট করার দাবি তুলেছেন। ব্যাংকগুলোর সম্পদের ক্ষেত্রে কোন পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ করবেÑ তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস রাউন্ডটেবিলের রেগুলেটরি অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচ ফস্টার বলেছেন, এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নীতিমালা সংস্কার-বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। এদিকে সরকারের এ সংস্কার পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার পর পরই এর সমালোচনা শুরু করেছেন ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা ও সংস্কার সমর্থনকারীরা। ২০০৭-০৯ আর্থিক সংকটের সময় আবাসন ও কাজ হারানো মার্কিন ভোক্তাদের জন্য এ পরিবর্তন খুবই বিপজ্জনক হবে বলে মনে করছেন তারা। আমেরিকানস ফর ফিন্যান্সিয়াল রিফর্মের নির্বাহী পরিচালক লিসা ডোনার এ প্রসঙ্গে বলেন, ডড-ফ্রাংক পাস হওয়ার পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রি লবিস্টরা এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারই ছায়া অবলম্বন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের অবশ্যই আরো কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন। কিন্তু তা অবশ্যই ওয়াল স্ট্রিট ও লুণ্ঠনকারী ঋণদাতাদের চাহিদা অনুযায়ী হবে না। প্রসঙ্গত, ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের বিষয়টি আমলে নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডড-ফ্রাংক নামে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিট রিফর্ম অ্যান্ড কনজিউমার প্রটেকশন অ্যাক্টটি পাস করেন। এ আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে তুলনামূলক বেশি মূলধন ও তারল্য রাখতে হয়। সেসঙ্গে বার্ষিক স্ট্রেস টেস্টও পরিচালনার কথা বলা হয়েছে এখানে। অন্যদিকে সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অর্থ খাত-সংশ্লিষ্টদের তুলনায় কনজিউমার গ্রæপগুলোর সঙ্গে কম আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক সিনেটর শেরড ব্রাউন। ট্রেজারি সেক্রেটারি মানিউচিন এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থনীতি স¤প্রসারণ করতে নিয়ন্ত্রক পর্যায়ে সংস্কার আনা খুবই জরুরি। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে ভোক্তাদের হাতে আরো বিকল্প সুযোগ থাকবে। সেসঙ্গে আর কোনো বড় ব্যাংককে নতুন করে অর্থসহায়তা করতে হবে না বলেও করদাতাদের আশ্বস্ত করা যাবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেখানে ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেখানে পুরনো নীতিমালা বিদ্যমান থাকলে ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোয় পরিবর্তন আনতে পারলে আইনপ্রণেতাদের মধ্যে লম্বা ও অকার্যকর প্রতিযোগিতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে সিনেটে প্রস্তাবনাটি আটকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেসঙ্গে বড় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা নীতিমালা সহজ হয়Í এমন কোনো সংস্কার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সেখানে সমর্থন পাওয়া যাবে না। সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ