পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : আজ ৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালির স্বাধীকার রক্ষার আন্দোলনে তাদের ডাকে সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সকলেই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হতে থাকে। পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বাংলার মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদ জানাতে শহরে-গ্রামে বের করে বিক্ষোভ মিছিল। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সংগ্রামী বাংলা ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মিছিল-সমাবেশের দেশে পরিণত হয়েছিল বাংলা। দিকে দিকে ছিল স্বাধিকারকামী জনতার দৃপ্ত পদচারণা। ৬ মার্চে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর খবরেও বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভ আরও বাড়ে। বাংলাকে স্বাধীন করার সংকল্প তাদের মধ্যে দৃঢ় হয়ে ওঠে। ৬ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের জাতীয় অনুষ্ঠানে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এ কয়দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলার জনগণকে দায়ী করেন তার ভাষণে। মূলত ৫ মার্চ ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর ৫ ঘণ্টা গোপনে বৈঠকে যে খসড়া তৈরি হয়েছিল বক্তৃতায় সেটিই প্রতিফলিত হয়। ইয়াহিয়ার ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় জরুরি সভা। সভায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে ৩৪১ জন কারাবন্দী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। এদের সবাই যোগ দেন অসহযোগ আন্দোলনে। খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১৮ জন, আহত হন ৬৪ জন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বাংলার শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, ন্যাপ ওয়ালী, ন্যাপ মোজাফ্ফর, পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট, মহিলা সমিতি, পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকি বিষয় আগামীকাল শেখ মুজিবের বক্তৃতায় জানতে পারবেন।’ কার্যত, ৬ মার্চ থেকে মানুষ অধীর আগ্রহে প্রহর গুণতে থাকে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পরবর্তী দিকনির্দেশনা জানার। সময় যতই গড়াচ্ছিল, অসহযোগ আন্দোলনের গন্তব্যও তত স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপরও চাপ বাড়ছিল। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি কী ভাষণ দেবেন তা শোনার জন্য সারাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। ৭ মার্চের জনসভায় শেখ মুজিব কী ঘোষণা দেবেন তা ঠিক করতে তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য এক সভা থেকে অলি আহাদ বঙ্গবন্ধুর প্রতি আহ্বান জানান। জনগণের আকাক্সক্ষা অনুসারে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করা হবে কিনা সেটাই ছিল প্রশ্ন। এই দিনের ভাষণ নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠায় ছিল পাকিস্তান সরকারও।
এদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো-ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি ৬ দফার বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৭ মার্চ ভাষণ সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা নিয়ে এদিন ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর বাসায় ছিল বিশিষ্টজনদের ভিড়। পরিস্থিতির আলোকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানান। একই বিবৃতিতে তারা পাকিস্তান সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, কোন অবস্থাতে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। ছাত্র নেতাদের এই হুঁশিয়ার পাকিস্তান সরকারের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।