পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিজেপির ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি রাম মাধব গত ৪ মার্চ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, গণতন্ত্র সুরক্ষা ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনের আলোচনায় অতীতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ভারতের সমর্থনের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আগামী দিনেও গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে সমর্থন অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয় দিনের এক আলোচনায় বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবর বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। পানিবণ্টন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়কেই সেরা হিসেবে দেখা হয়। তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যে বস্তুত নতুন কিছু নেই। বাংলাদেশ ও তার জনগণের জন্য কোনো ইতিবাচক বার্তা নেই। এর আগেও এ ধরনের কথাবার্তা বিজেপির নেতাদের মুখ থেকে আমরা শুনেছি। যেমন তারও আগে শুনেছি ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের নেতাদের মুখ থেকে। রাম মাধব গণতন্ত্র সুরক্ষা ও সংবিধান সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থনের যে কথা বলেছেন, তা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। আমরা জানি, একমাত্র ভারতের সমর্থনের কারণেই তৎকালীন সরকারের পক্ষে ভোটবিহীন, ভোটারবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা সম্ভব হয়। ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। সে দেশে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। অথচ সেই অস্বাভাবিক-অপকল্পনীয় নির্বাচনটি হয় ভারতের একক সমর্থনেই। নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর করে তোলার জন্য ভারত সেদিন কি করেছিল, তার উল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়োজন, সকলের তা জানা।
ওই প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান কতটা সমুন্নত হয়েছে সেটা বিশ্লেষকরাই বলতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে সকলেই একমত, ভারত ওই নির্বাচনে সমর্থন না দিলে হয়তো নির্বাচনটি হতে পারত না। বর্তমান সরকার সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন হয়েছে। অতএব, এ কথা ধরেই নেয়া যায়, তার সমর্থনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন অব্যাহত আছে এবং থাকবে। রাম মাধব বস্তুত এই বার্তাটিই দিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা শুনে আসছি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের মতো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকেও হরহামেশাই একথা বলা হয়ে থাকে। এম জে আকবর যে ‘সেরা’ সম্পর্কের কথা বলেছেন, সেটা পুনরাবৃত্তি মাত্র। তিনি পানিবণ্টন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার সমস্যার কথা উল্লেখ করে ‘ছোটখাটো’ সমস্যার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। ভারতীয় নেতাদের এটা একটা সাধারণ প্রবণতা যে, তারা পানি সমস্যা ও সীমান্ত সমস্যার মতো সমস্যাগুলোকে কখনোই ‘বড় সমস্যা’ বলে মনে করেন না। অথচ পানি সমস্যা বাংলাদেশের জীবন-মরণের সমস্যা। সীমান্ত নিরাপত্তা বিশেষ করে সীমান্ত নাগরিকদের নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। এছাড়া চোরাচালান, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, বাণিজ্য-অসমতাও বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। ভারত বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের প্রতি রাজনীতিক সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো শুধু ঝুলিয়েই রাখেনি, একই সঙ্গে বাংলাদেশের কাছে তার যত কিছু চাওয়ার ছিল তার সবকিছুই ইতোমধ্যে আদায় করে নিয়েছে। সম্পর্কের এই সেরা সময়ে বাংলাদেশের পানিসমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হয়নি, সর্বপ্রকার চোরাচালান অব্যাহত আছে এবং বাংলাদেশের প্রতিকূলে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে ভারত তার দীর্ঘদিনের চাওয়া ট্রানজিট বা করিডোর পেয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে নিঃশর্ত সহযোগিতা পেয়েছে এবং নৌ ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এই সঙ্গে তার পছন্দমতো স্থানে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের আশ্বাসও পেয়েছে।
ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সবকিছুই পেয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। একেই যদি দু’দেশের সম্পর্কের সেরা সময় বলা হয়, তাহলে স্বীকার করতে এর চেয়ে খারাপ সময় বাংলাদেশ আর কখনো দেখেনি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল কথা হলো : দেয়া ও নেয়া। দেয়া -নেয়ার ক্ষেত্রে সুষমতা থাকলেই কেবল বলা যায়, সম্পর্ক উত্তম, চমৎকার কিংবা সেরা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এখন যে সম্পর্ক, তা একতরফা, একপেশে। একতরফা ও একপেশে সম্পর্ক কখনই স্থায়ী ও টেকসই হয় না। আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কখনো ব্যক্তি বা দলভিত্তিক হয় না। হয় দেশ ও জনগণভিত্তিক। এই যে বৈষম্য ও বঞ্চনার বৃত্তে বাংলাদেশে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, কিভাবে তার অবসান হবে, কেউ বলতে পারে না। ভারত তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘একসঙ্গে প্রতিবেশীদের বড় হওয়ার’ তত্ত্ব প্রচার করছে। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন নেই। ভারতীয় নেতারা প্রায়ই বলেন, ভারত বিগ ব্রাদার নয়, বিগ পার্টনার। রাম মাধবও সেদিন বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নের পার্টনার, বিগ ব্রাদার নয়। প্রশ্ন হলো, এর প্রমাণ কি এই যে, ভারত সবকিছু নিয়ে যাবে, কিছুই দেবে না? এ ধরনের একপেশে-একতরফা সম্পর্ক আমাদের কাম্য নয়। আমরা এরকম বিষম সম্পর্ক চাইনে। ভারতকে এবং তার জাতীয় নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়টি বুঝতে হবে। সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কই আমরা প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি অবলম্বন ও অনুসরণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।