মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভক্স মিডিয়া : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভবিষ্যত গতিপথ বদলেছেন এবং সে পথ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্রকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। এর কারণ, নতুন মার্কিন পদক্ষেপে পিপল’স প্রটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি)কে অস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওয়াইপিজি হচ্ছে সিরীয় মিলিশিয়া গ্রæপ যারা আইএসকে তাদের কার্যত রাজধানী রাক্কা থেকে বিতাড়িত করতে ওয়াশিংটনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছ্ েমার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে শিগগিরই রাক্কার পতন ঘটতে চলেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো শক্তি ও আইএস বিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন মিত্র তুরস্ক খবরটি হাল্কাভাবে নেয়নি। তুরস্ক, এক গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো মিত্র , সামরিক শক্তি দিয়ে ওয়াইপিজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে। ১ জুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশাপাশি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান যুক্তরাষ্ট্র সফর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবর মতে, গত সপ্তাহে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সাথে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তুরস্ক ওয়াইপিজির বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। একজন ঊর্ধ¦তন তুর্কি কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তুরস্কের বার্তা এই যে তুরস্ক সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।
পেন্টাগনের শীর্ষ মুখপাত্র ডানা হোয়াইট মঙ্গলবার ঘোষণা করেন যে ট্রাম্প প্রতিরক্ষা দফতরকে রাক্কায় আইএসের উপর সুস্পষ্ট বিজয় লাভ নিশ্চিত করতে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস-এর কুর্দি যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সজ্জিত করার অনুমোদন দিয়েছেন।
ইরাক, সিরিয়া, আপগানিস্তান ও ইয়েমেনে মার্কিন যুদ্ধ দেখভালকারী মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের শীর্ষ ব্যক্তি জেনারেল জোসেফ ভোটেল ফেব্রæয়ারিতে এ ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। সে সময় ভোটেল বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের সহায়তার ব্যাপারে তুরস্কের সাথে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে।
ওয়াইপিজি কী ধরনের অস্ত্রশস্ত্র পাবে সে ব্যাপারে সরকারীভাবে কিছু জানা যায়নি। গার্ডিয়ান জানায়, সম্ভাব্য প্রদেয় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১২০ মিমি মর্টার, মেশিনগান, গোলাবারুদ ও হালাকা সাঁজোয়া যান। অন্তত এখনকার জন্য আর্টিলারি ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বাতিল করা হয়েছে।
ওয়াইপিজিকে এসব অস্ত্র দেয়া রক্কা দখলে তাদের সহযোগিতার জন্য এবং যুদ্ধ শেষ হলে এ প্রদানের পরিমাণ সীমিত করা হবে। এদিকে ট্রাম্প আর্টিলারি সমর্থন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য উত্তর সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন ওয়াইপিজিকে ইতোমধ্যে নাইট ভিশন গগলস ও রাইফেল দিয়েছে , এবরাই প্রথমবারের মত তারা অস্ত্র দেয়ার কথা স্বীকার করল।
সিরিয়ায় অন্তবর্তী শাসন বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার বিশেষ উপদেষ্টা এবং এখন আটলান্টিক কাউন্সিলে কর্মরত ফ্রেড হফ এক সাক্ষাতকারে বলেন, তিনি মনে করেন যে পেন্টাগন যে ইতোমধ্যে ওয়াইপিজিকে অস্ত্র দিচ্ছে সে কথা অস্বীকার করতে অনীহ হয়ে উঠেছে। নয়া ঘোষণা কমপক্ষে বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এখানে একটি কারণ রয়েছে যে পেন্টাগন বহু মাস ধরে ওয়াইপিজির সাথে তার সম্পর্ক অস্বীকা করে আসছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ভয় যে মিলিশিয়া সংগঠনটি একটি স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবিতে পিকেকেকে সাহায্য করছে। এ স্বাধীন কুর্দিস্তানের মধ্যে তুরস্কের ভূখন্ড রয়েছে।
সবাই যা জানে সে ব্যাপারে মার্কিন নীরবতা প্রকৃতপক্ষে তুরস্ককে শান্ত করবে না এবং ট্রাম্পের প্রকাশ্য সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে তুরস্কের সাথে ঘোলাটে হয়ে আসা সম্পর্ককে আরো ঘোলাটে করবে।
মার্কিন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দেয়া প্রত্যেকটি অস্ত্র তুরস্কের প্রতি হুমকি।
কথা হচ্ছে, ওয়াশিংটন কুর্দিদের ভালোবাসে, তুরস্ক ভালোবাসে না। এ কারণেই এরদোগান ও কাভুসোগলু এত ক্রুদ্ধ। আংকারা ওয়াইপিজিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পাটি বা পিকেকে-র অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। তুর্কি কুর্দি গ্রæপ পিকেকে ১৯৮০ সাল থেকে তুরস্কের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য লড়াই করে আসছে। তুস্কে ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই পিকেকে-কে সন্ত্রাসী গ্রæপ বলে গণ্য করে।
এখানে যে বিষয়টি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ট্রাম্পের ঘোষণা কার্যকর ভাবে স্বীকার করল যে আমেরিকা ওয়াইপিজিকে অস্ত্র দিচ্ছে। এ বিষয়টি ১৬ মে এরদোগানের ওয়াশিংটন সফরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চলেছে। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হাসিল হওয়ার পর ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করা সীমিত করা হবে বলে মার্কিন মুখপাত্র সিএনএনকে ৩১ মে জানান। ওয়াইপিজি এতে খুশি হবে না।
একজন ওয়াইপিজি মুখপাত্র সিএনএনকে বলেন, এটা এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত যা এ গ্রæপটিকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় অনুমোদন দেবে।
এদিকে ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করার সিদ্ধান্ত আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইকে সরকারীভাবে আরো জটিল করে তুলবে এবং তা আমেরিকার ভূমিকাকেও সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তুরস্কে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস জেফরি ইউএসএ টুডেকে বলেন, এটা একটা ভুল। তার প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল যে তুরস্ক আমেরিকাকে তার ইনসারলিক বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে দিতে অস্বীকার করতে পারে। জেফরি বলেন, তুরস্কে আমাদের ঘাঁটি ব্যতীত আইএসের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালানো কঠিন।
হফের মতে, ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করলেও রাক্কা দখলের জন্য একটি প্রচন্ড যুদ্ধ হবে। একটি পৌর এলাকা কমপ্লেক্সে স্থল যুদ্ধে মিলিশিয়া যোদ্ধাদের ব্যবহার বেসামরিক লোকদেরকে ক্রসফায়ারে ফেলতে পারে। আইএস গত বছর তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখন্ডের এক চতুর্থাংশ হারায়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এ ধারা অব্যাহত রাখতে চান। তিনি বলেন, আমেরিকা আইএসের বিরুদ্ধে আরো জোরদারের পরিকল্পনা করেছে। ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করার সিদ্ধান্ত আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার করার অংশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ এটা কি আসলে কাজ করবে নাকি উল্টো ঘটনাবলীকে পিছনে ঠেলে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।