পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তার রায় আমরা এখনও অনুসরণ করি- প্রধান বিচারপতি
স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেস্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কাজ আধাবেলা বন্ধ রাখা হয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট গার্ডেনে মরুহুমের নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে বিকালে বনানী কবরস্থানে দাফর করা হয়।
এদিকে বিচারপতি লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধান মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সুপ্রিম কোর্টে জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান অত্যন্ত ভালো লোক ছিলেন। আমি আইনজীবী হিসেবেও তাকে পেয়েছি। তিনি সব সময় হাসিখুশি ছিলেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আমরা সবাই মর্মাহত। তার দেয়া এমন অনেক রায় আমরা এখনও অনুসরণ করি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজায় অংশ নেন সাবেক চার প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, কে এম হাসান, সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন ও মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক বিচারপতি ও সিইসি আব্দুর রউফ, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, তত্ত¡াবধায়ক সাবেক উপদেস্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ জানাযায় অংশ নেন। পরিবারের পক্ষ থেকে লতিফুর রহমানের ভাই আমিনুর রহমান জানাযায় অংশ নেন। জানাযা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ মরহুমের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সাবেক প্রধান বিচারপতির জীবন ও কর্ম
সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ১৯৩৬ সালে ১ মার্চ যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খান বাহাদুর লুৎফর রহমান যশোর জেলার একজন কৃতি সন্তান ছিলেন। তিনি আইন ব্যবসা ও সুষ্ঠু রাজনীতিতে অনেক অবদান রেখে গেছেন। লতিফুর রহমান যশোর জেলা স্কুলে পড়াশুনা করেন। ওই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ, গণিত শাস্ত্রে ডিস্টিংশন পেয়ে পাশ করেন। তিনি মেরিট লিস্টেও বৃত্তি পান। ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে লতিফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করেন এবং স্যার সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাজীবনের শুরুতে তিনি কায়েদে আজম কলেজ (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ) ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে অধিভুক্ত হন। ১৯৭৯ সালের ২১ নভেম্বর তিন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮১ সালের ৪ নভেম্বর তার বিচারকের চাকরি স্থায়ী হয়। ১৫ জানুয়ারি ১৯৯০ তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন।
২০০১ সালের ১৫ জুলাই তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার গঠন করে। ওই বছর ১০ অক্টোবর নতুন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। বর্তমানে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা লতিফুর রহমানের ওই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। লতিফুর রহমান ১৯৫৯ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার দুর্নীতি দমন বিভাগের পরিচালক গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় কন্যা আয়েশা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লতিফুর রহমানের স্ত্রীর নাম আয়েশা বেগম। শম্পা, রুম্পা ও নিপা তাদের তিন মেয়ে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা’ নামে একটি বইয়ে লতিফুর রহমান তার ৮৭ দিন সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে লিখেছেন ‘কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ।
শোক প্রকাশ
সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গণমাধ্যমে পাঠানো শোক বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মরহুম লতিফুর রহমান তার বিচারিক জীবনে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের সুনাম ও মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। দেশের একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে তার খ্যাতি দেশবাসী যেমন চিরকাল মনে রাখবে, তেমনি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবার, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপর এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিচারপতি লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিচারিক জীবনে মরহুমের ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতা ও আদর্শ পরবর্তী প্রজন্ম শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করবে। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করি তিনি যেন লতিফুর রহমানকে বেহেশ্ত নসীব করেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিচারপতি লতিফুর রহমান মারা যান। গত ২৩ মে থেকে বিচারপতি লতিফুর রহমান ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।