Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ : ঠিক এক যুগ আগে এই সোফিয়া গার্ডেন্সে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বাংরাদেশ। তখনকার ‘মিনোজ’ দলটি আজ বিশ্বের আরেক নতুন পরাশক্তি। যার প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। বহুবার তাদের গর্জনে কেঁপেছে মাঠ, কেঁপেছে রাজপথ। ওয়ানডে খেলা প্রতিটি দেশকেই একাধিকবার হারানো, এমনকি হোয়াইট ওয়াশের স্বাদও পেয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ দলটি। গেল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে প্রথমবারেরমত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা মাশরাফি বাহিনীর প্রসংশায় আজও পঞ্চমুখ সারা দুনিয়া। সেই রেশ থাকতে না থাকতেই আরেকবার বেঙ্গল-টাইগারের গর্জনে কাঁপল সারা বিশ্ব। গেলপরশু সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জোড়া সেঞ্চুরির সাথে পঞ্চম উইকেটে দু’জনের রেকর্ড ২২৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা ধরে রাখে টাইগাররা। বীরোচিত এমন জয়ের পর বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসছে বাংলাদেশ দল।
এ ম্যাচে সাকিব ১১৪ রানে ফিরলেও, ১০২ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদউল্লাহ। ১১৪ রানের ইনিংস খেলে কার্ডিফের এই ভেন্যুতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন সাকিব। তবে যৌথভাবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। কারন এই ভেন্যুতে ১১৪ রান আছে ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ানেরও। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৪ রান করেছিলেন ধাওয়ান। এই মাঠে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৭ রান করেছিলেন কোহলি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চমস্থানে আছেন মাহমুদুল্লাহ ও মোহাম্মদ আশরাফুল। ঐতিহাসিক এই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ’র অপরাজিত ১০২ রান চতুর্থস্থানে জায়গা করে নেয়। আর ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশের ম্যাচ জয়ী ১০০ রান আছে পঞ্চমস্থানে।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩০৫ রান করেও বাজেভাবে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন। ঐ ম্যাচে প্রাপ্তি শুধুই তামিম ইকবালের ঝকঝকে এক সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেই তামিমের ৯৫ রানের ইনিংসের পরও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায় মাশরাফির দল। তবে এদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে নিশ্চিত হারের গøানি থেকে রক্ষা কবজ হয়ে আসে স্বস্তির বৃষ্টি। সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন এক যাত্রা। পরিত্যাক্ত ঐ ম্যাচের এক পয়েন্ট নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু মাশরাফি-মুশফিকদের। স্মৃতির পটে ভেসে ওঠে গেল বিশ্বকাপে এই অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকেই এক পয়েন্ট পাওয়ার চিত্রনাট্য। টিকে থাকার লড়াইয়ে পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে দূর্দান্তভাবে হারিয়েই শুধু নয়, একেবারে বিদায় করেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটে বাংলাদেশ। সেই একই পটভূমি এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও। এবার বাংলাদেশের শিকার নিউজিল্যান্ড।
কতটা স্বপ্ন বিভোর হলে মাত্র ৩৩ রানে চার টপঅর্ডারকে (তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক) হারিয়েও মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের দূর্দান্ত জোড়া সেঞ্চুরিতে অবিস্মরণীয় এক জয়, সেটা আত্মবিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ। যা স্পষ্ট করেছেন দলের কোচ হাতুরুসিংহে, মাশরাফি এবং রূপকথার নায়ক মাহমুদউল্লাহ, সাকিবরা। এক টুইট বার্তায় ছেলেদের প্রসংশার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন কোচ হাতুরু। লিখেছেন, ‘গতকাল (গতপরশু) যা ঘটেছে, তা সত্যিই অপরমিয়ে বিশ্বাসের ফল, সামনে এগিয়ে যাবার পাথেয়। সাকিব এবং রিয়াদ তোমরা অপূর্ব।’ নিজেদের এই কৃতিত্বের ভাগ অধিনায়ক মাশরাফি দিলেন সমর্থকদের। ম্যাচ শেষে মাঠে দাঁড়িয়েই বলেলেন, ‘সমর্থকেরা দুর্দান্ত ছিলেন। তাঁরা সব সময় আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ওভালে যখন খেলেছি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তখনো অনেক সমর্থন ছিল; এখানেও তাই। অনেককেই লন্ডন কিংবা আরও অনেক দূর থেকে আসতে হয়েছে। তবু তাঁরা এসেছেন, সমর্থন দিয়েছেন। আশা করছি তাঁরা এটা চালিয়ে যাবেন। কারণ আমার ধারণা, তাদের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে।’ জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহও আলাদা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন এই আবেগী সমর্থকদের, ‘আবহটা খুব ভালো ছিল। সমর্থকদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁরা সবাই ইংল্যান্ড থেকে এখানে এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ।’
মুগ্ধতা শুধু বাংরাদেশ শিবিরেই নয়, ছড়িয়ে আছে পুরো ক্রিকেট দুনিয়াতেই।
‘একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ সফরে গিয়ে দলগুলো চাইত বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করুক। খেলাটা যাতে আগে শেষ হয়ে যায়। কী দারুণভাবেই না পরিস্থিতি পাল্টে গেছে’- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ের পর নিজের অফিশিয়াল টুইটারে এ কথাই লিখেছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত ভোগলে এতেই থেমে থাকেননি। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানের ২২৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি নিয়েও মন্তব্য করেছেন। আলাদা আলাদা মন্তব্যে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবকে ভাসিয়েছেন প্রশংসায়। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দুই জয়ে একটা বিষয়ে দারুণ মিল- মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি।’ আর সাকিব সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে এল অন্যতম সেরা সেঞ্চুরিটি।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন দারুণ জয় অবশ্য ভোগলের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা জয় নয়। তিনি এই দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টিকেই। যে জয় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার। ভোগলের মতে, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই জয়ের খুব কাছাকাছি থাকবে।’
আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না এমন একজন ব্যাটসম্যান আইপিএলে কোনো দল পান না কীভাবে, ‘মাহমুদউল্লাহ-সুবহান আল্লাহ! তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি...সবগুলোই আইসিসির প্রতিযোগিতাতে। অবাক লাগছে, আইপিএলের কোনো দল মাহমুদউল্লাহকে নেয়নি কেন? বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দিন এটি।’
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের ২২৪ রানের জুটিতে মুগ্ধ। এমন জুটি তিনি অতীতে দেখেছেন কিনা মনে করতে পারছেন না সেটিও, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটে এর চেয়ে সেরা জুটির কথা আমি মনে করতে পারছি না। ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেই। বল সুইং করছে এমন পরিস্থিতিতে এই জুটি।’ ভন নিজের টুইটে এই জুটি নিয়ে ‘বেস্ট এভার’ কথাটি লিখে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন।
পাকিস্তান ক্রিকেটের সুপার স্টার শহীদ আফ্রিদি বাংলাদেশের এই জয়কে দেখছেন ‘দুর্দান্ত’ হিসেবেই। তিনি রীতিমতো চমকে গেছেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর বীরত্বে, ‘বাংলাদেশের দুর্দান্ত এক জয়। ঘুরে দাঁড়িয়ে চমকে দিল সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছেন, ‘প্রচÐ চাপের মুখেও মাথা নত করেনি বাংলাদেশ।’ অস্ট্রেলিয় লেগ স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন এমন জয়ের পর টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশকে।
সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মুগ্ধ সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে। বলেছেন, ‘এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যাচজয়ী বেশ কিছু জুটি দেখলাম। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি সেগুলোর অন্যতম।’
সাবেক কিউই পেসার ড্যানি মরিসন নিজের টুইটে বাংলাদেশকে ‘বাংলা টাইগার্স’ সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘সত্যিই দুর্দান্ত। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব দলকে কী চমৎকার ভাবেই না বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাল।’



 

Show all comments
  • Santa ১১ জুন, ২০১৭, ৩:৪৫ এএম says : 0
    One day Bangladesh Cricket Team will be lead the cricket world
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ