পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হঠাৎ পুলিশের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ ও তল্লাশির ঘটনায় বিভিন্ন মহলে বিস্ময় ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন। তল্লাশি অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কিনা তা দেখতে আদালতের পরোয়ানা নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে তল্লাশিতে কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় করা একটি জিডির সূত্র ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চালানোর জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তল্লাশি পরোয়ানার আদেশ চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত ওই দিনই অনুমতি দেন। পরদিন অভিযান চালায় পুলিশ। গুলশান থানায় করা জিডিতে ওই ভবন ও তার আশপাশের এলাকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃংখলা পরিপন্থি ও রাষ্ট্রের শৃংখলা বিনষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্টিকার, নাশকতামূলক কর্মকাÐের সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। কে জিডিটি করেছেন তার কোনো তথ্য পুলিশ জানায়নি। পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দু’দিন আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দুটি ভ্যান ঢোকে। এরপর গোয়েন্দা তথ্য আসে যে, সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি শ্বেতপত্র ছেপেছে। বিদেশী কূটনীতিকসহ সারাদেশে বিতরণের জন্য এগুলো ওই কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তাই ওসব জব্দ করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে অভিযান চালানো হয়।
আদালতের অনুমতি কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত, যার ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হোক না কেন, অভিযানের ফলাফল শূন্য। একথা কারো অজানা নেই, বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়টি একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী আসা-যাওয়া করেন। কার্যালয়টির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সর্বক্ষণিকভাবে কার্যালয়টির প্রতি নজর রাখেন। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় বেসরকারী নিরাপত্তারক্ষীরাও সেখানে সব সময় থাকেন। এরূপ নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে থাকা কার্যালয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু প্রবেশ করা সম্ভব কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তল্লাশির ফলাফল থেকে এটা প্রমাণিত যে, জিডিকারীর অভিযোগ ও কথিত গোয়েন্দা তথ্য সঠিক ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার কার্যালয়ে কোনো তল্লাশি অভিযান চালানোর আগে আরো ভাবা দরকার ছিল, আরো সর্তক হওয়া দরকার ছিল, দরকার ছিল প্রাপ্ত অভিযোগ সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়া। এ অভিযান আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের পক্ষে যায়নি। এতে বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবাদীতাই প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। বিএনপি নেতারা যে বলেছেন খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান চালানো হয়েছে, যে কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এটা কোনো ভালো নজির নয়। অভিযানকালে যে আচরন করা হয়েছে সেটাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। অফিস কর্মীদের আটকে রাখা, তালাভাঙ্গা, সিসি ক্যামেরা উল্টে দেয়া কিংবা ভেঙ্গে ফেলা, ফাইলপত্র তছনছ করা, কোনোটাই স্বাভাবিক বলা যায় না। যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের একটা হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তখন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বহুদিন ধরে সহনশীল, সুস্থির ও স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। সংঘাত ও প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিস্থিতিকে এতটাই অনভিপ্রেত ও বিপর্যয়কর অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে, হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পারা যায় না। রাজনৈতিক স্থিতিহীনতা ও অস্থিরতার আশঙ্কা নিয়ে কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তার অর্থনৈতিক তৎপরতা, উন্নয়ন কার্যক্রম, সামাজিক অগ্রগতি-কোনো কিছুই প্রত্যাশানুগ হতে পারে না। রাজনীতিহীনতা, গণতন্ত্রহীনতা, সুশাসনের অভাব, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপরাধ, নাগরিক-নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি দেশের জন্য সমূহ অকল্যাণের বার্তা বহন করে। এ পরিস্থিতির অবসান একান্তভাবেই কাম্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যদিও বহুদিন বাকী, তারপরও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে একটা ইতিবাচক তৎপরতা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে দল গোছানোর কাজসহ ভোট প্রার্থনা করছে। তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্ততি মূলক কাজ করে যাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাওয়া এবং রাজনৈতিক অঙ্গন সবগরম হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিষয়টি সরকারকে বিশেষভাবে আমলে নিতে হবে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, জনগণ ক্ষুব্ধ কিংবা হতাশ হতে পারে এমন কিছু যাতে আর কখনোই না হয় বা ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।