Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত গুলশানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। তার শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, তরুণীটি উপজাতীয় ও গারো সম্প্রদায়ের। তার আনুমানিক বয়স ২৮ বছর। গত শনিবার সকালে গুলশান-১-এর ১২ নম্বর বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে পড়ে থাকা তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে লাশটি ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠান হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীকে অন্য কোথাও খুন করে ঘটনাস্থলে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। আশপাশে পুলিশের বেষ্টনী। ওই নারীর লাশ ১১ নম্বর ভবনের দেয়ালের দিকে মাথা ও রাস্তার দিকে হাত-পা ছড়িয়ে রয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে ১১ নম্বর বাড়ির দারোয়ান জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে তিনি এক নারীর লাশ রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। ওই সময় তিন যুবককে তিনি দেখতে পেয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন ১২ নম্বর রোড ধরে এবং ১৩ নম্বর রোড ধরে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। পরে বিষয়টি তিনি সবাইকে অবহিত করেন। পুলিশের গুলশান বিভাগের এডিসি আবদুল আহাদ জানিয়েছেন, সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার লাশের ময়না তদন্ত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একেএম শফিউজ্জামান। তিনি বলেছেন, মেয়েটির ধর্ষণের শিকার হওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। ছুরিকাঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয়রা বলেছে, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে দুর্বৃত্তরা কিভাবে ওই নারীকে হত্যা করল এবং লাশ ফেলে যেতে পারল?
প্রকাশিত রিপোর্টাদি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, হত্যাক-ের সূত্র-উৎস নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা এখনো কোন ঐকমত্যে উপনীত হতে পারেননি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের মধ্যে যথেষ্ট গড়মিল রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা হত্যার স্থান ও লাশের অবস্থান নিয়ে যে ধারণা পোষণ করছেন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। হত্যার স্থান যেখানেই হোক না কেন লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেখান থেকে কাউকে হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয়নি। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালীয় নাগরিক তাবেলা হত্যাকা-ের পর থেকে গোটা গুলশানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোষ্ট। রাতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি টহল দিয়ে থাকে। তারপরেও এমন হত্যাকা- ঘটল কিভাবে? যদি হত্যাকা- অন্য কোথাও হয়ে থাকে তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় হত্যাকারীরা কিভাবে এত পাহারা সত্ত্বেও লাশ নির্বিঘেœ রেখে পালিয়ে যেতে পারল। অন্যদিকে নিহতকে গারো বলা হলেও গারো ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগরী শাখার সভাপতি একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, তারা তরুণীর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে। ফেসবুক ও টুইটারে ছবি থাকা সত্ত্বেও প্রকাশিত খবর অনুযায়ী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও নিহতের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। সুতরাং বোঝা যায়, তুলনামূলক অপরিচিত এই তরুণী হত্যার পিছনে হয়ত অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। কারণ যাই হোক, এ ধরনের হত্যাকা- নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। গত কিছুদিনের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা যাই বলুন না কেন দেশে নিরাপত্তাহীনতা যে দিনদিনই বাড়ছে, সে ব্যাপারে বোধকরি সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই। এই বাস্তবতা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত।
কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে আলোচ্য হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তরুণীটি যেহেতু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তাই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমনিতেই সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি ইস্যু হয়ে আছে। এর সাথে যদি গারো সম্প্রদায়ের তরুণীর হত্যাকা-ের ইস্যু যুক্ত হয় তবে ওই ইস্যুটি জোরদার হবে। বিষয়টি তাই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, তারা তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিআইডির একটি দল ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাও হত্যকা-ের আলামত সংগ্রহ ও স্থানীয়দের সঙ্গে হত্যাকা-ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। জোনের দায়িত্বশীল বলেছেন, নিহতের পরিচয় জানতে পারলে মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হবে। যাই হোক, এটাই বাস্তব যে, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে এধরনের এরকটি নৃশংস ঘটনা ঘটতে পেরেছে। একে হালকা করে দেখার বা বিবেচনার কোন সুযোগ নেই। আমরা আশা করি যথাযথ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে
আরও পড়ুন