Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিরাজগঞ্জে ইউপি নির্বাচন তাড়াশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির টেনশন বিদ্রোহীদের নিয়ে

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে
চলছে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণা। মাঠে নেমেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীর দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও শুকাকাঙ্খীরা। যেন প্রতিটি ইউনিয়নে এখন নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। চায়ের দোকানে নির্বাচনে আলোচনা যেন এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। দুই দলের টেনশন এখন বিদ্রোহীদের নিয়ে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম, মাধাইনগর ও দেশীগ্রাম ইউনিয়ন নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত হওয়ায় সব সময়ই আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। যে কোনো ভোটের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকতেন। তবে চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবারই প্রথম ‘নৌকা’র বিপরীতে ভোট দেবেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। শুধু তালম, মাধাইনগর, দেশীগ্রামই নয়, এমন ভোট ভাগ হচ্ছে নওগাঁ, বারুহাস, মাগুড়া বিনোদ, সগুনা ইউনিয়নেও। শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, বিভক্ত হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরাও। তারাও ধানের শীষের বিপরীতে ভোট দেবেন। দুই দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, টাকা খেয়ে ভুল প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। তারা বলছেন, ‘টাকা’ দিয়ে মনোনয়ন পাওয়া গেলেও ভোট পাওয়া যাবে না। তবে দুই দলেই তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপজেলার শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রার্থী বাছাই ভোটে হেরে গিয়ে দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ইতিমধ্যে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গত সাত বছরে সারা দেশের মতো তাড়াশ উপজেলায় বেশ উন্নয়ন হয়েছে, এর ধারা অব্যাহত রাখতে ইউনিয়ন পর্যায়েও নৌকাকে বেছে নেবে জনগণ। চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে ২৩ এপ্রিল। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলার ১ লাখ ৩৭ হাজার ২১৮ জন ভোটার বেছে নেবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থাকায় বেকায়দায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। টেনশনে দুই দল। উপজেলার ১ নম্বর তালম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবাসুজ্জামান আব্বাস, বিএনপির আবুল কাশেম। এ ইউপিতে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও যুবলীগের ইউনিয়ন আহ্বায়ক বাবলু হোসেন। আওয়ামী লীগের ভোট হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় টেনশনে দলীয় প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী ও বিএনপির ত্রিমুখী লড়াই হবে। বারুহাস ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন, বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান ইকবাল শহীদ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বিএসসি। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আসাদুজ্জামান আসাদ ও আজিজুল মেম্বার। ইউনিয়নের বিনসাড়া, কোহিত, কুসম্বী, বারুহাস, দিঘুরিয়া গ্রামে একাধিক ব্যক্তি, ভোটার ও আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দলের প্রার্থীদের অবস্থান মজবুত নয়। এখানে বিদ্রোহীদের যে কেউ চেয়ারম্যান হলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সগুনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আবদুল্লাহ হেল বাকী ও বিএনপির আবু সাঈদ মহরী। আবদুল্লাহ হেল বাকী গত ইউপি নির্বাচনে সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা থাকলেও পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহীরাই। এখানে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিম ম-ল, সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল করিম রনি। রনি তরুণদের ভোট টানবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ইউনিয়নটিতে চর ও বিলাঞ্চলের ভোটই জয়-পরাজয়ের মূল ফ্যাক্টর। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা বাকীর গলায় উঠতে পারে। মাগুড়া বিনোদ ইউপিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বুলবুল, ধানের শীষে গোলাম আজম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও মূলত দুই দলেরই লড়াই হবে। তবে স্থানীয়দের ভাষায় এখন পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলায় সবচেয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নওগাঁ ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন। বিএনপির প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম গ্রহ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিজানুর রহমান মজনু সরকার। তিনি গত নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী পারিবারিকভাবে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী পরিবারের সন্তান হলেও তাকে ইউনিয়ন রাজনীতিতে ‘অপরিচিত মুখ’ বলছেন কেউ কেউ। এজন্য বিদ্রোহী প্রার্থী গোয়াল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকার পরিবারের সন্তান মিজানুর রহমান মজনু সরকারের পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হলেও এবার ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার জোর সম্ভাবনা। ইউনিয়নের চকরসুল্লাহ, কালিদাসনিলী, গোয়ালগ্রাম, নওগাঁ, সাকুয়া দিঘী, ভাটরা, বিরোহালি, পোমরোহালী, দেবিপুর, মহিষলুটি, খালকুলা, সান্তানসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত তিন প্রার্থীই সমানতালে এগিয়ে রয়েছেন। ভোটাররাও বলছেন, তিন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তাড়াশ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা বাবুল শেখ। বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খন্দকার। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মীর শহিদুল ইসলাম শহীদ ও বিএনপির ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহমেদ মাসুম। মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে। মাধাইনগরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু হাসান মির্জা। বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জহুরুল মাস্টার ও বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা আবুল বাশার। এ ইউনিয়নটিতে নৃতাত্ত্বিক ভোটাররা সব সময়ই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকে থাকেন। তবে এবার ভোট ভাগ হচ্ছে। ৮ নম্বর দেশীগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. আবদুল কুদ্দুস, বিএনপিধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মো. জমশের আলী তালুকদার। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবদুর রহিম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মুসলিম উদ্দিন এবং আদিবাসী নেতা বিএনপির বিদ্রোহী জ্যোতিষ মাহাতো। মূলত এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরাজগঞ্জে ইউপি নির্বাচন তাড়াশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির টেনশন বিদ্রোহীদের নিয়ে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ