Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে গ্রিক দেবী মূর্তি অপসারণ

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবশেষে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে স্থাপিত বহুল আলোচিত-সমালোচিত গ্রিক দেবীর মূর্তিটি গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলেন এবং মূর্তি বিষয়ে মতামত নিয়েছিলেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য মূর্তিটি এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার মতামত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশে মূর্তিটি সরানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ৬ মাস আগে এ মূর্তিটি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপন করার পর থেকেই দেশের আলেম-ওলামা এবং পীর-মাশায়েখরা এর বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করে আসছিলেন। রোজার আগে এ মূর্তি সরানোর দাবী তারা করেছিলেন। এমনকি এ মূর্তি থাকলে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় না করার আহŸানও জানিয়েছিলেন। গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক সাক্ষাতে প্রধামনমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর মূর্তি সরানোর পক্ষে। তিনি বলেন, আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়। গ্রিক থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে।
সুপ্রিমকোর্ট চত্বর দেশের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি স্থান। এখানে যে কোনো কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপনের আগে এখানে অন্য কোনো ধরনের ভাস্কর্য ছিল না। এ না থাকাতে কোনো সমস্যাও সৃষ্টি হয়নি। থেমিসের মূর্তি বসানোর পর থেকেই বিতর্কের সূচনা হয়। বিশেষ করে, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখরা এটিকে ভালভাবে নেননি। সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় ঈদগা’র মতো সংবেদনশীল এলাকায় এর স্থাপনকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে তারা উল্লেখ করেন। ইসলামী দলগুলো এ নিয়ে প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে মূর্তি সরিয়ে ফেলার দাবী জানায়। সঙ্গত কারণে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর গোচরিভূত হয়। তিনিও আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের মতামতের সাথে একমত পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধকে আমলে নিয়ে এ মূর্তি এখানে থাকা উচিত নয় বলে মত দেন। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের কিছু অতি প্রগতিবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধকে আমলে না দিয়ে নিজেদের মতামতকেই গুরুত্ব দিতে থাকে। তারা এ মূর্তি সরানোর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতিও দিতে শুরু করে। তারা এটা ভাবে না, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত কি? তাদের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যেন, মূর্তিটি এখান থেকে সরিয়ে ফেললে দেশ মৌলবাদী হয়ে যাবে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী ভারতের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, দেশটির সরকার তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের সেন্টিমেন্টকে উপেক্ষা করে কোনো কিছু করা যেমন যুক্তিসঙ্গত নয়, তেমনি সুবিবেচনাপ্রসূতও হতে পারে না। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধনে আবদ্ধ। এখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থা কখনো ঠাঁই পায়নি, এখনও পাচ্ছে না। সব ধর্মের মানুষ স্ব স্ব ধর্ম, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নির্বিঘেœ পালন করছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনেক স্থাপত্যকর্ম ও ভাস্কর্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সেসব ভাস্কর্য নিয়ে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখরা আপত্তি করেননি। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মূর্তি স্থাপন নিয়ে আপত্তি করার যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে বলেই আপত্তি করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রিক দেবীর মূর্তি আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথেও বেমানান।
সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে বিতর্কিত মূর্তি সরিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও সরকারের সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত এবং প্রজ্ঞার পরিচায়ক। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামত এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সবচেয়ে বড় কথা, যে মূর্তি ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, চিন্তা ও ঐতিহ্যের বিপরীত, তা না রাখাই শ্রেয়। তাছাড়া, ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ভবনে ন্যায়বিচারের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা শোভা পাচ্ছে। এ নিয়ে কখনো কোনো বিতর্ক উঠেনি। সেই দাঁড়ি পাল্লাকে গ্রিক মূর্তিসমেত নতুন করে তুলে ধরে বিতর্ক সৃষ্টি করা মোটেও সঠিক হয়নি। বরং এ কর্ম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের চেতনাবোধে আঘাত দেয়ার শামিল। গুটিকয় অতি প্রগতিবাদী ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদী মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর চাপিয়ে দেয়া অবিবেচনাপ্রসূত ছিল। সরকার, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন যথাসময়ে বিষয়টি উপলব্ধি ও মূর্তি অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।



 

Show all comments
  • Mohammad Mortuza Hossen ২৭ মে, ২০১৭, ৯:৩৫ এএম says : 0
    এটাকে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি বলছেন কেন? নির্মাতা বলেছেন এটি গ্রিক মূর্তি নয়, বাঙ্গালি নারীর ভাস্কর্য। তাহলে আপনদের গ্রিক মূর্তি বলার পেছনে যুক্তি কি ? দয়া করে জানাবেন কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Mostak Ahmed ২৭ মে, ২০১৭, ১:২৫ পিএম says : 0
    সরকারকে অভিননদন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রিক দেবী মূর্তি
আরও পড়ুন