Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসুস্থ রোজাদারের ওষুধ গ্রহণ

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোজা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ (রমাদান) মাসটির দেখা পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে, আর যে অসুস্থ বা সফরে আছে সে সেই সংখ্যক অন্য দিনগুলোতে’ (২ঃ ১৮৫)। কি পর্যায়ের অসুস্থতার জন্য রোজা না রাখা যায়, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেম এবং চিকিৎসকের মতামত নিতে হবে। তবে কম গুরুতর কিছু সমস্যা নিয়ে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব অসুখের জন্য নিয়মিত নেওয়া হয়, এমন কিছু ওষুধ, এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে সংশয়। এই প্রশ্নগুলো সারা পৃথিবীর মুসলিমের। কিন্তু সমাধান পেতে গলদঘর্ম হওয়া থেকে কুসংস্কারের ভিত্তিতে যথেচ্ছ মতামত পালন করা হয়।
এইসব সমস্যা সামনে রেখে ১৯৯৭ সালের জুনে মরক্কোতে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যার শিরোনাম ছিল অহ ওংষধসরপ ঠরবি ড়ভ ঈবৎঃধরহ ঈড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু গবফরপধষ ওংংঁবং, আর অংশগ্রহণ করেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলিম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং প্রতিষ্ঠিত আলেম। তারা কিছু ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপারে একমত হন, যাতে রোজা নষ্ট হয় না। পরবর্তীতে জেদ্দাহ’র ইসলামিক ফিকহ একাডেমি, মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, আলেকজান্দ্রিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় আরও কয়েকটি সেমিনারের আয়োজন করে।
এসব আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিচে উল্লেখ করছি।
১। যেসব ওষুধ/ ব্যবস্থার জন্য রোজা ভাঙবে নাঃ
- চোখ, কান বা নাকের ড্রপ।
- হৃদরোগীর বুকে ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে কিংবা জিহŸার নিচে ট্যাবলেট।
- দাঁত তোলা, ড্রিলিং করা, মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা, স্প্রে করা। তবে এগুলো করার সময় পাকস্থলীতে থুথু বা পেস্ট প্রবেশ করা যাবে না।
-    ইনজেকশনঃ চামড়া, মাংস, অস্থিসন্ধি, শিরায় ইনজেকশন দেওয়া যাবে, কিন্তু সেটি স্যালাইন, ডেক্সট্রোজ, প্রোটিন জাতীয় হওয়া যাবে না।
- রক্তদানঃ অন্যকে রক্ত দেওয়া, জরুরী প্রয়োজনে রক্ত নিলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
- গ্যাসঃ অক্সিজেন, অজ্ঞানের গ্যাস, শ্বাসকষ্টের গ্যাস নেওয়া যাবে।
- মলমঃ ত্বকের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যায় এমন মলম, অয়েন্টমেন্ট, ক্রিম দেওয়া যাবে।
২। যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষায় রোজা ভাঙবে নাঃ
- মহিলাদের পরীক্ষার জন্য যোনিদ্বার নিয়ে আঙুল বা কোন যন্ত্র প্রবেশ করালে, পেসারি বা কোন ওষুধ ব্যবহারে রোজা ভাঙে না।
- জরায়ু পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো, হিস্টারোস্কপি করা যাবে।
- মূত্রথলি পরীক্ষা বা এক্স-রে করার জন্য রোগীর পেশাবের ছিদ্র দিয়ে ক্যাথেটার, যন্ত্র, ডাই প্রবেশ করানো যাবে।
- পরীক্ষার জন্য রক্ত নেওয়া যাবে।
- হৃৎপিন্ডের এনজিওগ্রাম এবং কার্ডিয়াক ক্যাথেটার নেওয়াতে বাধা নেই।
- এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা (কিংবা চিকিৎসা) করা যাবে।
- বায়োপসি পরীক্ষা (লিভার, কিডনি প্রভৃতি) করলে রোজা নষ্ট হবে না।
তবে কয়েকটি বিষয়ে (কিঞ্চিৎ) মতবিভেদ আছে, যদিও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ রোজা নষ্ট না হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
- নাকে স্প্রে, হাঁপানির ইনহেলার নেওয়া।
- পায়ুপথে ইনজেকশন, পরীক্ষার জন্য আঙুল বা কোন যন্ত্র প্রবেশ করানো।
- কিডনি অকেজো হলে ডায়ালাইসিস।
- রোজা রেখে জরুরী অস্ত্রোপচার করা যাবে।
রোজা বা যেকোনো ধর্মীয় আচারে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নিজের মনমত, অজ্ঞ লোকের কুসংস্কার কিংবা  পরামর্শমত সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করা বিপদজনক।
ডাঃ আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার (শিশু বিভাগ), আইসিএমএইচ
মাতুয়াইল, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অসুস্থ

২১ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন