Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কথিত জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদীতে র‌্যাব-১১’র সাড়ে ১৮ ঘণ্টার অভিযান সমাপ্ত

কোন অস্ত্র গোলাবারুদ জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : অবশেষে কথিত জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে র‌্যাব-১১’র সাড়ে ১৮ ঘন্টার জঙ্গী বিরোধী নরসিংদীর অভিযান। গত শনিবার বিকেল ৪ টায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে র‌্যাব-১১’র জোয়ানরা নরসিংদীর গাবতলী উত্তরপাড়ার বিদেশ প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদের বাড়ী ঘেরাও করে। সাড়ে ১৮ ঘন্টার এই অভিযানে কোন অস্ত্র বা গোলাবারুদ উদ্ধার করতে পারেনি র‌্যাব। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ীটির ভিতরে থাকা সন্দেহভাজন ৫জন ছাত্র শিক্ষক আত্মীয়-স্বজন ও মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী আবু জাফর, মাসুুদুর রহমান, মশিউর রহমান, বাছিরুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দিনের জঙ্গি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা যায়নি। আত্মসমর্পণের পর র‌্যাব তাদেরকে আটক করে নারায়গঞ্জ র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এর আগে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং’র পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ করে সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গী আস্তানা থেকে ধৃত জঙ্গীদের দেয়া তথ্য সূত্র ধরে সালাহ উদ্দিনের জঙ্গী সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় এবং এসবের ভিত্তিতেই বাড়ীটিতে নজরদারী চালানো হয় এবং সব শেষে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই বাড়ীটি ঘেরাও করা হয়। অভিযানের প্রাপ্তি বা অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বাড়ীটির একটি কক্ষে তল্লাশী চালিয়েছি। এই কক্ষে আমরা কিছুই পাইনি। আরো ২টি কক্ষ বাকি রয়েছে। এই কক্ষ দুটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে অনুসন্ধান চালানো হবে। এখানে বোমা ডিসপোজাল টিম রাখা হয়েছে। তারা ওই কক্ষগুলোতে অনুসন্ধান চালাবে।  আমরা এই বাড়ীটির মালিক দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদ, তার ভাই কেয়ারটেকার জাকারিয়া এবং এই বাড়ী থেকে আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিদের সাথে জঙ্গী সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান করা হবে। পরে এসব জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান সম্পর্কিত তথ্যাদি সাংবাদিকদেরকে জানানো হবে।  
এদিকে আত্মসর্পণকারীদের সম্পর্কে জানা গেছে- আবু জাফর নরসিংদী সদর উপজেলার চরভাসানিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে এবং নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র। একই কলজের ছাত্র বাছিরুল ইসলাম, নারায়নগঞ্জের আড়াই হাজারের নুরুল ইসলাম মোল্লার পুত্র। মাসুদুর রহমানের বাড়ী গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। তার পিতার নাম আব্দুল মজিদ মিয়া। সে জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার ১০ শ্রেণীর ছাত্র। সে ওই বাড়ীর ভাড়াটিয়া  আবু জাফরের নিকট ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তো। সালাহ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিাদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। মশিউর রহমান নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র। গত শনিবার রাতে তারা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিল তারা পড়াশুনা করে। তারা জঙ্গী নয়। জঙ্গিদের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আইন শৃংখলা বাহিনী চাইলে তারা আত্মসমর্পন করবে। পরে তারা আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় রবিবার সকালে র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
মঈন উদ্দিন আহম্মেদের বাড়ীটি সম্পর্কে এলাকাবাসী জানিয়েছে, বাড়ীটি নির্মান করার পর দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদ একজন মহিলাকে বাড়ীটি ভাড়া দিয়েছিল। এই মহিলা একটি কুকুর পালন করতো। কুকুরটি ছিল শিকারী ধরনের। এই কুকুরের ভয়ে আশেপাশের কেউ এই বাড়ীতে যেতে সাহস পেতো না। এই সুযোগে মহিলা এ বাড়ীতে বেপরোয়াভাবে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতো। এই ঘটনা জানাজানি হবার পর এলাকার লোকজন ঘটনাটি দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদকে অবগত করে। পরে মাস তিনেক পূর্বে তিনি দেশে ফিরে ওই ভাড়াটে মহিলাকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। গত ৩ মে আবু জাফর এই বাড়ীটিতে নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে প্রবেশ করে। এই বাড়ীতে থেকে আবু জাফর নিজে লেখাপড়া করতো এবং পাশাপাশি টিউশনি করতো। এই সূত্রেই লোকজন এই বাড়ীতে যাওয়া আসা করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে অন্যান্যরা আবু জাফরের সাথে এই বাড়ীর ভাড়াটিয়া হিসেবে যোগ হয়। এদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এলাকার জনগন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। উল্লেখ্য যে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত শনিবার বিকেল ৪ টায় র‌্যাব ১১’র জোয়ানরা বাড়ীটি ঘেরাও করার পর এলাকায় ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়। আশেপাশের বসবাসকারী বাড়ী ঘরের লোকজন আতংকে জড়োসরো হয়ে পড়ে। এ খবর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবার পর ঘটনাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১০ টা নাগাদ র‌্যাব ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে পৌছেন। একই সময়ে স্থানীয় প্রশাসন বাড়ীটির আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারী করেন।
নরসিংদী পুলিশ, ডিবি, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম, সিআইডি ঢাকাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে যে, গভীর রাতে বাড়ীটিতে অভিযান চালানো হবে। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরুল হাসান ঘটনাস্থলে পৌছেন। পরে র‌্যাব’র আরো উর্ধতন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে যান। এরই মধ্যে বাড়ীটির ভিতরে থাকা সন্দেহভাজন  লোকজন  তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে। আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিক ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আত্মসর্ম্পণের ঘোষণা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব ১১ রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তাদের আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করে। পরে র‌্যাব জোয়ানদের কঠোর প্রহরায় একজন একজন করে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পন করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ