পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : মহানগরী থেকে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়নের হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা। সবখানেই মাহে রমজানের আমেজ পুরোদমে। আর রমজানে সর্বত্র ভিন্ন আবহ তৈরি হয়েছে মাহে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও শানদার ইফতার মাহফিলের মধ্যদিয়ে। ছোট মাঝারি, বড় পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে ইফতার মাহফিলের। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির স্থানীয় কমিটিগুলো প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অপরাপর ছোট কিংবা মাঝারি পর্যায়ের দল-জোট-মোর্চাগুলোর আয়োজন। তাছাড়া চট্টগ্রামের রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী সামাজিক সংগঠন, বনেদী ব্যক্তি-পরিবার, ঐতিহ্যবাহী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী গ্রæপগুলোর উদ্যোগেও নগরীতে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিদিন। সেখানে এতিম-দুঃস্থদেরও ইফতারে দাওয়াত করা হচ্ছে। এসব আয়োজনের বাইরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে পেশাজীবী সংগঠন-সমিতিগুলোও ইফতার মাহফিলে পিছিয়ে নেই। বরং এবার পেশাজীবীদের ইফতার মাহফিলের উদ্যোগ-আয়োজনে বেশ অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার ব্যাপক আয়োজন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাস ইতোমধ্যে অর্ধেকটা অতিক্রান্ত হয়েছে। সেই সাথে ইফতার মাহফিল আয়োজনের তৎপরতাও যেন চলছে অনেকটা জোর কদমে। মহানগরী, জেলা, থানা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে ইফতার মাহফিলগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে কোন দল কত বেশি সংখ্যক নিজেদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ছাড়াও এলাকার আমজনতাকে হাজির করতে পারেন সেই লক্ষ্যে চোখে পড়ছে প্রাণান্তকর প্রতিযোগিতা। সেই সাথে বেড়ে গেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কদর। উপরন্তু এলাকার আলেম-মাশায়েখ, মাদরাসা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ব্যাপকভাবে সমাদর করে ইফতার মাহফিলে দাওয়াত দিয়ে আনছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে সমাজে স্থানীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ববর্গের গুরুত্ব স্বভাবতই বৃদ্ধি পেয়েছে।
এরইমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা-উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইফতার মাহফিলে নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে বিভিন্নমুখী আলোচনা-পর্যালোচনা জমে উঠেছে।
দেশে আগামীতে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার আগাম হিসাব-নিকাশ চলছে ইফতার মাহফিলের রাজনৈতিক পরিমÐলে। এতে পুরোদমে পড়েছে ভোটের রাজনীতির প্রভাব। আগামী নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য পদে ফের কিংবা নতুন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী তারা নিজ নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে যাচ্ছেন। সেখানে এলাকার জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার), গণ্যমান্য ও মুরব্বীস্থানীয় ব্যক্তিদের সাদরে দাওয়াত দিয়ে হাজির করছেন। তাদের দোয়া ও সমর্থন নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেরই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব এখন বেড়ে গেছে অনেকখানি। ইফতার রাজনীতিতে বইছে আগাম ভোটের হাওয়া ও আবহ। বর্তমান সংসদ সদস্যরা বিগত সময়ে নিজেদের এলাকায় কী কী উন্নয়ন কর্মকাÐ করেছেন, আগামীতে কী করতে চান তা তুলে ধরছেন। আর বিএনপির আগামীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অতীতের ভোটারবিহীন নির্বাচনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমের জনগণের প্রকৃত সেবা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন।
আবার জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যেসব ইফতার মাহফিল হচ্ছে সেখানে আগামী নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক এবং বর্তমান এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা হাজির হচ্ছেন সবাই। পরস্পর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একে অপরের সাথে কোলাকোলি, টিপ্পনী কাটছেন কে কোথায় কাকে টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে। আবার ইফতার মাহফিলে হাজির হয়ে তৃণমূল সাধারণ নেতা-কর্মী, সমর্থকরা এবং এলাকার রাজনীতি সচেতন লোকজন আগামী নির্বাচনে কোন এলাকায় কে মনোনয়ন পেতে পারেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত বৃত্তান্ত ও ভালমন্দ নানাদিক নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠছেন। এর মধ্যদিয়ে জমে উঠেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইফতার মাহফিলকেন্দ্রিক ভিন্ন আমেজে রাজনীতির চর্চা। মূল প্রধান দুই দল ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগেও ইফতার মাহফিলের জমজমাট আয়োজনে ভোটের রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন আঙিকে।
এদিকে চলমান জাতীয় রাজনীতির সরাসরি প্রভাবও পড়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং তাদের সমর্থিত অঙ্গ, সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের ইফতার মাহফিলে। অতিসম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যকার রাজনৈতিক যে ‘বাহাস’ বা বাগযুদ্ধ জমে উঠেছে তা নিয়ে তৃণমূলে চলছে সরব আলোচনা-পর্যালোচনা। চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতেই একটু বেশিমাত্রায় রাজনীতি সচেতন। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন পাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফখরুলের উদ্দেশে বলেছেন, ২০০১ সাল আর ফিরে আসবে না। এসব বক্তব্য পাল্টা-বক্তব্য সাধারণ মানুষ হিসাব-নিকাশ ও বিশ্লেষণ করছে যার যার মতো। ঘরে-বাইরে এখানে-সেখানে মানুষজনের আলাপচারিতা থেকেই তা প্রতিনিয়ত ফুটে উঠছে।
এবারের ইফতার মাহফিলসমূহে আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীর গণহারে করবৃদ্ধি ও নতুন করে আরোপের কঠোর সমালোচনা হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রায় সর্বত্র। অনেকেই এ ধরনের মন্তব্য করছেন যে, অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত তার শেষ বাজেটে রান্নাঘরে পর্যন্ত করের সীমা ছড়িয়ে দিয়েছেন! কীভাবে বাঁচবে স্বল্প ও সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ? ব্যাংকের হিসাবের উপর আবগারি শুল্কসহ তাবৎ শুল্ক-করারোপ, সঞ্চয়পত্রের সুদের উপর করারোপ ও অন্যান্য যাবতীয় শুল্ক-করের বোঝার প্রস্তাব জনস্বার্থে প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। এমনকি চট্টগ্রামে সরকার দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকরাও বাজেটে গণহারে শুল্ক-করারোপ ও বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহŸান জানান। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিভিন্ন দল, পেশাজীবী সংগঠনের ইফতার মাহফিলসমূহে সরকারের উদ্দেশে সুস্পষ্ট বার্তা উচ্চকিত হয়েছে, চালের দামের নাগাল নিয়ন্ত্রণ বিশেষ করে গরিবের মোটা চালের মূল্য কমানো, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ফের বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকার বিষয়েও। বাজেটে মাত্রারিরিক্ত হারে শুল্ক-করারোপ ও বৃদ্ধির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো সোচ্চার। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে গত শনিবার নগরীতে অনুষ্ঠিত চিকিৎসক সমাবেশ ও ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কাটার এবং লুটপাটের চূড়ান্ত আয়োজন করে একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে। তারা সাধারণ মানুষকে পথে বসানোর আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
এদিকে নির্বাচনী তথা ভোটের রাজনীতির আবহে চট্টগ্রামজুড়ে চলমান ইফতার মাহফিলের আয়োজন সর্বত্র বিশেষত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেছেন, আমরা সর্বত্র ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে কর্মীদের উজ্জীবিত করছি। মাহফিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক সাধারণ লোকজন অংশগ্রহণ করছেন। আমরা বলেছি, মাহে রমজানের ত্যাগ ও সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে আমরা মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমাদের ভেতরে আত্মশুদ্ধি আসবে, সমাজ সবধরনের কলুষতামুক্ত হবে। সমাজ শুদ্ধ হলেই এর শুভ প্রভাব রাজনীতিতেও পড়বে। তাছাড়া আমরা বলেছি, নির্বাচন যেহেতু ঘনিয়ে আসছে তাই দলের নেতা-কর্মীদের সাবধান ও সতর্ক থাকতে। দলের ভেতরে যাতে কোনো কুচক্রি ও দুষ্টলোক অনুপ্রবেশ না করতে পারে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। মাহে রমজানের ইফতার মাহফিলের আয়োজন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০ রূপকল্পকে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এরজন্য দলের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকগণ দারুণ উজ্জীবিত হয়ে মাঠে-ময়দানে তৎপর রয়েছেন। আমরা ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে জনগণের সামনে দলের ভিশন ২০৩০ বিশ্লেষণ করছি। এর প্রতি সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক সাড়া ও সমর্থন পেয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।