Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমের স্থলবন্দরে দুর্নীতির বাসা ভাঙছে না

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


শুল্ক ফাঁকি ও ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানী চলছেই
কাস্টমস কর্মকর্তাদের দাবি এখন কোন দুর্নীতি হয় না
মিজানুর রহমান তোতা : বাংলাদেশ-ভারতের আমদানী ও রফতানির ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বেনাপোল, ভোমরা ও দর্শনা এই ৩টি স্থলবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এর মধ্যে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানী ও রফতানি হয় বরাবরই বেশী। এখানকার বন্দর এবং কাস্টমস বিভাগের অনিয়ম ও অব্যবস্থা দূর হচ্ছে না। বাসা ভাঙছে না দুর্নীতির। একশ্রেণীর কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উৎকোচের বিনিময়ে ঘোষণা বহির্ভূত ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। উৎকোচের মোটা টাকা প্রতিমাসে ভাগবাটোয়ারা হয়। যার একটা অংশ নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে মুখ বন্ধ রাখতে বিভিন্ন সেক্টরে পৌছে দেয়া হয়। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। যেটি ‘ম্যানেজ হাউজ’ নামে পরিচিত। সাতক্ষীরার ভোমরা ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনাতেও একই নিয়মে বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্যে ঘোষণা বহির্ভূত ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারবার চলে। স্থলবন্দর ও কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বেনাপোল কাস্টম হাউজের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেয়া ও ঘোষণা বহির্ভূত ভারতীয় পণ্যভর্তি ১৬টি ট্রাক গত বছর বেনাপোল সড়ক থেকে যশোর বিজিবি আটক করে। চলতি বছরের গত ৫মাসেও ঘোষণা বহির্ভূত, মিথ্যা ঘোষণার ও শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার পণ্যভর্তি কয়েকটি ট্রাক বিজিবি ও পুলিশের হাতে আটক হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরও দুর্নীতি থামছে না। কৌশলে কাষ্টমস ইন্সপেক্টর, সুপার লেবেলে একটা যোগসাজসের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়। অভিযোগ বড় কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে বিষয়টি ওভারলুক করেন। সিএ্যান্ড এজেন্ট এর লোকজনও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে কনসাইনমেন্ট প্রতি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে থাকেন। উৎকোচ দিলেই মুহূর্তে পেপার ওকে স্বাক্ষর করে দেয়া হয়। না হলে ঘুরানো হয় নানাভাবে। যার কারণে উৎকোচ দেওয়া নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। বেনাপোল স্থলবন্দরটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। দেশের ২২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ এটি। কম গুরুত্বপুর্ণ নয় ভোমরা ও দর্শনা স্থলবন্দর। কলিকাতা নিকটবর্তী হওয়ায় আমদানীকারকরা বেনাপোল বন্দরকেই বেশী বেছে নেন ভারত থেকে পণ্য আমদানীতে। কাস্টমস হাউজের দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থা দুর করার উদ্যোগ জোরালো নয়। পাশাপাশি বন্দরের উন্নয়নেও রয়েছে ধীরগতি। এই বন্দরটিতে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য রাখার জন্য ৪০টি শেড রয়েছে। ওপেন ইয়ার্ড ৫টি, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড মাত্র ১টি। এসব গুদামে পণ্য ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অথচ সবসমযে বেনাপোলে পণ্য মজুদ থাকে প্রায় ১লাখ মেট্রিক টন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ মালামাল থাকায় ঝুকিপুর্ণ হয়ে উঠেছে বন্দরের শেড।
এর বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট। সেখানে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে উন্নতমানের সড়ক ব্যবস্থা। পুরো বন্দর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি ওয়্যার হাউজ। চোরাচালান প্রতিরোধে স্কানিং ব্যবস্থাসহ অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস হাউজ থেকে বছরে সরকার ১০হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে। অথচ তার কিয়দংশ বেনাপোল ও যশোরের উন্নয়নে ব্যয় হয় না। বেনাপোলে জায়গা সংকটের কারণে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে আমদানীকৃত গাড়ি, মেশিনারিজসহ শত শত কোটি টাকার পণ্য। অনেক সময় নষ্ট হয় পণ্যের গুণগত মান। বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নতুন শেড নির্মাণের জন্য ১শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানেও রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।
সাতক্ষীরার ভোমরা ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দরেও বেনাপোলের মতো একই ধাচে দুর্নীতি অনিয়ম চলছে। তবে তুলনামুলক কম। কারণ ওই দু’টি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার হারও কম। সেখানেও একশ্রেণীর কাস্টমস ইন্সপেক্টর ও সুপার বিভিন্ন সেক্টরে অর্থের ভাগ দিয়ে অবাধে দুর্নীতি করে চলেছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে বেনাপোল ও ভোমরার দুজন কাস্টমস কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তারা এখন আর দুুর্নীতি করেন না। আগে কি হত জানি না। শুনেছি ঢালাওভাবে ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্য ঢুকতো, কোন শুল্ক দেওয়ার বালাই ছিল না। যার জন্য দেখেন না সব অনেকে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এখনকার সেই সুযোগ নেই। বেশ কড়াকড়ি। তবুও ম্যানেজ হাউজের নাম মুছে না কেন, জবাবে তারা বলেন, বোঝেন তো একটু আধটু না হলে চলবে কি করে’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ