Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মর্যাদার লড়াই আওয়ামী লীগ-বিএনপির

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নৌকার মনোনয়ন কিনেছেন ১১ জন : ধানের শীষের ৯ জন//
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই সিটির এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা যাচাই, শক্তি প্রদর্শন ও মর্যাদা লড়াইয়ের এ নির্বাচনে জিততে মরিয়া দুই পক্ষই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে এবারই প্রথম নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। তাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীতে এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছে দুই দলই। জয়ী হতে পারে এমন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে চায় উভয় দল। গত সিটি নির্বাচনে গাজীপুর ও খুলনায় বিজয়ী হয় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। এবারও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা করছে দলটি। অন্যদিকে দুই সিটিতেই আসন পুনরুদ্ধার করার জন্য জোর চেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ। বিজয়ী হতে পারে এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণীরা জানিয়েছেন। তাই এ নির্বাচন হয়ে উঠেছে দু’পক্ষের জন্য যেমন অগ্নিপরীক্ষা, তেমনি মর্যাদার লড়াইও। একদিকে সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহযোগিতা করার পাশাপাশি জয়ী হয়ে বিএনপির জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ খন্ডন করতে হবে। অন্যদিকে দুই সিটিতে জয়ী হয়ে বিএনপিকেও প্রমাণ করতে হবে তাদের দাবি সঠিক, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ নেই। দুই সিটিতে যে দল জয়ী হবে, সেই দলই আগামী সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে ইতিবাচক বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলের জন্য ত্যাগ, অবদান, জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতাসহ সবকিছু বিবেচনা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সবাইকে এক হয়ে তার জন্য কাজ করতে হবে। কেউ বিরোধিতা বা অসহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ হারাতে পারবে না। তাই দুই সিটিতে জয়ের জন্য দলের ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মর্যাদা রক্ষার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। এজন্য বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের মুখ দেখাতে এই নির্বাচনকে রীতিমতো বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নামার সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর ফল দেশে-বিদেশে দুই দলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করলে সরকার নানামুখী চাপে পড়বে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। অপরদিকে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হলে চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই নির্বাচনে জয়লাভ ছাড়া আপাতত বিকল্প কোনো চিন্তা নেই তাদের। তারা মনে করেন, চলমান আন্দোলনে ভয়ভীতি, দমনপীড়নের কারণে রাজপথে নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ নামতে ভয় পায়। কিন্ত সিটি নির্বাচনে তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে সরকারের বিরুদ্ধেই রায় দেবে।
ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাই করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দুই দলই। দুই সিটিতে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১১জন। আর বিএনপির মনোনয়ন কিনেছেন ৯ জন প্রার্থী। আজ সন্ধ্যা ৭ টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উভয় সিটিতে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন দলের সভানেত্রী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামীকাল সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন তাদের মনোনয়ন প্রার্থীদের। উভয় দলটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন দুই দলের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হলেও সরকারের জন্য পরীক্ষাটা একটু ভিন্ন। সরকারকে একদিকে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার প্রমাণ করতে হবে, অপরদিকে নৌকার জয় ঘরে তুলতে হবে। কেননা, এ নির্বাচন যদি সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে এবং ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ দৃশ্যত প্রমাণিত হয় সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশে ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হলেও দুই সিটিতে জয় পেলে দলের জন্য তা হবে ইতিবাচক। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর জনগণের সমর্থন ও দলটির প্রতি আস্থা বেড়েছে তা প্রমাণিত হবে। সবার কাছে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, সরকারের ওপর জনসমর্থন কমে গেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, প্রার্থীদের জয়লাভ করার জন্য নির্বাচনবিধি মেনে দলের পক্ষে যতটা সাহায্য করা যায়, তা করা হবে। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে যাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করবে। কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রার্থীর জন্য প্রচারও করা হবে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, বিএনপির অনেকেই গাজীপুরে প্রার্থী হতে মনোনয়ন কিনেছেন। আগামীকাল দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হতে পারবে এমন প্রার্থীকেই আমরা মনোনয়ন দিবো। দেশ ও দলের এই দুঃসময়ে বিএনপি কোন দ্বিধাবিভক্ত নয়, বরং একক প্রার্থীই দেবে জানিয়ে মিলন বলেন, দল যাকে প্রার্থী ঘোষণা করবে দলের সকলেই তাকেই বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করবে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনে আমরা একক প্রার্থী দেবো। এখন পর্যন্ত বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকেই বিএনপির প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে বলে তিনি জানান। মঞ্জু বলেন, প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা তেমন কিছু দেখছি না। কারণ গত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ এমন কিছু করেনি যে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবে। ভোট যুদ্ধে এবং ব্যক্তিগত ইমেজ দুটিতেই আওয়ামী লীগ পিছিয়ে আছে বলে তিনি মনে করেন।
মনোনয়ন কিনেছেন আওয়ামী লীগের ১১জন: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার আগ্রহী প্রার্থী হিসেবে ১১জন আওয়ামী লীগের লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শেষ হয়। ৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মনোনয়নের আবেদন ফরম জমা দেয়া যাবে। এর মধ্যে ২জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এ কথা জানান।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে লড়তে লোক পাঠিয়ে দলের ফরম সংগ্রহ করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লা খান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মতিউর রহমান, সুমন আহমেদ শান্ত বাবু, কাজী আলিমউদ্দিন, আব্দুর রউফ নয়ন, ওয়াজউদ্দিন মিয়া। এছাড়া বৃহস্পতিবার ফরম সংগ্রহ করেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। খুলনা সিটি নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার আনিছুর রহমান পপলু। আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, ৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উভয় সিটিতে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন দলীয় সভানেত্রী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিন ১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২ টি পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক ডেকে আগ্রহীদের ইন্টারভিউ নিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে তাকে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছেন ৯ জন: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান দুই মেয়র আবদুল মান্নান ও মনিরুজ্জামান মনিসহ নয়জন। বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তারা। এছাড়া গাজীপুর সিটির জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করীম রনি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন, সাবেক ছাত্রদলের অহবায়ক আব্দুস সালাম ও জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার। এদিকে খুলনায় দুইজন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান মেয়র খুলনা মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ-বিএনপি

৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ